Election Bond

নিয়ম বদলে বন্ড বিক্রির মেয়াদ বাড়িয়ে বিজেপি’র ভাণ্ডার ভরিয়েছে কেন্দ্র

জাতীয়

ভোটের খরচ তুলতে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির নিয়ম বদলে কাউকেই কেয়ার করে না মোদী সরকার। সুপ্রিম কোর্টে নির্বাচনী বন্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরে তা বিচারাধীন হলেও তাতে থোড়াই কেয়ার কেন্দ্রের। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইনে বন্ড নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রের নির্বাচনী বন্ড বিক্রি করার কথা থাকলেও তাও মানা হয়নি। এমনকি নির্বাচনী বন্ড (election bond) বিক্রির নিয়ম বদল করায় নিদেন পক্ষে নির্বাচন কমিশনের যে অনুমতির প্রয়োজন তাও নেয়নি মোদী সরকার। সামনে গুজরাট ও হিমাচলের বিধানসভা নির্বাচনে টাকা তোলায় এই মরিয়া উদ্যোগ দেখা গেছে মোদী সরকার। গত ৭ নভেম্বর নির্বাচনী বন্ড আইনে বদল এনে বাড়ানো হয়েছে বন্ড বিক্রির মেয়াদ। তা নিয়ে দেশজুড়েই শোরগোল শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তথ্য জানার অধিকার আইনে তোলা প্রশ্নের জবাবে প্রকাশিত তথ্যে মোদী সরকারের বেনিয়ম স্পষ্ট। অর্থ দপ্তরের অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তর কেন্দ্রের আইন লঙ্ঘনের তথ্য তুলে ধরেছে। মোদী সরকার ছত্রে ছত্রে কীভাবে নিয়ম ভেঙে একতরফাই বন্ড আইন বদল করে তার টাকার তোলার সময় বাড়িয়ে নিয়েছে তা জানানো হয়েছে তথ্যে।


প্রসঙ্গত ২০১৮ সালে মোদী সরকার এই নির্বাচনী বন্ড চালু করায় তাতে বিরোধিতা করে সিপিআই(এম) সহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এই বন্ডে কর্পোরেটের রাজনৈতিক দলে অর্থের দাপট বাড়বে। তাতে নির্বাচনে অবাধ প্রচারের সুযোগ হারাবে বিভিন্ন  রাজনৈতিক দল। তাই তারা বন্ড বিক্রিতে স্থগিতাদেশের আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে (supreme court) মামলা দায়ের করে। কেন্দ্রের আপত্তিতে বন্ড বিক্রির স্থগিতাদেশ খারিজ হলেও মামলা বহাল রয়েছে। এতে ঢালাও বন্ড বিক্রিও চলছে। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনী বন্ডের ইস্যুতে গুরুত্ব রয়েছে জানিয়ে আগামী ৬ ডিসেম্বর সেই মামলার শুনানির দিন স্থির করেছে। সাধারণত কোনও আইন বিচারাধীন হলে সরকার তাতে  কোনও বদল আনতে পারে না। কিন্তু মোদী সরকার ব্যতিক্রম। বিচারাধীন হোক বা তা নিয়ম মতো না হোক কোনও কিছুই মানা হয়নি। একতরফা আইন পালটাতে সংশোধনী এনে তা বদল করা হয়েছে। ৭ নভেম্বর সেই সংশোধনী নোটিসে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। 
বিজেপি শাসিত দুই রাজ্য গুজরাট, হিমাচলে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই কর্পোরেট থেকে টাকা তুলতে বন্ড বিক্রির মেয়াদ ১৫ দিন বাড়ানো হলো। নির্বচনী বন্ড আইনের নিয়ম মতো জানুয়ারি, এপ্রিল জুলাই এবং অক্টোবর এই চার মাসের ১০ দিন এসবিআই ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট শাখা থেকে বন্ড বিক্রি হবে। যারা বড় অঙ্কের টাকা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিতে চান তারা বন্ড কিনে তা রাজনৈতিক দল কে দিতে পারবেন। এতে বন্ড বিক্রিতে চার মাসে ৪০ দিন বাদেও লোকসভা নির্বাচনে চলার বছরে আরও অতিরিক্র ৩০ দিন বন্ড বিক্রি করা যাবে। এবারে বিধানসভা নির্বাচন চলার বছরে আরও অতিরিক্র ১৫ দিন সময় বাড়ানো হলো। প্রশ্ন উঠেছে বন্ড বিক্রিতে সময় বাড়াতে বিচারাধিন নির্বাচনী বন্ড আইন কিভাবে সংশোধন হলো? অর্থ মন্ত্রকের কাছে তথ্য জানার অধিকার আইনে এই প্রশ্ন রেখেছিলেন লোকেশ কুমার বাত্রা। এতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অফিসারদের মতামতও তিনি জানতে চেয়েছিলেন। অর্থমন্ত্রকের অর্থ বিষয়ক দপ্তর এতে বিস্তারিত তথ্য পেশ করেছে। দপ্তরের জবাবে পেশ করা ৩২পাতার তথ্যে দেখা যাচ্ছে আইন বদলাতে পদে পদে নিয়ম ভেঙেছে কেন্দ্র। তথ্যে বলা হয়েছে,২০১৮সালের নির্বাচনী বন্ড আইন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৩১ ধারার  উপধারা ৩ অনুসারে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অর্থ বিষয়ক দপ্তর জানাচ্ছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইন  অনুসারে এই সময় বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। একই সঙ্গে নির্বাচনের সঙ্গে নির্বাচনী বন্ডের বিষয় যুক্ত থাকলেও দেখা গেছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোন আলোচনা করা হয়নি। শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে আইন সংশোধন করে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির সময় বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়ে দায়িত্ব সারা হয়েছে। বাত্রা এপ্রসঙ্গে বলছেন, মোদী সরকার তার নোটিসে জানাচ্ছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের (rbi) ‌আইন মতো বন্ড বিক্রির আইন সংশোধন করে  তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অবাক করার বিষয় হলো, সরকার যে তথ্য দিয়েছে তাতে পরিষ্কার বলা হচ্ছে, এই আইন সংশোধনে  রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি। তাদের বন্ড বিক্রির সময় বাড়ানো নিয়ে এই আলোচনা প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে। এদিকে আগেও একবার নির্বাচনী বন্ড বিক্রির সময় জোর জবরদস্তি বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিল মোদী সরকার। বাত্রা জানান, সরকারের তথ্যে দেখা গেছে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের সময় জোর জবরদস্তি প্রশাসনিক নির্দেশে  বন্ড বিক্রির সময় বাড়িয়েছিল মোদী সরকার। সেই সময় সুপ্রিম কোর্ট বন্ড বিক্রির সময় বাড়ানোর প্রশানিক নির্দেশ খারিজ করে দেয়। আইনে যে সময় দেওয়া আছে তার বেশি সময় দেওয়া যাবেনা বলে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।এবারে তাই জোরজবরদস্তি কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়া ইচ্ছামতো আইন  বদল করে বন্ড বিক্রির মেয়াদ বাড়ানো হলো।


এদিকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ছাড়াও নির্বাচন কমিশনকেও এই সিদ্ধান্ত  গ্রহনে কোনও আলোচনা করা হয়নি তা  অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তরের সচিব অজয় শেঠের নোটে স্পষ্ট হয়েছে বলে জানান বাত্রা । তিনি বলেন,প্রাপ্ত তথ্য দেখা গেছে গত ৪ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রকের বৈঠকে শেঠ তার নোটে বলছেন নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ড বিক্রির সময় সীমা নভেম্বর ১০ দিন এবং ডিসেম্বরে ১০ দিন বাড়ানোর কথা গত ১ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এতে তাদের কোনও মতামত জানায়নি। নির্বাচন কমিশন এতে মতামত না জানানোয় অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তরের বৈঠকে আধিকারিকরা এতে ‌আইন সংশোধন করে দিন বাড়ানোর নোটিস জারিতে আপত্তি জানান। সেই আপত্তি মানা হয়নি। এদিকে অর্থ মন্ত্রকের আইনি পরামর্শদাতা অর্পিত আনন্দ মিশ্রের এতে মতামত চাওয়া হলে তিনি পরিষ্কার জানান,বন্ড বিক্রির সময় বাড়ানো নিয়ে আইন সংশোধনে অবশ্য নির্বাচনী কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। এছাড়াও কেন্দ্রের আইন মন্ত্রকের পরিমর্শ নেওয়া দরকার। দুটোর কোনোটাই নেওয়া হয়নি বলে বাত্রা জানান। এদিকে সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহেতা নির্বাচনী বন্ড নিয়ে  সুপ্রিম কোর্ট  মামলা চলছে এতে তার যে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ রয়েছে বলে জানান। তাতে এই উদ্যোগে সমস্যা হতে পারে বলে জানান। সেই আপত্তিও নাকচ হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত দেখা গেছে নিবাচনী বন্ডের সিংহভাগ অর্থ  শাসক দল বিজেপি’র কোষাগারে জমা পড়েছে। ২০২০-২১সালে  ১.২ লক্ষ কোটি টাকা নির্বাচনী বন্ড বিক্রি হয়। এবছর  শুধু ১ এপ্রিল থেকে ১০ এপ্রিল এই ১০ দিনে ৬৪৮ কোটি টাকার বন্ড  বিক্রি হয়েছে। এতে ৬৫ শতাংশ বন্ডের অর্থ বিজেপি’র ঘরে জমা পড়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment