ফেব্রুয়ারিতে ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী। চার বছর ফেলে রাখা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিধি ভোটের আগে চালু হবে জানিয়েছিলেন। সোমবার রাতে সেই বিধির বিজ্ঞপ্তি জারি করতে পারে কেন্দ্র। এদিন সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে বলা হয় যে সিএএ বিধি প্রকাশ করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে কেন্দ্র।
এই সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, অনলাইনে সরাসরি আবেদন করা যাবে নাগরিকত্বের জন্য। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোতে যদিও এই মর্মে কোনও বক্তব্য সন্ধ্যা সাড়ে ৬টাতেও দেওয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও, এই সময় পর্যন্ত, বিধি পাওয়া যায়নি।
দিল্লিতে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বৈঠকের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দেন পার্টির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘কলকাতায় এসে প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। বোঝাপড়া হয়েছে। নাগরিকত্ব সংশোধন আইন বা সিএএ’র বিধি ভোটের মুখে জারি করার ঘোষণা মেরুকরণের লক্ষ্যে। তবে বারবার এই লক্ষ্য সফল হবে না। আগেরবার যন্ত্রণা দেখেছে দেশ। এবার যারা এভাবে মেরুকরণের চেষ্টা করছে তারা তামাশার পাত্র হবে।’’
সারা দেশে প্রবল বিরোধিতার কারণে আইন তৈরি করেও চার বছর ফেলে রেখেছে মোদী সরকার। বিজেপি সরকারের সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) দেশে নাগরিকত্বের সংজ্ঞা ঠিক করেছে ধর্মের ভিত্তিতে। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি স্পষ্ট। সেই নীতিকে অগ্রাহ্য করে তৈরি হয়েছে আইন। সে আইনে বলা হয়েছে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে প্রতিবেশী পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে ভারতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন এমন হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ্, জৈন, খ্রীস্টান, পার্সী ধর্মাবলম্বীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। আইনে মুসলিমদের উল্লেখ নেই।
এক প্রশ্নে সেলিম বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে বামপন্থীদের শক্তি বাড়ছে। কংগ্রেস এবং আইএসএফ’র মতো শক্তিগুলিকে নিয়ে, তৃণমূল এবং বিজেপি, দুই শক্তিকেই হারানোর জন্য বোঝাপড়া গড়ে উঠছে। সিএএ নিয়ে মেরুকরণের উদ্দেশ্য তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে ভোট ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করা। প্রধানমন্ত্রী বলবেন সিএএ করব, আর মুখ্যমন্ত্রী বলবেন হতে দেব না। তবে বারবার একই কৌশল কাজে আসে না। মানুষ কৌশল ধরে ফেলেছেন।’’
এর আগে ধর্মীয় মেরুকরণের কৌশল নিয়ে আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী প্রয়োগ করেছিল রাজ্যের বিজেপি সরকার। প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষকে পাঠানো হয়েছে ‘ডিটেনশন ক্যাম্পে’। তার মধ্যে হিন্দুরাও রয়েছেন বড় সংখ্যায়। আবার দেশের সুরক্ষার জন্য সারা জীবন কাজ করে আসা অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকেও পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসেও আসামে সিএএ এবং এনআরসি’র প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মতুয়া অংশের মানুষের ভোট পেতে সিএএ’র প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। মেরুকরণের রাজনীতির প্রতিবাদে বারবার সারা দেশে রাস্তায় নেমেছেন বামপন্থীরা। শামিল হয়েছে দেশের বিপুল অংশের মানুষ।
সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ ও জাতপাতের রাজনীতির সমস্ত হাতিয়ারকে ব্যবহার করেই যে বিজেপি এবার লোকসভা ভোটে নামতে চলেছে, তা স্পষ্ট।
কেন্দ্রে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ২০১৯ সালে সংসদে সিএএ’র বিল অনুমোদন করিয়েছিল বিজেপি। রাষ্ট্রপতি তাতে সইও করে দিয়েছিলেন। সংসদীয় বিধি অনুসারে, কোনও বিলে রাষ্ট্রপতি সই করে দিলে ৬ মাসের মধ্যে তার বিধি ঘোষণা করে আইনটি চালু করতে হয় অথবা সংসদের সচিবালয়ের কাছে সময় চেয়ে আবেদন জানাতে হয়। গত চার বছর ধরে অমিত শাহর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ক্রমাগত সেই সময় চেয়ে নিয়েছে। জানুয়ারি মাসে ওই আইনের বিধি তৈরির জন্য সপ্তম বার সময় বাড়িয়েছিল সংসদীয় সচিবালয়।
সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সিএএ প্রসঙ্গে বারবারই বলেছেন যে দেশভাগের ফলে মতুয়া এবং অন্যান্য অংশের বহু মানুষ, যাঁরা এদেশে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে ২০০৪ সাল থেকে বিজেপি এবং তৃণমূল ধাপে ধাপে এই সিএএ’র কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। এখন সেই ভয় দেখিয়ে ভোট চাইছে।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে নাগরিকত্ব বিধি সংশোধনের নির্দেশ জারি হয় বিজেপি সরকারেরই সময়। প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী মন্ত্রীসভায় ছিল তৃণমূল, দলের নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ছিলেন মন্ত্রী।
Comments :0