EDITORIAL

ভোট বড় বালাই

জাতীয়

নারীর ক্ষমতায়নে এবং নারী শক্তির উত্থানে স্বঘোষিত ভগবানের দূত হিসেবে নিজেকে জাহির করলেন বিজেপি’র একমাত্র ভোটত্রাতা নরেন্দ্র মোদী। এর ঠিক পরেই সমস্বরে জয়ধ্বনি দিয়ে হইহই করে বাজারে নেমে পড়লেন অনুগত মন্ত্রী সাংসদসহ দলের প্রচারবাহিনী। উপলক্ষ সংসদে মহিলা বিল পেশ। বিগত ২৬ বছর ধরে যে বিল নিয়ে অন্তহীন কচকচানি হয়েছে। ১৩ বছর আগে যে বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হবার পরও থমকে ছিল। কার্যত সেই বিলটিকেই অক্ষত রেখে ফের পেশ করে মহা ধূমধাম সহকারে কৃতিত্ব জাহিরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে শাসক দল। যদিও ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে বছরে দু’কোটি চাকরি প্রতিশ্রুতির সঙ্গে মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানোরও প্রতিশ্রুতি ছিল। দু’কোটি চাকরি প্রতিশ্রুতি পরবর্তীকালে জুমলা হিসেবে স্বীকৃতি পায় শাসক দলের তরফে। তবে গত নয় বছরে এক বারের জন্যও মনে প‍‌ড়েনি মহিলাদের ক্ষমতায়ন বা নারী শক্তির উত্থানের কথা। মনে পড়ল তখন, যখন ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে কপালের ভাঁজ গভীর থে‍কে গভীরতর হচ্ছে। মোট জনসংখ্যা তথা ভোটারের অর্ধেক নারী। অতএব নারী বন্দনায় গদগদ হয়ে নারীদের মাথায় ঘোল ঢেলে কৌশলে ভোট আদায় করা না গেলে পরাজয় অনিবার্য। ৯ বছরের শাসনে প্রায় সব ফ্রন্টেই ব্যর্থতার পর ব্যর্থতা। তাই নারীই হয়ে উঠেছে এ যাত্রায় ভোট বৈতরণী পার হবার অন্যতম প্রধান সহায়।

অনেক লুকোচুরি, টানটান উত্তেজনা, কি হয় কি হয় ভাব ইত্যাদি সব কিছুর অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পর্বতের মুষিক প্রসব হলো মোদীর নবনির্মিত অতি বিলাসবহুল, চোখ ধাঁধানো রাজকীয় নতুন সংসদ ভবনে। পক্ষকাল আগে আচমকাই ঘোষণা হয়েছিল সংসদের বি‍‌শেষ অধিবেশনের। বিশেষ জরুরি প্রয়োজনে সংসদের বিশেষ অধিবেশন হয় বটে তবে সেটা নিতান্তই বিরল। কেন অধিবেশন তা দেশবাসীকে জানিয়েই ডাকা হয় বিশেষ অধিবেশন। এবারই সেই নিয়ম ভাঙা হলো গোপনীয়তার বেড়াজালে। বারংবার বিরোধীদের তরফে আলোচ্য সূচি জানানোর দাবি উঠলেও আশ্চর্যজনকভাবে সরকার নীরবতা পালন করে গেছে। শেষে পেশ হলো মহিলা বিল। এরজন্য এত রঙ্গ তামাশা!

এখন প্রশ্ন হলো ৯ বছর মহিলাদের কথা যাদের মনে পড়েনি তারা হঠাৎ ভোটের আগে মহিলা বিল পাশ করানোর জন্য বিশেষ অধিবেশন বসালো! সংসদের বক্তৃতায় এবং ভাবভঙ্গিতে এমন লম্ফঝম্ফ হলো তাতে মনে হতে পারে বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। বাস্তবে যে বিল পেশ করার জন্য এমন রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন সেই বিল করে আইনে পরিণত হবে এবং কবে সেই আইন লাগু হবে তার কোনও নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সরকার। আগামী লোকসভা নির্বাচনে তো নয়ই, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনেও এই আইন চালু হবে কিনা সন্দেহ আছে। কেননা আগে জনগণনার কাজ শেষ করতে হবে। জনগণনার রিপোর্টের ভিত্তিতে লোকসভা ও বিধানসভা আসনের পুনর্বিন্যাস হবে। সেই পুনর্বিন্যস্ত আসনে সংরক্ষিত হবে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন। বোঝাই যাচ্ছে এটা এক সুদীর্ঘ সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।

২০২১ সালে জনগণনার কথা হলেও মোদী সরকার জনগণনা করেনি। নানা অজুহাতে সেটা বারবার পিছিয়েছে। আসলে জনগণনার তথ্য থেকে সামাজিক বিন্যাসের যে ছবি ফুটে উঠবে তা বিজেপি’র রাজনীতির পক্ষে অস্বস্তির কারণ হতে পারে এই আশঙ্কায় জনগণনা বিলম্বিত হচ্ছে। এখন শোনা যাচ্ছে ২০২৭ সাল নাগাদ হতে পারে। হলে তারপর হবে ডিলিমিটেশন। পাশাপাশি দেশের অন্তত ৫০ শতাংশ রাজ্যে কেন্দ্রীয় বিল পাশ করাতে হবে লোকসভায় সংরক্ষণের জন্য। আর সব রাজ্যে পাশ করাতে হবে সব রাজ্যে সংরক্ষণের জন্য। কম করে ছ’বছরের আগে এই বিল কাজে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাহলে বিশেষ অধিবেশন ডেকে এত ঢাকঢোল পিটিয়ে ভোটের আগে অবতার সাজার অর্থ কি? ভোট বড় বালাই।

Comments :0

Login to leave a comment