অনিল কুণ্ডু : গঙ্গাসাগর
গঙ্গাসাগরে সমুদ্র ভাঙন অব্যাহত। সমুদ্র তট বলে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই। প্রতি বছর প্রায় ২০০ ফুট এলাকা বিলীন হচ্ছে সমুদ্রের গ্রাসে। ঐতিহ্যবাহী গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যত নিয়ে সংশয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। ভাঙন রোধ করতে না পারলে বর্তমান কপিল মুনির মন্দির আশ্রম ও মেলার ভবিষ্যত প্রশ্নের মুখে। এর আগে ছয় বার সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়েছে মন্দির ও আশ্রম।
সাগরদ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায়, কেন্দ্রীয় সরকারের কোস্টাল রেগুলেশন আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বেআইনি নির্মাণ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও সমুদ্র ভাঙন রোধে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙন আরো বাড়ছে। তাঁরা জানান, সমুদ্র ভাঙনের সমস্যা দীর্ঘদিনের। কোটাল ও বঙ্গোপসাগরে প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভাঙনের গতি আরো বেড়েছে। জলের নীচে পলি মাটি দ্রুত ক্ষয়ে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্র গ্রাস করতে করতে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। কয়েক বছর আগেও সমুদ্র সৈকতের পলি যথেচ্ছভাবে কেটে তোলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের গ্রাসে গঙ্গাসাগর মেলা মাঠের জমির পরিসর কমছে। স্বাভাবিকভাবেই গঙ্গাসাগর মেলার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সমুদ্র ভাঙন রোধে রাজ্য সরকারের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, বিশেষজ্ঞদের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে কয়েক বছর ধরে নিজেদের মতো করে বাঁশ, শালবল্লী, মাটি ভর্তি পলিথিনের বস্তা দিয়ে সমুদ্র ভাঙন রোধে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সবই বিলীন হয়েছে সমুদ্রের গ্রাসে। ভাঙন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে রাজ্য সরকারের পরিকল্পনাই কেবল সার। গত পাঁচ বছর ধরে কেবল পরিকল্পনার কথাই শোনা যাচ্ছে। ব্যস ওই টুকুই। ভাঙনের কারণ চিহ্নিত করে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে না পারলে অচিরেই তলিয়ে যাবে গঙ্গাসাগর মেলার জমি।
এবিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বুধবার জানান, গত পাঁচ বছর আগে গঙ্গাসাগরে সমুদ্র ভাঙন রোধে রাজ্য সরকার ১৪১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করে। এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকার ব্যয় করবে ৬৭ কোটি টাকা এবং বাকি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়ার কথা। এই প্রকল্পের কাজের বরাত দেওয়া হয়েছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে। কাজ এখনো শুরু করা যায়নি। এর বেশি কিছু তিনি আর বলতে চাননি।
এবিষয়ে গঙ্গাসাগর বকখালি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির এক আধিকারিক অবশ্য বলেছেন, সমুদ্র ভাঙন রোধে প্রকল্পের কাজের জন্য রাজ্যের পরিবেশ দপ্তর ও কেন্দ্রীয় সরকারের কোস্টাল রেগুলেশন জোন (সি আর জেড)’র ছাড়পত্র এখনো পাওয়া যায়নি। তৃণমূল নেতা তথা জিবিডিএ’র প্রাক্তন এক কর্মকর্তার কথায়, প্রথমত সিআরজেড’র ছাড়পত্র মিলছে না। দ্বিতীয়ত কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পের জন্য কোন অর্থ সাহায্য করতে চাইছে না। একা রাজ্য সরকারের পক্ষে ১৪১ কোটি টাকা দিয়ে এই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না। পাঁচ বছর আগে ১৪১ কোটি টাকার এই প্রকল্প তৈরি হলেও বর্তমানে ব্যয় ভার আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।
এদিকে গঙ্গাসাগরে সমুদ্র ভাঙন রোধ প্রকল্পে একা রাজ্য সরকার ১৪১ কোটি টাকা ব্যয় করতে না চাওয়া গঙ্গাসাগরের স্থানীয় বাসিন্দারা কটাক্ষ করে বলেছেন, ভাঙন রোধে স্থায়ী সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে না অথচ ফি বছর গঙ্গাসাগর মেলার খরচ কোটি কোটি টাকা বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার কি করে। তাঁদের কথায়, গত বছর গঙ্গাসাগর মেলায় রাজ্য সরকার ব্যয় করেছে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। আর এবারে ব্যয় করেছে ২৫০ কোটি টাকা। মেলা, উৎসবে বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করতে পারছে সরকার অথচ ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধান করতে রাজ্য সরকার টাকা ব্যয় করতে পারছে না। গঙ্গাসাগরে সমুদ্র ভাঙন রোধে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে এদিন প্রশ্ন তুলেছেন সাগরদ্বীপের বাসিন্দারা।
Comments :0