Daluakhaki

দলুয়াখাকির লড়াকুদের কাছে মহিলা নেত্রীবৃন্দ

রাজ্য

ক্যাপশন — বৃহস্পতিবার জয়নগরের দলুয়াখাকি গ্রামে মহিলা সমিতির নেত্রীত্ব।

অনিল কুণ্ডু- জয়নগর


জয়নগরের সেই দলুয়াখাকি গ্রামের আক্রান্ত মহিলাদের ঐক্যবদ্ধ লড়াইকে কুর্ণিশ জানিয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিল সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি। বৃহস্পতিবার সংগঠনের রাজ্য কমিটির তরফে এক প্রতিনিধি দল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই পোশাকসহ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে দলুয়াখাকি গ্রামে আসে। আক্রান্ত গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিনিধিদল। 

সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি জাহানারা খান, রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষের নেতৃত্বে পাঁচ জনের এই প্রতিনিধি দল এদিন দলুয়াখাকি গ্রামে আসে। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সমিতির দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক মোনালিসা সিনহা, নেত্রী রমা চক্রবর্তী ও অভীতা হালদার। 

আক্রান্ত মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার শেষে কনীনিকা ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, তৃণমূল সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধে গ্রাম জেগে উঠছে। দলুয়াখাকি গ্রামের মহিলাদের মধ্যে একতা, সাহস ও সরকারের প্রতি ঘৃণা দেখেছি। পুলিশ, প্রশাসন তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জয়নগরে প্রশাসনিক সভা করে ফিরে গেলেন। অথচ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই গ্রামে আসার সময় পেলেন না। তিনি দলুয়াখাকি গ্রামের এই লড়াইয়ে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বলেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে কোন লড়াইয়ে আমরা পাশে আছি। সাথে আছি। 

গত ১৩ নভেম্বর। বামনগাছি অঞ্চলের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর খুনের ঘটনার পর জয়নগরের এই দলুয়াখাকি গ্রামে পরিকল্পিত আক্রমণ সংগঠিত করে তৃণমূলের সশস্ত্র বাহিনী। প্রকাশ্য দিবলোকে পুলিশের উপস্থিতিতে সিপিআই(এম) কর্মী, সমর্থকদের বাড়িতে বেপরোয়া হামলা, আক্রমণ, ভাঙচুর, নির্বিচারে লুঠতরাজ চালায় সশস্ত্র বাহিনী। অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় তাঁদের ঘরবাড়ি। এই ঘটনার প্রায় দু’ মাস পেরিয়েছে। এখনো দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করছেন আক্রান্ত গ্রামবাসীরা। অপরাধীরা শাসক দলের হওয়ায় গ্রামে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও জয়নগর থানার পুলিশের খাতায় তারা এখনো অধরা। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নিরপরাধ আক্রান্ত পরিবারের মানুষদের পুলিশ গ্রেপ্তারকরছে হয়রান করছে। ঘটনার পর সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির প্রতিনিধিরা এর আগেও দলুয়াখাকি গ্রামে এসেছেন। সাধ্যমতো ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিয়েছেন তাঁরা আক্রান্ত পরিবারের হাতে। আক্রান্ত পরিবারের পুরুষরা ঘটনার পর থেকে এখনো গ্রাম ছাড়া রয়েছেন। 

এই গ্রামের শিশুরাও দেখেছে সেদিনের ভয়ঙ্কর সেই আক্রমণের ঘটনা। কয়েক দিন আগে তৃণমূলীরা গ্রামে সভা করতে এসে শিশুদের হাতে লজেন্স দিয়েছিল। সেই লজেন্স ঘৃণায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে শিশুরা। একথাই এদিন মহিলা সমিতির প্রতিনিধি দলের কাছে তুলে ধরছিলেন তাদের মায়েরা। মহিলা সমিতির প্রতিনিধিরা যখন শিশুদের হাতে লজেন্স, বিস্কুট তুলে দিচ্ছিলেন তারা দু’হাত বাড়িয়ে হাতে তুলে নিয়েছে। শত্রু, মিত্রকে চিনতে শিখেছে আক্রান্ত গ্রামের এই শিশুরাও।   

ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে দলুয়াখাকি। হুমকি, চোখ রাঙানি, বাঁধাকে উপেক্ষা করেই তৃণমূলীদের ভেঙে দেওয়া সেই ঘরবাড়ির ছাউনি ফের মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আক্রান্ত ৩১টি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে সিপিআই(এম) দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটি। বর্বরোচিত ঘটনার পর দীর্ঘদিন ধরে শীতের ঠান্ডার মধ্যেই শিশু সন্তানদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে রাত কাটিয়েছেন আক্রান্ত পরিবারের মহিলারা। কেউ বা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন। 

নিজেদের পেটের ভাতের লড়াই আর শাসকের চোখে চোখ রেখে দলুয়াখাকি গ্রামের লড়াইয়ের বার্তা পৌঁছেছে গোটা রাজ্যে। নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়েই ইনসাফ চাইতে যুবদের ইনসাফ যাত্রায় অংশ নিয়েছেন আক্রান্ত মহিলারা। ব্রিগেডের সমাবেশেও পার্কসার্কাস ময়দান থেকে মিছিল করে ইনসাফ চাইতে যোগ দিয়েছেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের কথায়, ‘অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি চাই।’ এদিন গ্রামবাসীদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই ও সাহসিকতাকে ফের কুর্ণিস জানিয়ে আবারো গ্রামে আসার আশ্বাস দিয়ে ফিরে গেলেন সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ।

 

Comments :0

Login to leave a comment