UP TEACHER MUSLIM STUDENT

শিক্ষিকার বিচারে এখনই অনুমোদন দেওয়ার নির্দেশ যোগী সরকারকে

জাতীয়

 অন্য ছাত্রদের দিয়ে মুসলিম বন্ধুকে পরপর থাপ্পড় মেরে গাল লাল করে দেওয়ার শিক্ষা দেওয়া শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়ায় অনুমতি দিচ্ছে না যোগী আদিত্যনাথের সরকার। তাই ফের সুপ্রিম কোর্টে ভর্ৎসিত হলো উত্তর প্রদেশ সরকার। অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়ায় অনুমতি দেওয়ার জন্য সোমবার কড়া ভাষায় সে রাজ্যকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং পঙ্কজ মিত্তল স্পষ্ট বলেন, বিষয়টি যখন আক্রান্ত-অপমানিত-আতঙ্কিত এক শিশুর ভবিষ্যতের সঙ্গে জড়িত, তখন সরকার কোনোভাবেই এই মামলার প্রতিপক্ষ হতে পারে না। দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ায় অনুমোদন দিতেই হবে রাজ্য সরকারকে। 
গান্ধীজির প্রপৌত্র তুষার গান্ধী এই ঘটনায় দ্রুত তদন্তের আরজি জানিয়ে মামলা করেন। সেই মামলার শুনানিতেই এদিন বিচারপতিরা আদিত্যনাথের সরকারকে ফের তুলোধনা করেছে। বন্ধুদের হাতে বারবার মার খাওয়া সেই ছেলেটি দু’মাস পেরিয়েও আতঙ্কে ভুগছে। ভয় পাচ্ছে স্কুলে যেতে। কারোর সঙ্গে কথা বলতেও চাইছে না সে। বিচারপতিরা উদ্বেগের সঙ্গে বলেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, বাচ্চাটি কতটা ভয় পেয়ে রয়েছে। ওর মা-বাবা কাউন্সেলিং করাতে পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন।’’ শীর্ষ আদালতকে তুষার গান্ধীর আইনজীবী জানান, ‘‘বাচ্চাটি এতটাই ভয় পেয়েছে যে ও কারো সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না। ওর এই মুহূর্তে বিশেষ যত্ন প্রয়োজন। যে স্কুলেই বাচ্চাটি ভর্তি হোক না, একটানা কাউন্সেলিং করে যেতে হবে ওকে স্বাভাবিক করে তোলার জন্য।’’ পরিস্থিতি কতটা গুরুতর তা বুঝেই অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়ায় অনুমতি দিতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি আদালত জানতে চেয়েছে, নিমহ্যান্স বা এই ধরনের কোনও প্রতিষ্ঠান বাচ্চাদের যত্ন নিয়ে সুস্থ করে তোলে কি না। তেমন কোনও খোঁজ পেলে আদালতকে জানানোর কথা বলা হয়েছে। শীর্ষ আদালত সেই প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করে ওই শিশু পড়ুয়ার কাউন্সেলিং করাবে। 
এর আগে গত মাসেও সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত ভর্ৎসিত হয় আদিত্যনাথের সরকার। শীর্ষ আদালত সেদিন বলে, ‘‘শুধু ধর্মের কারণে একজনকে যদি শাস্তি দেওয়া হয়, তাহলে সেখানে কখনও উন্নতমানের শিক্ষার পরিবেশ থাকতে পারে না।’’ ঢিমেতালে তদন্তের জন্য এর আগেও উত্তর প্রদেশ সরকারকে কাঠগড়ায় তোলে সুপ্রিম কোর্ট। বরিষ্ঠ আইপিএস অফিসারের নেতৃত্বে দ্রুত তদন্তের নির্দেশও দেয়। শীর্ষ আদালত সেদিন প্রশ্ন করেছিল, পড়ুয়াদের কী শেখাচ্ছিলেন ওই শিক্ষিকা? 
প্রসঙ্গত, ক্লাস ঘরে সাম্প্রদায়িকতা ছড়িয়ে দিয়ে যোগী রাজ্যে স্কুলে বসে এক শিক্ষিকা ছাত্রদের ঘৃণার পাঠ পড়ান আগস্ট মাসে। ভাইরাল ভিডিও’তে দেখা যায়, মুজফ্‌ফরনগরের খুব্বাপুর গ্রামে নেহা পাবলিক স্কুলের শিক্ষিকা তৃপ্তা ত্যাগী চেয়ারে বসে পরপর নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘‘আবকি বার কমার পে মারো। চলো। মুহ পে না মারো আব মুহ লাল হো রাহা হ্যায়, কমার পে মারো সারে...’’ আর মুখে নয়। এবার কোমরে মারো। দিদিমণির কথা শুনে যে বন্ধুরা বাকি ছিল, তারা একে একে উঠে এসে মারছে। হাসছে। যে বাচ্চাটিকে মারা হচ্ছে, দিদিমণির ভাষায়, সে ‘মহামেডান বাচ্চে’। তিনি শেখালেন, ‘মহামেডান’ বন্ধুদের মারতে হয় এভাবেই। বোঝান, বন্ধুত্বেরও ধর্ম আছে। যে ক্লাসঘর একটি শিশুকে জীবনের মূল্যবোধ শেখায়, যে ক্লাসঘর বন্ধুত্বের আঁতুড়ঘর হয়ে ওঠে, যোগীরাজ্যের এক স্কুলের সেই ক্লাসঘরই এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সাক্ষী থেকেছে। আর পরপর চড় খেয়ে ওই শিশুর লাল হয়ে যাওয়া গাল দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অঝোর ধারায় জল। ভিডিও’তে ধরা পড়ে তা-ও। এমন মর্মস্পর্শী ঘটনা ঘটে গেলেও যোগী-সরকার স্বাভাবিকভাবেই মাথা ঘামায়নি। গুরুত্বও দেয়নি। শীর্ষ আদালতের চাপে পড়ে তদন্ত সম্পূর্ণ করলেও ওই ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরুর অনুমতি না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে। মীরাট পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল শীর্ষ আদালতে হলফনামা দাখিল করে জানিয়েছেন, তদন্ত সম্পূর্ণ হয়ে পিয়েছে। কিন্তু ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫(এ) ধারায় সরকারের তরফে যে অনুমোদন দেওয়ার কথা বিচার প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে, তা আটকেই রয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment