উত্তর প্রদেশের গাজীপুর জেলার ধামুপুর গ্রামে এবার ‘শহীদ হামিদ বিদ্যালয়ের’ নাম পালটে তাতে প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়ে দেওয়ার অপচেষ্টায় জড়ালো যোগী আদিত্যনাথের সরকার। গত ১৯৬৫-র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে শহীদ হন আব্দুল হামিদ। বীরত্বের জন্য তাঁকে মরণোত্তর কালে দেশের সর্বোচ্চ পদক ‘পরম বীর চক্রে’ ভূষিত করা হয়। ধামুপুরে তিনি যে স্কুলে পড়েছেন, তা ‘আব্দুল হামিদ বিদ্যালয়’ হিসাবে নামকরণ করা হয়। তবে দিন পাঁচেক আগে মেরামতির নাম করে, হঠাৎ এই স্কুলের নাম পালটে দেওয়া হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন। স্কুল গেটের সামনের হোর্ডিং থেকে আব্দুল হামিদের নাম সরিয়ে দিয়ে, ‘প্রধানমন্ত্রী শ্রী কম্পোজিট স্কুল’ নামটি রাখা হয়েছে।
এই ঘটনা সামনে আসতেই, গোটা দেশে সাধারণ মানুষ বিজেপি’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন। আব্দুল হামিদের পরিবারও রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করে। শুধু ওই গ্রামেই নয়, গাজীপুরের জাখানিয়াঁ তহসিলের একাধিক গ্রামে একই প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ক্ষমতায় আসার পর থেকেই, উত্তর প্রদেশ সহ বিভিন্ন রাজ্যে ‘নাম ওয়াপসি’-র নামে বিজেপি সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছে। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রাম, শহর ও প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে নাম বদলের হুজুগ। গত কয়েক দশক কিংবা শতক ধরে, রাজ্যে মুসলমান ধর্মাবলম্বী কোনও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বের নামে যে সমস্ত জায়গার নাম রয়েছে, রাতারাতি তা পালটে ‘হিন্দু’ নাম রাখা হচ্ছে। উর্দু, ফারসি কিংবা আরবী ভাষা থেকে গৃহীত কোনও সাধারণ নামও ছাড় পায়নি। ঔরঙ্গজেব, বাবর কিংবা অন্যান্য মুঘল সম্রাটদের পর, বিজেপি’র ‘নাম ওয়াপসি’ অভিযানের নতুন শিকার হলেন শহীদ আব্দুল হামিদ। এমনই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একটা বড় অংশ।
এদিকে সর্বস্তরে নিন্দার মুখে পড়ে উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকার বেশ বিপাকে। ঠিক সেই কারণেই সোমবার তড়িঘড়ি সামনের হোর্ডিংয়ে লেখা নাম আরও একবার পালটে ‘শহীদ বীর আব্দুল হামিদ প্রধানমন্ত্রী শ্রী কম্পোজিট স্কুল’ রাখা হয়েছে। এই গোটা ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সরকারের উপর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন আব্দুল হামিদের নাতি জামিল আহমেদ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন,‘‘নাম এখন পালটানো হয়েছে ঠিকই। তবে একজন বীর শহীদের সঙ্গে একই ছত্রে প্রধানমন্ত্রীর নাম রাখা হয়েছে। এতে সরকার কিংবা শাসক দল কি ইঙ্গিত দিতে চাইছে? প্রধানমন্ত্রী এখন দেশের একজন শহীদের সমান সম্মানের দাবি করছেন? এই অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। দেশের জন্য যিনি যুদ্ধে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁর নাম ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা যে কোনও সরকার করতে পারে, তা আমাদের কাছে অকল্পনীয়। এই জেলার প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ক মুখ্য আধিকারিক হেমন্ত রাওকে এর দায় নিতে হবে।’’
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এই বিষয়ে বলেছেন,‘‘অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অশ্লীল ঘটনা। যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের বদলে দুর্নীতিবাজ বিজেপি নেতাদের বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দেশের নামও ওরা ভারত থেকে বিজেপি’তে পালটে না দেয়। যারা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কোনও ভূমিকা রাখেনি, তারা শহীদদের মর্যাদা বুঝবে তা আশাও করা যায় না।’’
এদিকে একই কায়দায় সম্প্রতি বিজেপি শাসিত রাজস্থানের বেশ কয়েকটি সরকারি স্কুলে উর্দুর বদলে পাঠক্রমে সংস্কৃতকে তৃতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তার আগেই এক প্ররোচনামূলক মন্তব্যে বিজেপি সরকারের এক মন্ত্রী দাবি করেন, কংগ্রেস সরকারের আমলে বহু সরকারি স্কুলের পাঠক্রম থেকে সংস্কৃতকে সরিয়ে উর্দু রাখা হয়েছে। তার জন্য যারা সংস্কৃত পড়ান, তারা চাকরি হারিয়েছেন। তার বদলে উর্দুর শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এই মন্তব্যের পরেই জয়পুরের এক সরকারি স্কুলে উর্দুর পঠনপাঠন বন্ধ করার নির্দেশ দেয় রাজ্যের স্কুল শিক্ষা দপ্তর। তার দিন কয়েকের মধ্যে বিকানের শহরের আরেকটি স্কুলে একই নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে রাজস্থানের উর্দু শিক্ষকদের সংগঠন বিজেপি সরকারের মন্ত্রীর এই মন্তব্যে তুমুল বিরোধিতা করেছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ রূপে ভিত্তিহীন বলে তারা জানিয়েছেন। শিক্ষার ঢালাও গৈরিকীকরণের হাতিয়ার হিসেবে হিন্দুতবাদীরা সংস্কৃত ভাষাকে ব্যবহার করছে বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন। এতে ভাষাগত পরিচিতিতে সাম্প্রদায়িক বিভাজন তৈরি হচ্ছে বলে তারা কটাক্ষ করেছেন।
Shahid Abdul Hamid School
স্কুলের নামে ‘পরম বীর’ আব্দুল হামিদ সরিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়তে তৎপর যোগী সরকার

×
Comments :0