GUJARAT MODEL

গুজরাট মডেল!

সম্পাদকীয় বিভাগ

স্বঘোষিত বিশ্বগুরুর ৫৬ ইঞ্চি ছাতির বহর জাহির করে এবার তাঁর নিজের রাজ্যের হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীরা সরাসরি টার্গেট করেছে এদেশে পড়তে আসা বিদেশি মুসলিম ছাত্রদের। মোদী ভক্ত এই উগ্র হিংসাশ্রয়ী হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকে মুসলিম বিদেশি ছাত্রদের নিজেদের ধর্মাচরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে উপেক্ষা করে। রমজান মাসের বিশেষ নমাজের বদলে হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী হুলিয়া জারি করেছে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলার। অন্যথায় উচিত শিক্ষার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
হুমকি দিয়ে ফিরে গেলেও কথার খেলাপ করেনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই সশস্ত্র গেরুয়াবাহিনী নিয়ে বিদেশি ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত আমেদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টে‍‌লে চড়াও হয়। হস্টেলে ঢুকে মুসলিম ছাত্রদের বেধড়ক মারধর এবং ভাঙচুর শুরু করে। মুহূর্তের মধ্যে সব লন্ডভন্ড করে দিয়ে বীরদর্পে বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করে। ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীদের এমন দুঃসাহস ও নির্ভীক মনোভাব সম্ভবত মোদী-শাহ’র রাজ্য বলেই বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, পুলিশ-প্রশাসন কারোরই তারা তোয়াক্কা করে না। গুজরাট দাঙ্গা এই উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের শিখিয়েছে কীভাবে দাঙ্গার আগুন জ্বালিয়ে মুসলিমদের খুন করতে হয়; ধর্ষণ করতে হয়। সরকারের, পুলিশের সামনে এমন বর্বরতা, এমন নৃশংসতা এমন গণহত্যার পরও দিব্যি বুক ফুলিয়ে চলা যায়। বিলকিসের ধর্ষকরা জেল থেকে আগাম মুক্তি পেয়ে যায় এবং বীরের মতো সম্মানিত হয়।
কয়েকদিন আগেও খোদ দিল্লিতে নমাজ পড়ার সময় দিল্লি পুলিশের আধিকারিক লাথি মেরে তুলে দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর গণতন্ত্রের জননী এভাবেই বোধহয় ভক্তদের অনুপ্রাণিত করে ভিন্ন ধর্মকে সহ্য না করতে। মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা, বিদ্বেষ, হিংসার বীজ বপন করা হয়েছে গত এক বছর ধরে সরকারি প্রশ্রয়ে। ধর্মীয় উদারতা ও সহিষ্ণুতার বদলে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের নির্মূল করা উৎ‌খাত করার মানসিকতা তৈরি করা হয়। প্রতিদিন দেশের সর্বত্র আরএসএস-বিজেপি নেতারা ঘৃণার বিষ ছ‍‌ড়িয়ে যাচ্ছেন। সমাজকে বিষাক্ত করে তুলছেন। তারই প্রতিফলন ঘটছে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একের পর এক কুৎসিত, কদর্য ও নৃশংসতার মধ্য দিয়ে।
মোদী জমানায় উগ্র হিন্দুত্ববাদের আস্ফালনে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা যখন তলানিতে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ভারত যখন আতঙ্কের দেশে পরিণত হয়েছে তখন বিদেশে তার বিরুদ্ধে সমালোচনার স্বর বাড়ছে। আমেরিকা-ইউরোপে আঙুল উঠছে ভারতের দিকে। মোদী জমানায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বৃদ্ধির প্রবণতাকে গণতান্ত্রিক পরিসরের সংকোচন বলে মনে করতে শুরু করেছে দুনিয়া। পরিস্থিতি কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে বিদেশি ছাত্রদের ওপর প্রাণঘাতি হামলায় স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিষয়কে আর অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে চাপা দেওয়া যাবে না। বিশ্বের দরবারে ভারতের মান-মর্যাদা নষ্ট হবে। প্রতিবেশী দেশের চোখে ভারত খতরনক দেশ হিসেবে চিহ্নিত ‍হবে। এরপরও আশ্চর্যজনকভাবে প্রধানমন্ত্রী নিরব।
 

Comments :0

Login to leave a comment