সত্যব্রত ভট্টাচার্য
দেশ জুড়ে লুটের ধনতন্ত্র চলছে। রাজ্যেও তারই চেহারা দেখা যাচ্ছে। মানুষকে বাদ দিয়ে ধর্মের আস্ফালন চলছে। বিকল্প ভাষ্য, বিকল্প নীতি ছড়িয়ে দিতে হবে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে।
মালদহে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ৩৮ তম সম্মেলনে সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এই লক্ষ্য। রাজ্য সম্মেলনের শুরু দিনে প্রতিবেদন পেশ করেছেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য। মঞ্চেই রয়েছে স্লোগান, ‘বিভেদ রুখে স্বদেশ গড়ো’।
এসএফআই নেতৃবৃন্দের বক্তব্য, শুধু একটা মন্দির উদ্বোধন দেখলেই হবে না। আসলে বিজেপি এবং আরএসএস ভয়ঙ্কর আক্রমণহানছে। দেশের সংস্কৃতি ও গণশিক্ষা ব্যবস্থাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রান্তিক গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের মুখের গ্রাস, স্বপ্ন কেড়ে ধনী কর্পোরেটদের মুখে তুলে দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতি সেই ব্যবস্থাই করছে। রাজ্যে তৃণমূল সরকারের শিক্ষানীতি একই পথে চলছে। তার বিরুদ্ধে জান কবুল লড়াইয়ের আহ্বান জানিয়েছে সম্মেলন।
সৃজন বলেছেন, ‘‘এরাজ্যেও তৃণমূলই ডেকে এনেছে বিজেপি–আরএসএস’কে। বিষয়টি কেবল চুরি বা লুটের নয়। দক্ষিণপন্থা আধুনিক গণতান্ত্রিক চেতনাতেই আক্রমণ হানছে সেই বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী যা করতে চাইছেন তাতে গরিব ছেলেমেয়েদের শিক্ষার পথ বন্ধ হচ্ছে। আদিবাসী, তপশিলী, দলিত, সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা পড়ার খরচ জোগাতে না পেরে পড়া বন্ধ করে দিচ্ছে। রাজ্যেও একই ছবি।’’
এই আক্রমণ রুখতেই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিকল্প চেতনা প্রসারের আহ্বান জানিয়েছে এসএফআই।
মালদহেই এসএফআই’র প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, একটা সুস্থ সুন্দর সমাজ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগোতে চায় ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু তাদেরকে আজকে ভুল পথে চালিত করার চেষ্টা চলছে। ক্ষমতার দম্ভ দেখানো চলছে। যারা মানুষের ইস্যুতে নেই তারা নানারকমভাবে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। একে রুখতে হবেই।’’
সিআইটিইউ নেতা এবং সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সোমনাথ ভট্টাচার্য রাজ্য সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্ররা মার্কস ও চে’র পথ অনুসরণ করে বিপ্লবের পথে হাঁটছেন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে। আর ওদিকে মন্দির নিয়ে বিজেপি –আরএসএস রীতিমতো হুঙ্কার দিয়ে ধর্মের আস্ফালন শুরু করেছে। সাধারণ মানুষের রুটি রুজির ব্যবস্থা করা সরকারের কর্তব্য, মন্দিরের নামে রাজনীতি নয়। আমাদের তীব্র লড়াইয়ের শপথ নিতে হবে।’’
এবিটিএ’র পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সবুর আলি। তিনি এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ কলেজ শিক্ষাকর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মুসারফ হোসেন এসএফআই –কে হাজার টাকা দিয়েছেন।
এদিন শুরুতে সম্মেলনের পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমান। মশাল জ্বালিয়ে সম্মেলনের সূচনা করেন এসএফআই সর্বভারতীয় সভাপতি ভিপি শানু এবং সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস। এরপর শহীদ বেদীতে মাল্যদান। হ্যারি বেলাফন্টে এবং তরুণ মজুমদারের নামে হয়েছে সম্মেলন নগর। মঞ্চ হয়েছে শহীদ আনিস খান এবং ধীরাজ রাজেন্দ্রনের নামে। সম্মেলন কক্ষের নামকরণ হয়েছে অনির্বাণ হাজরা ও পারসান মরিয়ার নামে।
সম্মেলন চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। বুধবার হবে প্রকাশ্য সমাবেশ।
Comments :0