CPI(M) NOMINATION IN WEST BENGAL PANCHAYAT

প্রতিরোধের মেজাজে মনোনয়ন বামপন্থীদের

রাজ্য জেলা

CPIM BJP RSS TMC WEST BENGAL POLITICS BENGALI NEWS বড়শুলে সিপিআই(এম)’র জমায়েতের একাংশ। ছবিটি ভিডিও থেকে সংগৃহীত।

রাজ্য জুড়েই বিরোধীদের মনোনয়ন ঠেকাতে আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছে তৃণমূল। সেই আক্রমণ মোকাবিলা করেই রাজ্যের বহু ব্লকেই পঞ্চায়েতের তিনটি স্তরের জন্য মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন বাম প্রার্থীরা। 

বারাকপুর, মিনাখাঁ, রাজগঞ্জ, কাকদ্বীপ, বিষ্ণুপুর, বড়শুল, খড়গ্রাম, নানুর সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল সোমবার সাক্ষী থেকেছে প্রতিস্পর্ধার। সিপিআই(এম)’র বিভিন্ন জেলার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজেও রয়েছে সেই প্রতিরোধের উল্লেখ। 

সোমবার তৃণমূলের সন্ত্রাস উপেক্ষা করেই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাকপুর ২ নম্বর ব্লকে মনোনয়ন জমা দিলেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। এদিন সকাল থেকেই ব্লক অফিসে প্রার্থী এবং প্রস্তাবকদের নিয়ে ভিড় জমান সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। জানা গিয়েছে, ব্লকের ১৬৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মধ্যে ৯০টিতে ইতিমধ্যেই মনোনয়ন জমা দিয়েছে সিপিআই(এম)। বাকি আসনগুলিতে মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে। এদিন গার্গী চ্যাটার্জি, শুভব্রত চক্রবর্তী, পারভেজ রহমান বিশ্বাস, দেবজ্যোতি দাস সহ জেলা সিপিআই(এম) নেতৃত্ব মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় উপস্থিত ছিলেন। 

উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মিনাখাঁ ব্লকেও সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা করছে তৃণমূল। এদিন সকাল থেকে তৃণমূলের হুমকি উপেক্ষা করে সিপিআই(এম)’র মিনাখাঁ এরিয়া কমিটির দপ্তর থেকে মনোনয়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। সায়নদীপ মিত্র, সোমা চক্রবর্তী, রানা রায়ের মতো জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতি সিপিআই(এম) প্রার্থীদের সাহস জোগায়। মনোনয়ন দাখিল হয় মিনাখাঁ ব্লকের অধিকাংশ পঞ্চায়েত আসনেই। সেই আক্রোশ থেকে বেলা ৩টের পরে মিনাখাঁ পার্টি অফিসে হামলা চালায় তৃণমূলের বাহিনী। পুলিশের সামনেই হামলা হয়। তৃণমূলীদের বাঁশের আঘাতে মাথা ফেটে যায় জেলানেত্রী সোমা চক্রবর্তীর। আহত হন ছাত্র নেতা রানা রায়, নাজিবুল ইসলাম প্রমুখ। 

সোমবার জলপাইগুড়ি জেলার জলপাইগুড়ি সদর, ময়নাগুড়ি, রাজগঞ্জ, মালবাজার সহ সমস্ত ব্লকেই গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির অধিকাংশ আসনেই এদিন  মনোনয়ন জমা দেওয়া হয়। বাকি আসনগুলিতে মঙ্গলবারের মধ্যেই মনোনয়ন জমা দেওয়া হবে বলে জেলার সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন। প্রতিটি ব্লক অফিসের সামনে ক্যাম্প করে মনোনয়ন প্রক্রিয়া পরিচালনা করেন বামপন্থীরা। জলপাইগুড়ি সদর ব্লকের ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি জেলা কমিটির সম্পাদক সলিল আচার্য। রাজগঞ্জ ব্লকের ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন সিপিআই(এম) দার্জিলিং জেলা কমিটির সম্পাদক সমন পাঠক, সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এই ক্যাম্প অফিস থেকেই ডাবগ্রাম ১ও ২, ফুলবাড়ি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত আসন এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনগুলিতে মনোনয়নের কাজ করা হয়।

এর পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাতেও এদিন তৃণমূলী সন্ত্রাস প্রতিহত করেই মনোনয়নের কাজ হয়েছে। এদিন কাকদ্বীপে দলবদ্ধ ভাবে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। তাঁদের উপর তৃণমূলের হামলা হয়। কিন্তু সেই হামলা প্রতিরোধ করেই মনোনয়ন জমা দেন বাম প্রার্থীরা। 

রবিবার তৃণমূলের বাধা উপেক্ষা করেই কুলতলি থানার সামনে বিশাল সমাবেশ করে সিপিআই(এম)। সভায় মূল বক্তা ছিলেন সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সুজন চক্রবর্তী তৃণমূলকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘‘এটা ২০১৮ নয়! এটা ২০২৩। এই তথ্য যেন শাসকের দালালরা মনে রাখে।’’

এছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিষ্ণুপুর-১ ব্লকের পশ্চিম বিষ্ণুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনে সোমবার মনোনয়ন জমা দেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। একই ছবি ধরা পড়েছে সোনারপুরেও। সোনারপুর ব্লকের কামরাবাদ গ্রাম পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনেও এদিন মনোনয়ন জমা পড়েছে। 

সোমবার সকালে পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান-২ নম্বর ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির আসনে মনোনয়ন জমা দিতে যাচ্ছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা। বড়শুল মোড়ের কাছে রাস্তায় ট্র্যাক্টর এবং ডাম্পার দাঁড় করিয়ে সিপিআই(এম)’র পথরোধের চেষ্টা করে তৃণমূল। পাল্টা প্রতিরোধে নামেন সিপিআই(এম) কর্মীরাও। এরফলে পুলিশ বাধ্য হয় তৃণমূলের বাহিনীকে রাস্তাকে সরিয়ে দিতে। পরবর্তীকালে জেলা প্রশাসন জানায় মঙ্গলবার তাঁরা দাঁড়িয়ে থেকে ব্লকের সমস্ত সিপিআই(এম) প্রার্থীর মনোনয়ন করাবেন। এই আশ্বাসের পরে এদিনের মতো ফিরে যান সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। 

যদিও এই ঘটনার প্রতিবাদে পালসিটে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় সিপিআই(এম)। ব্লকের সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, পুলিশ না থাকলে সোমবারই বড়শুলে তৃণমূলী বাহিনীকে এলাকাছাড়া করে দিতেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। কিন্তু প্রশাসনের কথাকে মর্যাদা দিয়ে তাঁরা আরও একদিন অপেক্ষা করতে প্রস্তুত। মঙ্গলবার দ্বিগুণ জমায়েত নিয়ে ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে যাবেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। 

বড়শুলে আক্রমণ হলেও পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্যত্র হামলার সাহস দেখাতে পারেনি তৃণমূল। তারফলে রায়না-১, কাটোয়া-১ এবং মেমারি ২ ব্লকে সকাল থেকেই মনোনয়ন জমা দেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। জানা গিয়েছে এই ব্লকগুলির অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনেই মনোনয়ন জমা দিয়ে ফেলেছেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। 

পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণা হওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মুর্শিদাবাদের খড়গ্রামে বাড়ির সামনে খুন হয়েছিলেন কংগ্রেস কর্মী ফুলচাঁদ শেখ। সোমবার সেই খড়গ্রামেই বিশাল মিছিল করে ব্লক অফিসে গিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের বাম এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা। মিছিলের মেজাজের চোটে রাস্তার দুইপাশে জমায়েত করে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস হয়নি তৃণমূলের। এদিনের মিছিলের সামনে ছিলেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সদস্য ধ্রুবজ্যোতি সাহা। 

বীরভূমের নানুরে বাম প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দিতে গেলে তাঁদের উপর হামলা চালায় তৃণমূল। বাম প্রার্থীদের গাড়ির সামনের এবং পিছনের কাঁচ ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও জেদ বজায় রেখেই নানুরে মনোনয়ন জমা দেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। 

সন্ত্রাস মোকাবিলা করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার ছবি চোখে পড়েছে হুগলী জেলাতেও। এদিন গোঘাট-১ নম্বর ব্লকের ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ আসনে এদিন মনোনয়ন জমা দেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। পুরশুড়া ব্লকেও তৃণমূলের সন্ত্রাস উপেক্ষা করে মিছিল করে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বামপন্থী প্রার্থীরা। এদিনই বলাগড় ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েতের সমস্ত আসনে মনোনয়ন জমা পড়েছে। 

হুগলি জেলার গোঘাট-২ নম্বর ব্লক অফিসের সামনে সোমবার সকাল থেকেই জমায়েত করে ছিল তৃণমূলের বাহিনী। সেই জমায়েত উপেক্ষা করেই এদিন এই ব্লকের সিংহভাগ গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে মনোনয়ন জমা দিয়েছে সিপিআই(এম)। এদিন মোটা লাঠির মাথায় ঝান্ডা বেঁধে মনোনয়নের মিছিলে সামিল হন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা। তৃণমূলের সাহস হয়নি সেই মিছিল আটকানোর। 

Comments :0

Login to leave a comment