TET

হাতিয়ার সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ, প্রাথমিকে ২৬৯ জনকে শিক্ষকপদে পুনর্বহালের বিজ্ঞপ্তি

রাজ্য

বেনিয়মের নিয়োগের সেই বরখাস্ত ২৬৯ জনকে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিতে পুনর্বহালের বিজ্ঞপ্তি জারি করল প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। হাতিয়ার কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ। কলকাতা হাইকোর্ট প্রাথমিকের শিক্ষক পদ থেকে ২৬৯ জনকে বরখাস্ত করার যে নির্দেশ দিয়েছিল, সুপ্রিম কোর্ট তাতে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় সোমবার ফের তাঁদের নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। নয়া বিজ্ঞপ্তিতে পর্ষদ জানিয়েছে, ওই ২৬৯ জন চাইলে চাকরিতে ফের যোগ দিতে পারেন। নিয়োগে বেনিয়ম হওয়ায় ২৬৯ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পরে ডিভিশন বেঞ্চও সেই নির্দেশ বহাল রেখেছিল। এর পরে সুপ্রিম কোর্টে যায় সেই মামলা। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি অনিরুদ্ধ বসু ও বিচারপতি বিক্রম নাথের বেঞ্চ ১৯ অক্টোবর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেয়।
হাইকোর্টের নির্দেশের পর সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন বরখাস্ত হওয়া প্রার্থীরা। তাঁরা দাবি করেছিলেন, কীভাবে তাঁরা চাকরি পেয়েছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হোক। সুপ্রিম কোর্ট শেষ পর্যন্ত স্থগিতাদেশের নির্দেশ দেয়। নিয়োগের উপর স্থগিতাদেশের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে ওই ২৬৯ জনকে মামলায় যুক্ত করার নির্দেশও দেয়। তাঁদের মামলায় যুক্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়। এই ২৬৯ জনকে বাড়তি ১ নম্বর দিয়ে নিয়োগ করা হয়েছিল। ওই ২৬৯ জনকে কেন বাড়তি ১ নম্বর করে দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে। সেই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর না পাওয়ায় চাকরি গিয়েছিল ২৬৯ জনের। সুপ্রিম কোর্টে সেই মামলার নিষ্পত্তির আগেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ তাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করায় বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য পর্ষদের এই পদক্ষেপ অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন। 
এ‍‌দিকে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে অবশেষে আগের দুই বারের টেটের উত্তীর্ণদের নম্বর প্রকাশ করতে চলেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ২০১৪ ও ২০১৭ সালের টেটের নম্বর জানানো হবে বলে সোমবার জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল। উল্লেখ্য, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে ওই দুই বছরের পরীক্ষার নম্বর প্রকাশ করা হয়নি। নম্বর ছাড়াই প্রার্থীদের নিয়োগও হয়ে গিয়েছে। এসএমএস’র মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়েছে। ফলে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি ও বেনিয়মের বেশ কিছু বিষয় প্রকাশ হয়ে গিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের কাছে। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করতে ২০১৪ সাল ও ২০১৭ সালের টেটের নম্বর প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশ মেনে ২০১৪ সাল ও ২০১৭ সালের টেটের নম্বর প্রকাশ করতে বাধ্য হচ্ছে পর্ষদ। একইসঙ্গে এই দুই সালের টেট সার্টিফিকেটও দেওয়া হবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ জানিয়েছে। 
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ১১ হাজার শিক্ষকপদে নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ শুরু করেছে। আগামী ১৪ নভেম্বর আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন। এর মধ্যে ২০১৪ সাল ও ২০১৭ সালের টেটের নম্বর পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হচ্ছে। ফলে এই দুই সালের উত্তীর্ণ প্রার্থীরা নিজেদের নম্বর জানতে পারবেন। এর ফলে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকটাই সুবিধা হবে। তাঁরা বুঝতে পারবেন যে, লিখিত পরীক্ষায় কত নম্বর পেয়েছেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে যে নতুন টেট হবে, তার ফলাফল প্রকাশের সময়ে সবিস্তারে জানিয়ে দেওয়া হবে নম্বর। সোমবার এমনই জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল।
প্রাথমিক টেটের নম্বর না জানানোর ফলে নিয়োগে দুর্নীতি করা সরকারের পক্ষে সহজ হয়েছিল। কে কত নম্বর পেয়েছেন, তা প্রকাশ না হওয়ায় প্রার্থীদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না, কোনও প্রার্থী টেট উত্তীর্ণ হয়েছেন কি না। তার জলন্ত উদাহরণও হাইকোর্টে জমা পড়েছে। সাদা খাতা জমা দেওয়া প্রার্থীর চাকরি হয়েছে, অযৌক্তিকভাবে নম্বর বাড়িয়ে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, এমন উদাহরণ হাইকোর্টে জমা পড়েছে। বিশেষ করে ২০১৪ সালের প্রাথমিক টেটে বেনজির দুর্নীতির তথ্য হাইকোর্টকে জানিয়েছে সিবিআই। দীর্ঘ দিন ধরে নম্বর জানার দাবিতে লড়াই করছেন টেট উত্তীর্ণরা। চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, পর্ষদ টেটের নম্বর নিয়ে টালবাহানা করে চলেছে। গত শুক্রবারই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে জানিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছ থেকে ওই তথ্য পাওয়া যায়নি। মামলাকারীদের আইনজীবী জানিয়েছিলেন, লিখিত পরীক্ষার নম্বর জানা না থাকায় প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের আবেদন পূরণে সমস্যা হচ্ছে। তারপরেই টেটের ফল প্রকাশ করা হবে বলে এদিন পর্ষদ সভাপতি ঘোষণা করলেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment