টোটো রেজিস্ট্রেশন নিয়ে পরিবহন দপ্তরের বিজ্ঞপ্তির বিরোধিতায় বুধবার সিআইটিইউ অনুমোদিত ই-রিকশা চালক ইউনিয়নের উদ্যোগে বিশাল মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল জলপাইগুড়ির ডিএম অফিস চত্বর। বিক্ষোভ মিছিলৈ দাবি ওঠে 'শোরুমের মাধ্যমে বাহন পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা যাবে না।টিটিইএন পোর্টালের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় সব ই-রিকশার রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।'
এদিন মাদ্রাসা ময়দান থেকে ডিবিসি রোড, থানা মোড়, বড় পোস্ট অফিস মোড় হয়ে মিছিল যখন ডিএম অফিসে পৌঁছায়, তখন পুলিশ মিছিল আটকে দেওয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। টোটো চালকদের সঙ্গে পুলিশের বচসা বেধে যায়। পরে চালকরা ডিএম অফিসের গেটেই বসে পড়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। দীর্ঘক্ষণ স্লোগান-মুখর অবস্থানের পর প্রতিনিধিদল অতিরিক্ত জেলাশাসকের হাতে স্মারকলিপি জমা দেয়। এদিনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শ্রমিক নেতা শুভাশিস সরকার, কৃষ্ণ সেন, দুলাল রায়, তোতাই কর, সুবরণ সরকার, নিখিল সরকার ও নারায়ন কুন্ডু।
নেতৃবৃন্দ জানান, "রাজ্যে কাজ নেই, ২০১১ সালের পর নতুন কোনো শিল্প হয়নি। এতোগুলো কলকারখানা ছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষিত যুবক যুবতীদের চাকরী দিতে ব্যার্থ রাজ্যের তৃণমূল সরকার এবং কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। চাকরি নিয়ে দুর্নীতি করেছে তৃণমূল। কাজ নেই তাই রাজ্যজুড়ে আজ ই-রিকশা বা টোটো অন্যতম জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যমেই বেছে নিয়েছেন শিক্ষিত বেকার ছেলেরা।
দূষণমুক্ত, পরিবেশবান্ধব এবং স্বল্প খরচে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের সহজ উপায় হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষিত বেকার ছেলে-মেয়েদের স্বনির্ভর কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি করেছে এই পেশা। অথচ টোটো চালকদের উপর পুলিশি ও প্রশাসনিক হয়রানি, তোলা আদায়, নানাবিধ বাধানিষেধ কার্যত নিত্যদিনের ঘটনা। সম্প্রতি পরিবহন দপ্তর জানিয়েছে, এক বছরের জন্য ১৭৪০ টাকা এবং দুই বছরের জন্য ২৯৪০ টাকা ফি দিয়ে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। তা-ও করতে হবে শোরুম থেকে বাহন পোর্টালের মাধ্যমে। এর ফলে বিভিন্ন শোরুম ইচ্ছেমতো টাকা দাবি করছে, যা জেলা ভেদে ভিন্ন। কিন্তু রেজিস্ট্রেশনের শেষ সময় মাত্র ৩০ নভেম্বর রেখে দেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবসম্মত নয় বলে মত টোটো চালকদের। অভিযোগ উঠেছে, যেসব চালক টিটিইএন পোর্টালের মাধ্যমে ১৭৪০ টাকা অনলাইনে জমা করেছেন, তাদের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়নি। এমনকি টাকা ফেরতও দেয়নি সরকার।" এটা সরাসরি সরকারি আর্থিক দুর্নীতি বলে অভিযোগ তুলেছেন নেতৃবৃন্দ।
ইউনিয়ন এদিন স্পষ্ট জানিয়েছে, ই-রিকশা চালকদের সরকারি স্বীকৃতি ও সামাজিক মর্যাদা দিতে হবে। টোটো ও ই-রিকশার ভেদাভেদ চলবে না। টিটিইএন পোর্টালের মাধ্যমেই ৩০০ টাকার বেশি নয় এমন রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ চালু করতে হবে। শোরুম-নির্ভর বাহন পোর্টাল বাতিল করতে হবে। রেজিস্ট্রেশনের সময়সীমা অন্তত ছয় মাস বাড়াতে হবে। অতীতে পৌরসভাগুলিতে রেজিস্ট্রেশনের নামে যে টাকা নেওয়া হয়েছে সব ফেরত দিতে হবে। পাশাপাশি নতুন টোটো কেনার ক্ষেত্রে সহজ শর্তে ভর্তুকিযুক্ত সরকারি ঋণের ব্যবস্থাও দাবি করা হয়েছে। ইউনিয়নের নেতৃত্ব আরও বলেন, কাজের অভাব ও বেকারত্বের কারণে আজ বহু শিক্ষিত তরুণ–তরুণী বাধ্য হয়ে টোটো চালাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের নীতিগত বঞ্চনা, শোরুমের দৌরাত্ম্য, অতিরিক্ত ফি ও দুর্নীতির কারণে তাদের জীবন আরও সংকটে পড়ছে।
টোটো চালকেরা হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন," ৩০ নভেম্বরের পর যদি কোনো টোটো চালককে প্রশাসনিক হেনস্থার শিকার হতে হয় তবে তারা লাগাতার আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন। রাজ্যজুড়ে এর ফলে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ।
Toto Registration
টোটো চালকদের বিক্ষোভে উত্তাল জলপাইগুড়ি ডিএম অফিস চত্বর
×
Comments :0