বৌদ্ধিক উৎকর্ষতা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সেরার সেরা ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ফুৎকারে উবে গেছে ৫৬ ইঞ্চির মহাগুরুর ভক্তরা। সারা দেশ থেকে পড়তে আসা অগ্রসর-অনগ্রসর সব অংশের ছাত্র-ছাত্রী প্রত্যাখ্যান করেছে ধর্মান্ধ হিন্দুত্ববাদীদের। একবাক্যে ঘোষণা করেছে যুক্তি ও বিজ্ঞান বিরোধী কুসংস্কারাচ্ছন্ন কূপমণ্ডুকদের জন্য জেএনইউ (জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়) নয়। বামপন্থী উদার চিন্তার বিশ্ববীক্ষাকেই তাই আপন করে নিয়েছে পডুয়ারা। দশকের পর দশকের ঐতিহ্যকে বহন করে ফের লাল নিশানই উড্ডীন হয়েছে জেএনইউ’র চূড়ায়। লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বিশ্বের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা দেশবাসীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছে এই দেশটা বিদ্বেষ, ঘৃণা ও হিংসার চাষকারীদের জন্য নয়। জাতপাত ও ধর্মের বিভাজনের ঊর্ধ্বে মৈত্রী ও ভালোবাসার মানুষের জন্য। ভারতীয়ত্বের সেই উজ্জ্বল ঐতিহ্যের শত্রুদের যেমন জেএনইউ’র অগ্রণী নবীন প্রজন্ম প্রত্যাখ্যান করেছে ঠিক সেইভাবেই ভাবতে হবে গোটা দেশকে।
আঁটঘাট বেঁধে দুষ্কৃতী সহযোগে গেরুয়া বাহিনীকে নামানো হয়েছিল যে কোনও মূল্যেই হোক দেশের সেরা উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠান থেকে বামপন্থাকে নির্মূল করার জন্য। সেই অভিযানে নির্লজ্জভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল পুলিশ প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও। আরএসএস-বিজেপি কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছিল জেএনইউ’র দখল নিতে। কিন্তু পড়ুয়ারা আবারও বুঝিয়ে দিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার উৎকর্ষ কেন্দ্র। বিজ্ঞান বিরোধী, যুক্তি বর্জিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন হিন্দুত্ববাদীদের জন্য নয়। ওদের আদর্শ জায়গা নাগপুরের আখড়া যেখানে সঙ্ঘ প্রচারক তৈরি করা হয়।
মোদী-শাহদের নাকের ডগায় জেএনইউ’তে মুক্ত চিন্তার হাত ধরে বামপন্থার জয়জয়কার বড্ড যন্ত্রণার। বামেদের শক্ত ঘাঁটি হবার কারণে বিজেপি নেতারা জেএনইউ’কে দেগে দিয়েছে দেশদ্রোহীর কারখানা হিসাবে। বাম ছাত্র নেতাদের বিরুদ্ধে দেশবিরোধিতার মিথ্যা অভিযোগ তুলে মামলাও হয়েছে বিস্তর। পড়ুয়াদের বেকায়দায় ফেলতে ষড়যন্ত্রের জাল বোনা হয়েছে একাধিকবার। বারেবারে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বহিরাগত গুন্ডাদের ঢুকিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষের এবং পুলিশের সহায়তায় এই ধরনের হামলার বহর ক্রমাগত বেড়েছে। সরকারি প্রচারযন্ত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকিয়ে শাসকদলের পক্ষে প্রচার হয়েছে। হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা প্রসারে সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের এনে সেমিনারের নামে হিন্দুত্বের প্রচার হয়েছে। উপাচার্য করা হয়েছে আরএসএস’র কাছের লোককে। বিভিন্ন বিভাগে পর্যাপ্ত যোগ্যতা ছাড়া সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠদের আনা হয়েছে অধ্যাপক করে। রাতের অন্ধকারে সশস্ত্র গুন্ডাদের জড়ো করে হস্টেলে আক্রমণ করে পেটানো বাম সমর্থক ছাত্র-ছাত্রীদের। শিক্ষাঙ্গনকে দুষ্কৃতীদের আখড়ায় পরিণত করার চেষ্টা হয়েছে। সব ধরনের খরচ বাড়িয়ে গরিব মেধাবী ছাত্রদের ভর্তির রাস্তা বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোনও চেষ্টাই সফল হয়নি বাম ছাত্র ঐক্যে প্রবল প্রতিরোধে। বামপন্থীদের বিচ্ছিন্ন ও নিষ্ক্রিয় করতে চার বছর ছাত্র সংসদের নির্বাচন বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু রোখা যায়নি বাম ছাত্রদের। ফের জয় ছিনিয়ে এনে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে।
EDITORIAL
বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে
×
Comments :0