US Debt Limit

ঝুলেই রয়েছে বিল, আর্থিক দায়
মেটাতে পারবে আমেরিকা?

আন্তর্জাতিক

US Debt Limit

আলোচনা হলেও সমঝোতা হয়নি। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের স্পিকার কেভিন ম্যাকার্থি এমনই বলেছেন সাংবাদিকদের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে কি তবে আটকে যাবে ঋণের সীমা বাড়ানোর বিল? 

জাপানের হিরেশিমায় জি-৭ গোষ্ঠীর বৈঠক সেরে দেশে ফিরেই ম্যাকার্থির সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন। জুনের আগে পাশ করাতে হবে বিল। অর্থ সচিব জেনেট ইয়েলেন বলেছেন, বিল পাশ না হলে ঋণ মেটাতে অপারগ হয়ে পড়তে পারে সরকার। 

ম্যাকার্থি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টি একগুচ্ছ শর্ত খাড়া করেছে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা রাষ্ট্রপতি বাইডেনের ওপর। মূল সুরটি উদারবাদের সময়ে রক্ষণশীল অর্থনীতির। সরকার জনকল্যাণের নামে ধার করে বাড়তি খরচ করবে না। বাইডেন সরকারকে খরচ ছাঁটতে হবে। সামাজিক পরিষেবায় বরাদ্দ কমাতে হবে। 

অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করাচ্ছেন যে উদারবাদের জমানায় আন্তর্জাতিক লগ্নি পুঁজির এই নির্দেশ নতুন নয়। জাতীয় স্তরে তাদেরই সহায়ক সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ করেছে এই যুক্তি মেনেই। 

হিসেব অনুযায়ী, মার্কিন সরকারের ঋণের অঙ্ক ৩১ লক্ষ কোটি ডলার। সীমা আরও বাড়াতে চাইছে প্রশাসন। সরকারি দায়, আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ, মেটানো না হলে সমস্যায় পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন অর্থ সচিব। 

বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকের পর ম্যাকার্থি বলেছেন, ‘‘খরচে রাশ টানতেই হবে। আলোচনা হয়েছে তবে সমঝোতা হয়নি। খরচে রাশ টানার শর্ত কিভাবে মানা হয় তার ওপর নজর রাখা হচ্ছে।’’ 

পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলছেন, ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানোর জন্য বিল পাশ নিয়মমাফিক বিষয়ই ছিল মার্কিন কংগ্রেস। হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে কোন পক্ষের গরিষ্ঠতা রয়েছে তা বিক্ষব হতো না। এখন মার্কিন কংগ্রেসের এই কক্ষে গরিষ্ঠতা রিপাবলিকানদের। সম্প্রতি রিপাবলিকানরা বিল পাশের সঙ্গে বারবার খরচে কাটছাঁটের শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন। 

আরেক অংশের ব্যাখ্যা, সরকারি খরচ বাড়লে চাহিদা এবং ব্যবসা বাড়বে জেনেও লগ্নি পুঁজি বরাবরই এই পদক্ষেপের বিরোধী। সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ বাড়লে অর্থনীতিতে কর্পোরেট পুঁজির নিয়ন্ত্রণ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাইডেন নিজেও সামাজিক সুরক্ষা বা জনকল্যাণে বিশাল ব্যয়ের পক্ষপাতী ছিলেন না। ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রিট’ এবং তার পর একাধিক আন্দোলনে লগগ্নি পুঁজির মাথা বিভিন্ন কর্পোরেট ব্যাঙ্ককে বিশাল ছাড়ে ক্ষোভ আছড়ে পড়ে। 

এমনকি ডেমোক্র্যাট বারাক ওবামা রাষ্ট্রপতি হওয়ার সময় এমনই প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রান্তিক শ্রমজীবী অংশের প্রকৃত মজুরি নেমে গিয়েছিল। বস্তুত শ্রমজীবী অংশের সামাজিক সুরক্ষায় যেটুকু খরচ হয় তার কয়েকগু খরচ হয় কর্পোরেটকে ছাড় দিতে। ২০০৮’এ বিনিয়োগ ব্যাঙ্কগুলি বিপুল অঙ্কের সরকারি সুবিধা পেয়েছে। সম্প্রতি একাধিক ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলেও সরকারি কোষাগারের অর্থে সেগুলিকে চাঙ্গা করার ঘোষণা হয়নি। একাংশের মত, সরাসরি না হলেও পরোক্ষে তাদের হয়ে বিল ঠেকানোর এই তৎপরতা। 

লক্ষ্যণীয় যে কোনও পক্ষই ইউক্রেনে অস্ত্র এবং যুদ্ধসামগ্রী সরবরাহের জন্য খরচ কমানোর আলোচনা করছে না। মার্কিন প্রশাসনের খরচে এই খাতে টাকা পাচ্ছে যুদ্ধ সরঞ্জাম নির্মাতা বেসরকারি একাধিক কর্পোরেট সংস্থা।

ম্যাকার্থির তরফে সরাসরি খাদ্য, আর্থিক সহায়তা এবং স্বাস্থ্য প্রকল্পে সহায়তার শর্ত কড়া করতে বলা হয়েছে বাইডেনকে। খরচ ২০২২’র স্তরে বেঁধে রাখতে বলা হয়েছে। আগামী এক দশক খরচ বেঁধে রাখার শর্তও দেওয়া হয়েছে। বাইডেন বলেছেন, আলোচনার দরজা খোলা। মতবিনিময় জট ছাড়াতে পারবে। 

Comments :0

Login to leave a comment