EDITORIAL FOR 30TH JANUARY

মোদী পোষিত ধান্দার ধনতন্ত্র

সম্পাদকীয় বিভাগ

Modi crony capital adani bjp rss bengali news

ধাান্দার ধনতন্ত্রকে কীভাবে ক্লাসিকাল স্তরে উন্নীত করতে হয় তা গোটা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন ভারত। আর এই মোদী মার্কা ক্লাসিকাল ধান্দার ধনতন্ত্রের নায়ক মোদীর ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানি। সরকারি যাবতীয় নজরদারি ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বিমা সংস্থাকে ব্যবহার করে  দু’হাতে শুধু মুনাফা লুটেছে। পাশাপাশি কারচুপি করে ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে শিল্প বাণিজ্য সাম্রাজ্য বিস্তার  করেছে। কৃত্রিমভাবে শেয়ারের মূল্য বহুগুণ বাড়িয়ে সম্পদের পাহাড় জমিয়েছে। মোদী সরকারের সৌজন্যে আদানি আজ বিশ্বের তৃতীয় ধনীতম ব্যক্তি। দু’দশক আগে তার নামও কেউ জানত না। 


মোদী বন্ধু গৌতম আদানির এহেন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের পর্দা ফাঁস করে দিয়েছে মার্কিন গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। আদানি গোষ্ঠী এই রিপোর্টের বিরোধিতা করে হিন্ডেনবার্গের বিরুদ্ধে মামলা হুমকি দিলেও হিন্ডেলবার্গ নি‍‌জেদের অবস্থান  থেকে এক চুলও সরছে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এমনকি মামলার চ্যালেঞ্জও গ্রহণ করেছে। হিন্ডেলবার্গ স্পষ্টভাবেই জানিয়ে দিয়েছে আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে তাদের রিপোর্টে কোনও খাদ নেই। অর্থাৎ আদানিদের  চোখ ধাঁধানো এই বাড়বাড়ন্ত  বেআইনিও অসৎ পথে। তারা হিসেবে গরমিল করেছে। বেআইনি লেনদেন করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন করমুক্ত অঞ্চলে শিখণ্ডী কোম্পানি খুলে তাদের মাধ্যমে গোষ্ঠীর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। কর ফাঁকি দিয়েছে। নিজেদের শিখণ্ডী সংস্থাকে দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করে শেয়ার মূল্য বাড়িয়েছে হু হু করে।


অন্যদিকে মোদী সান্নিধ্যের কল্যাণে সরকারের উপর প্রভাব খাটিয়ে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণকারি সরকারি সংস্থাকে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি সবকিছু দেখেও রা কাড়েনি। সময় মতো হস্তক্ষেপ করে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা সরকারি সংস্থাগুলি দুর্নীতি ও জালিয়াতি করার অবাধ সুযোগ  করে দিয়েছে।


মোদী সরকার একদিকে যেমন একটার পর একটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে জলের দরে আদানিদের হাতে তুলে দিয়েছে তেমনি আদানি গোষ্ঠী যাতে অঢেল ঋণ পায় সেই নির্দেশ দিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে। আবার আদানিদের সংস্থার শেয়ারও যাতে এলআইসি সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা অতি উচ্চমূল্যে কেনে তারও ব্যবস্থা হয়েছে। দেখা গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা কিনতে আদানিদের যত খরচ করতে হয়েছে তার থেকে অনেক বেশি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক তাদের ঋণ দিয়েছে। ইতস্তত করলেও কেন্দ্র নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক চোখ বুঁজে টাকা ঢালতেে বাধ্য হয়েছে। অদৃশ্য নির্দেশে এলআইসি এবং স্টেট ব্যাঙ্ক সহ অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক আদানিদের গুচ্ছ গুচ্ছ শেয়ার কিনে বাজারে তাদের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছে। 

অর্থাৎ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক-বিমা এবং সরকারি সংস্থাগুলি আদানিদের আজকের রমরমার পৃষ্ঠপোষক। মোদী প্রধানমন্ত্রী না হলে এটা সম্ভব হত কিনা সন্দেহ।


হিন্ডেনবার্গের রিপোর্টের জেরে আদানিদের শেয়ার মূল্য যখন প্রায় এক চতুর্থাংশ পড়ে গেছে তখন তার মূল্য চোকাতে হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা ও ব্যাঙ্ককে। আসলে সঙ্কটের দায় চাপবে সাধারণ মানুষের ওপর। যাঁরা কষ্টের টাকা আমানতে জমা রেখেছেন বা বিমার পলিসি কিনেছেন।  আদানিদের জালিয়াতি ব্যবসায় মূলধন জোগাতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে এসে পড়েছে ব্যাঙ্ক-বিমা। এখানে জমা হয় সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত সঞ্চয়। সেই অর্থই ঢুকেছে আদানি গোষ্ঠীতে। ফলে এলআইসি, স্টেট ব্যাঙ্ক প্রভৃতিকে বহু কোটি টাকা গুণাগার দিতে হচ্ছে। মোদীর আদানি সেবার দৌলতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার মাধ্যমে জনগণের সম্পদ বেহাত হচ্ছে। সর্বোপরি দেশের অর্থনীতিতে বড়সড় ধাক্কা এসে আছড়ে পড়েছে। সব বিষয়ে আগবাড়িয়ে কথা বলা অর্থ মন্ত্রী নীরব। কথা নেই প্রধানমন্ত্রীর মুখেও।


 

Comments :0

Login to leave a comment