STORY / AML KAR / DILRUBA / MUKTADHARA / 7 SEPTEMBER 2025 / 3rd YEAR

গল্প / অমল কর / অমল কর / মুক্তধারা / ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

STORY  AML KAR  DILRUBA  MUKTADHARA  7 SEPTEMBER 2025  3rd YEAR

গল্প / মুক্তধারা , বর্ষ ৩

দিলরুবা 
----------------------------
অমল কর
 

সারাজীবন ভোগ পেরিয়ে পড়ে থাকে অনেক ভোগান্তি।
কত বিদগ্ধ কাহিনি স্মৃতি হয়ে ছলকে ওঠে। রোদের নদীর মতো চলকে ওঠে সেসব কথনছবি। হাওয়া নড়ে ,
হাওয়ার ভেতর ভাসে বিষণ্ণ অতীত।
তখন আমার পুঁচকেবেলা শেষ করে স্কুলবেলা।পাখি
পোকামাকড় প্রজাপতি ফড়িং জীবজন্তু নিয়ে খুনসুটি।সাঁতার খেলাধুলো
সকলের বালকবেলার মতো।

যথারীতি ধর্মখেকোদের কারসাজিতে দুই বাংলা
ফাঁক হলে , হিন্দু হবার অপরাধে অপমান সইতে 
না -পেরে আমরা এপার বাংলায়। কলোনি -সংস্কৃতিতে রোদ- জ্যোৎস্না মশকরা দেয় আমাদের টিনের ঘরে। চোখে মুখে ঢোকে শীত। ঝড় এলে  নড়বড়ে ঘর নড়ে। ওপার বাংলায় আমাদের সমগ্ৰজুড়ে
ডগায় নাচত ভাত। বাবা চিকিৎসক হলেও একটামাত্র আয়, এখন অনেক হা-পিত্যেশ খিদে।
কাঁচাবাড়ি থেকে নেমে এসেছে একটা পায়েহাঁটা পথ।পথের দুধারে সাধ-সাযুজ্যে গড়ে ওঠেছে টিনের -টালির-খড়ের ছাউনি মাথায় নিয়ে সূর্য ঢাকার 
আচ্ছাদন। দিনে দিনে জেগে ওঠে জীবন।বৃষ্টিরাতে
ঝলকানো চমক ছাড়া বিদ্যুৎ দেখিনি কেউ। এখানে 
তাড়াতাড়ি সাঁঝ নামে আর তখন পুকুরের দিকে ঝোঁকা জামগাছ কেমন ঝিম ধরে বুড়ো ভাম।দিঘি থেকে ওঠে আসা ডাকাবুকো অন্ধকার আর ওপাশে শেয়ালের হাঁক।

তারপর প্রতি সন্ধেয় বেশ খেলা দেয় কে বা কারা ,
বাঁশডগায় কলন্দ খেলে __ঝমরঝম ঢিল ফেলে
আমাদের টিনের চালে।সঙ্গে অলিগলিতে তাফাল 
কুকুরের ঘেউ ঘেউ -এর হুল্লোড়। ঢিল বৃষ্টিতে 
আমরা কেমন অসহায় জবুথবু হয়ে বোবাভয়ে বিষণ্ণ গিলতাম।  বাবা বলতেন " এসব তোর হাভাতে 
বন্ধুদের কারসাজি।"  আমি চুপ দেখে মা বলতেন " এসব নিয়ে তোর ঘরদোর? সম্পর্ক রাখিস কেন এদের সাথে?"
প্রতিসন্ধেয় ক্লেদ মেখে দিনের আলোয় বন্ধুরা বাঁকা তাকায়। অসীম বলে " পাহারা দিয়ে 
ধরলেই পারিস। তুই একটা ইয়ে।" পাড়া পেছনে ঘেউ দেয় । প্রতি পৃষ্ঠায় ওদের তাচ্ছিল্যের হাসি।
কারা যে এরকম পাঁচরকম ছুরি শানায়! কে ওড়ায় এমন শয়তানি তক্কে তক্কে পাহারা দিয়েও ছকে উঠতে পারি না। ভূতুড়ে জ্যোৎস্নায়ও নেচে ওঠে পাথর বৃষ্টি। ঘাসের রক্তপাতে লাল হয় প্রত্যহ মাটি।
চিরদিন পাপোশে  থাকব নাকি ধুলো হয়ে! ডিঙোতে হবে আগুন। পায়রা ঠিক আকাশ ছেনে জেনে নেয় আলো। ভাঙা নৌকো নিয়ে ঢেউ ভাঙতে ভাঙতেই এগুতে হবে। দিনবদলের রং লেপটে থাকে দিনগুজরানের মধ্যেই। মনে মনে ছকে ফেলি কিশোরবেলার কেরামতি।

নির্জন উড়ছে। ঘুঘু ডেকে চলেছে।কুবোর নিরবচ্ছিন্ন কুব কুব ডাক। বাসন-দুপুরে পাড়া তখন ভাতঘুমে 
ঢুলু ঢুলু।সূর্যের দাঁত খাচ্ছে মাটি-জল। দূরে পীচরাস্তার
জিহ্বায় মানুষের রক্তের স্বাদ। মাঝে মাঝে বুনো ক্ষ্যাপা বাতাস ঢেউ তুলছে।
আমি আর সহপাঠী দিলীপ তখন এলোমেলো পাথর জড়ো করছি গাছ-ছায়ায়।টুকুস টুকুস পাথর ভাঙার শব্দে পাড়া নড়েচড়ে ওঠে খানিক।টের পেয়ে যান মা-বাবা আমাদের স্কুল কামাই। মা শোর তোলেন " স্কুল যাসনি?" 
বাবা তেড়ে আসেন "কি ভেবেছ তুমি!বখাটের সাথে দিন যাবে? দিলীপ, তোর স্কুল নেই?"
দিলীপ কাঁচুমাচু, " না মানে...।" আমি শুধু করজোড়ে অপরাধ স্বীকার করে সন্ধে পর্যন্ত তাঁদের কাছ থেকে নিস্তার চাই।

তারপর সূর্যাস্ত টের পেতেই আমাদের টিনের চালে 
পাথর-বৃষ্টির আগেই আমার আর দিলীপের হাতের মুদ্রায় বেজে ওঠে লক্ষ লক্ষ দিলরুবা। গাছের পাখিরা ককিয়ে ওঠে। অলিগলিতে তারস্বরে কুকুরের ঘেউ,
শেয়ালের হুক্কাহুয়া।ঢিলছোড়া দূরত্বের সমস্ত টিনের চাল তখন আমাদের পাথরবৃষ্টির কাহারবা দাদরা বেজে যাচ্ছে নিরন্তর। পাড়া তখন সাড়া দিয়ে জেগে ওঠেছে।
আমাদের টিনের চাল স্বস্তি ফিরে পায়।আর কোনোদিন পাথরের ধারাপাত হয়নি।

মন্তব্যসমূহ :0

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন