Dengue

ডেঙ্গুতে রাজ্যে মৃত আরো দুই

রাজ্য

dengue

চিন্ময় কর-খড়্গপুর ও তপন বিশ্বাস- ইসলামপুর


ফের ডেঙ্গুতে মৃত্যু। ডেঙ্গু আরও জাঁকিয়ে বসেছে রাজ্যে। ডেঙ্গু সংক্রমণ তীব্র আকার নিয়েছে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা ও নদীয়া জুড়ে। বাদ নেই হুগলি, হাওড়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, বর্ধমান জেলাও। এবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন খড়্গপুরের অবসরপ্রাপ্ত এক রেল কর্মী ও যাদবপুরের এক কিশোরীর। মৃতের নাম রঞ্জন নায়েক(৬৩)। খড়্গপুর শহহের ১ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর ইন্দার বাসিন্দা ছিলেন তিনি। জানা গেছে সেপ্টেম্বর নাসের প্রথম দিকে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁর রক্ত পরীক্ষা করলে জানা যায় তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। গত ৮ সেপ্টেম্বর তাঁকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসা চলছিল তাঁর। শুক্রবার সকালে তাঁর অবস্থার অবনতি হয়। রাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এই নিয়ে মেদিনীপুর জেলায় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হলো মোট ৬ জনের। চলতি মৌসুমে জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় হাজারের বেশি। এর মধ্যে, সর্বাধিক আক্রান্ত মেদিনীপুর শহরে- ১৪২ জন। খড়্গপুর শহরে ৮৫ জন। এই নিয়ে রাজ্যে চলতি মরশুমে অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। বেসরকারি সূত্র বলছে, রাজ্যে এ বছরে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এদিন দুপুরে যাদবপুরের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের নাম ডোনা দাস (১২)। কলকাতা পৌরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রিন্স গোলাম মহম্মদ শাহ রোডে থাকতে ওই কিশোরী। কয়েকদিন আগে তার জ্বর হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর তার রক্ত পরিক্ষা করালে ডেঙ্গু রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এদিন সকালে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর।

ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমেই যেন ভয়াবহ হয়ে উঠছে পশ্চিম মেদিনীপুরে! প্রতিটি বাড়িতেই জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। আলাদা করে ডেঙ্গু ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে। তবে, জেলার প্রতিটি হাসপাতালকেই অকারণে রেফার না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের তরফে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বার্তা দিয়েছেন, জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করানোর জন্য। একইসঙ্গে, ডেঙ্গু ধরা পড়লে অবশ্যই হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। জ্বর কমে যাওয়ার পরও ৭২ থেকে ৯৬ ঘন্টা সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী বলে জানিয়েছেন সিএমওএইচ  ডঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী সহ জেলার সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য আধিকারিকরাই।

শারদোৎসবের মুখে ভয়ঙ্কর বিপদের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। উৎসবের মুখে ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশির রোগের প্রকোপ চলছে। প্রতিটি ঘরেই কেউ না কেউ জ্বর বা সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর জ্বর হলেই ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার আতঙ্কে ভুগছেন মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্তদের মধ্যে অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন। আবার অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মূলত আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে জ্বর, সর্দি-কাশির প্রকোপ অনেকটা বেড়েছে। তবে এসব জ্বরকে অবহেলা করা উচিত নয়। আর জ্বর চার দিনের বেশি স্থায়ী তাহলে করোনার পরীক্ষার পাশাপাশি নিজ থেকে কোনো ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এদিকে, সারা রাজ্যে  ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ক্রমশ। রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সাধারণ মানুষের কপালে।
ইসলামপুর শহরের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আশিস দাশগুপ্ত বলেন, ঋতু বা আবহাওয়া পরিবর্তনসহ নানা কারণে জ্বর এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন গত কয়েকদিনে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু পেয়েছি। এখন কোন রোগী জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হলে হয় সে  ইনফ্লুয়েঞ্জা নতুবা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি গরমের এই সময়ে শিশুদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার কথাও জানান তিনি।


ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: প্রথমা দে বলেন, আবহাওয়ার খামখেয়ালির কারণে দিন-রাতের তাপমাত্রা বাড়ছে-কমছে। আবার কখনও রোদ এবং কখনও বৃষ্টির ফলে ভাইরাসজনিত নানা ধরনের জ্বর, সর্দি এবং গলাব্যথা বেশি দেখা দেয়। রাজ্যে  ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের পাশাপাশি ডেঙ্গুও রয়েছে। এ দুটির উপসর্গও জ্বর। তবে যেভাবেই শরীরে জ্বরই আসুক না কেন, কোনো অবহেলা করা যাবে না। আর ঠান্ডা জ্বর, সর্দি-কাশি হলে অবশ্যই করোনা ও ডেঙ্গু টেস্ট করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে , হাসপাতালের আউটডোরে গড়ে ৩০০ রোগী আসছেন। তারমধ্যে ৬০ শতাংশ রোগীই জ্বরে আক্রান্ত।
 


 

Comments :0

Login to leave a comment