Tea Garden Workers

চা শ্রমিকদের বিক্ষোভ শিলিগুড়িতে

রাজ্য জেলা

চা বাগিচা শ্রমিকদের জমির অধিকার সুনিশ্চিত করা ও চা বাগানের জমি রক্ষার দাবি সহ বাগিচা শ্রমিকদের নানা ইস্যুতে চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট ফোরামের পক্ষ থেকে মাটিগাড়া বিএলআরও দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। চা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করার সরকারের চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার চা বাগান শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের উদ্যোগে তরাইয়ের মাটিগাড়া ব্লকের অন্তর্গত বিভিন্ন চা বাগানের বাগিচা শ্রমিকদের উপস্থিতিতে মাটিগাড়ার বিএলআরও অপর্না মন্ডলের কাছে সাত দফা দাবি সনদ পেশ করা হয়। দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে জমির সুনিশ্চতা দেওয়া, সার্ভের মাধ্যমে জমি দেওয়ার ব্যবস্থা, চা বাগানের জমি হস্তান্তর ও লুট বন্ধ করা, চা বাগানের জমিতে বসবাসকারী কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না, কিছু চা বাগানের জমি উদ্‌বৃত্ত ঘোষণা করে পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দেবার সরকারী চক্রান্ত বন্ধ করা,  ৫ ডেসিমেলের সিলিঙ বাতিল করা, চা বাগানে বসবাসকারী মানুষেরা যে জমিতে বসবাস করছেন সেই জমির পাট্টা দেওয়া ইত্যাদি। ছিলেন চা শ্রমিক নেতৃত্ব সমন পাঠক ও সিআইটিইউ দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ, ভবেন্দু আচার্য্য, প্রতাপ কুজুর, প্রতাপ বদরা, শম্ভু প্রসাদ প্রমুখ। 
রাজ্যের বাগিচা শ্রমিকদের বড় ধরনের প্রতারনার মুখে ঠেলে দেবার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে চা বাগান শ্রমিকদের যৌথ মঞ্চের উদ্যোগে ধারাবাহিকভাবে লড়াই আন্দোলন চলছেই। তারই অঙ্গ হিসেবে এদিন বিএলআরও দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ চলাকালীন শ্রমিকরা আরো একবার তাদের জমির অধিকারের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন। ‘বিএলআরও কার্যালয় চলো’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বিএলআরও দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচী চলাকালীন আওয়াজ উঠেছে চা শ্রমিকদের জমির অধিকার দিতেই হবে। এদিন এই কর্মসূচীকে সামনে রেখে মেডিকেল মোড় থেকে মিছিল বেরিয়ে শিবমন্দির ফ্লাইওভারে ধরে বিএলআরও দপ্তরে পৌঁছায়। গোটা কর্মসূচিতে মহিলাদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। নেতৃবৃন্দ জানান, আগামী মঙ্গলবার নকশালবাড়ি বিএলআরও অফিস এবং বুধবার ঘোষপুকুরে আরআই অফিসে বিক্ষোভ ও দাবি সনদ পেশ কর্মসূচি হবে। দার্জিলিঙ পাহাড়ের বাগিচা শ্রমিকদের নিয়েও এই কর্মসূচি করা হবে। 
সমন পাঠক বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা চা শ্রমিকদের জমির অধিকারের দাবি জানিয়ে আসছি। যে হিসেবে চা শ্রমিকদের জমি দেবার কথা রয়েছে সেই হিসেবে সরকার জমি দিচ্ছে না। বাগিচা শ্রমিকদের জমি দেবার ক্ষেত্রে নানা টালবাহানা করছে সরকার। ২০২৩সালের ১৬ফেব্রুয়ারি একটি আইনে লিজ হোল্ডকে ফ্রি হোল্ড করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সেই আইনের কোথাও চা শ্রমিকরা জমির অধিকার পাবে সেবিষয়ে একটি কথাও লেখা হয়নি। চা বাগানের লিজ হোল্ড জমিকে ফ্রি হোল্ড করার মধ্যে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র রয়েছে। চা শ্রমিকদের যে যেখানে বসবাস করছে সেখানেই জমির অধিকার দিতে হবে। লিজ হোল্ড ল্যান্ডকে ফ্রি হোল্ড করে কর্পোরেট, বিল্ডার, প্রমোটার, এজেন্সি, ঠিকাদারদের হাতে তুলে দেবার পশ্চিমবঙ্গের সরকারের চেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে এই আইন প্রত্যাহার করার পাশাপাশি বংশ পরম্পরায় সুদীর্ঘ বছর ধরে বসবাসকারী চা বাগানের শ্রমিকদের জমির অধিকার সুনিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। 
গৌতম ঘোষ বলেন, ১৯ রাউন্ড মিটিং—র পরেও ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা হয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্য দুই সরকারই ভাঁওতা প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। চা শ্রমিকদের জন্য প্যাকেজের ঘোষণার কি হলো? তাদের জমির অধিকার কবে মিলবে? এই সব বিষয়ে কেন্দ্রের সরকার তাদের দায় এড়াতে পারে না। ভোটের মুখে বারবার নোংরা রাজনীতি করছে কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসকদল। জমির অধিকার চা শ্রমিকদের জন্মগত অধিকার। চা শিল্পের সাথে যুক্ত শ্রমিকরা আজও ভূমিহীন। এবিষয়ে সরকারের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। হঠাৎ করেই লিজ হোল্ডকে ফ্রি হোল্ড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকদের স্বার্থে কি জমি দেওয়া হবে তার কোন দিক নির্দেশ করা হয়নি। ৫ ডেসিমেল করে জমির পাট্টা চাই না। ন্যূনতম মজুরি সহ চা শ্রমিকদের জীবনের জলন্ত সমস্যা নিয়ে তরাইয়ের ৪৫টি চা বাগানের শ্রমিকেরাই ক্রমশ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে যে শ্রমিক যতোটুকু জমিতে বসবাস করছে তাদের সেই পরিমান জমির অধিকার দিতে হবে। এর অন্যথা হলো বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

Comments :0

Login to leave a comment