UNEMPLOYMENT

সরকারি চাকরি ও কর্মী, দুই-ই ছেঁটেছেন মোদী

জাতীয়

Bjp india unemployment narendra modi bengali news

কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরে স্থায়ী নিয়োগের ব্যাপারে মোদী সরকারের চরম অপদার্থতা স্পষ্ট হলো কেন্দ্রেরই রিপোর্টে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রকের অন্তর্গত ব্যয় সংক্রান্ত দপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মোদী-আমলে গত তিন বছরে কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে অনুমোদিত পদ এবং কর্মীর সংখ্যা দুই-ই কমেছে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিতেও একই হাল। 
 

ব্যয় সংক্রান্ত দপ্তরের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারা দেশে ৯.৬৪ লক্ষেরও বেশি কেন্দ্রীয় সরকারি পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। অনুমোদিত পদের সংখ্যা কিভাবে কমেছে তা দেখিয়ে রিপোর্টে বলা হয়েছে, অসামরিক ক্ষেত্রে কেন্দ্রের নিয়মিত কর্মীর অনুমোদিত মোট পদের সংখ্যা (কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল বাদে) ২০২১’র ১ মার্চ ছিলো ৪০.৩৫ লক্ষ। ২০২২’র ১ মার্চ সেই সংখ্যা কমে হয়েছে ৩৯.৭৭ লক্ষ। দেখা যাচ্ছে, গ্রুপ সি পদগুলিতেই কোপ পড়েছে বেশি। অনুমোদিত পদের এই সংখ্যা গত তিন বছরের সর্বনিম্ন।

রিপোর্ট জানাচ্ছে, ওই একই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারি পদে কর্মরতের সংখ্যাও কমেছে। ২০২১ সালের ১ মার্চে কেন্দ্রীয় অফিসে কর্মরত ছিলেন মোট ৩০.৫৬ লক্ষ। ২০২২ সালে ১ মার্চে অর্থাৎ এক বছরেই তা কমে হয়েছে ৩০.১৩ লক্ষ। কেন্দ্রীয় সরকারি পদে কর্মরতের এই সংখ্যা ২০১০ সাল থেকে সর্বনিম্ন, বলছে কেন্দ্রেরই রিপোর্ট।


অর্থাৎ অনুমোদিত পদ, কর্মীর সংখ্যা এবং শূন্যপদ— তিন দিক থেকেই কেন্দ্রের চাকরির পরিস্থিতি বেহাল, জানাচ্ছে খোদ কেন্দ্রেরই ব্যয় সংক্রান্ত দপ্তরের রিপোর্ট।

কেন্দ্রীয় পদে নিয়োগের এহেন ভয়াবহ চেহারায় উদ্বেগ জানিয়ে সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সোমবার টুইটারে লিখেছেন, ‘‘দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছলেও কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তরগুলিতে প্রায় ১০ লক্ষ অনুমোদিত পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে। তার ওপর আবার অনুমোদিত পদের সংখ্যা কমিয়ে ৩ বছরের সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়েছে মোদী সরকার। অথচ গত অক্টোবরে ধূমধাম সহকারে ১০ লক্ষ সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মোদী! ডাবল প্রতারণা!’’


নরেন্দ্র মোদীর সরকার কেন্দ্রের ক্ষমতায় এসেছে ২০১৪ সালে। ভোটের আগে চাকরি এবং কর্মসংস্থান নিয়ে নানা বাগাড়ম্বর চালালেও সরকারে আসার পর থেকে বেকার যুবকদের কাজ দেওয়ার ব্যাপারে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় ছিলো তারা। 

মোদী সরকারের এই ভূমিকায় কেন্দ্রীয় দপ্তরে শুধু শূন্যপদই বাড়েনি, একটানা কমানো হয়েছে অনুমোদিত পদ এবং কর্মীর সংখ্যা। কেন্দ্রের সূত্রে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে, সরকারি চাকরি নিয়ে এবার নাকি কোমর বেঁধে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রী। হঠকারী নোট বাতিল, তড়িঘড়ি জিএসটি চালু এবং অপরিকল্পিত করোনা লকডাউনে কোটি কোটি মানুষের কাজ খেয়ে গত অক্টোবরে ১০ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানের ঘোষণা করে তা বাস্তবায়নে নাকি ‘কঠোর পরিশ্রম’ করছেন প্রধানমন্ত্রী! তাই চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১ মার্চের তথ্য প্রকাশিত হলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অনেকটাই উন্নত চিত্র মিলবে বলে সরকারি মহলের আশা। 

বোঝাই যাচ্ছে, ‘শিয়রে শমন’ আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা ভেবে টানা ন’বছরের শীতঘুম থেকে উঠে এবার নড়েচড়ে বসতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।


বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে শূন্যপদ কত? কেন্দ্র সবসময়েই আসল তথ্য লুকোতে চাইলেও হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রক ও দপ্তরে প্রায় ১০ লক্ষ ফাঁকা পদ পড়ে রয়েছে। চরম বেকারত্বের চলতি সময়ে সরকারি শূন্যপদগুলিতে নিয়োগের কোন সদিচ্ছাই দেখায়নি মোদী সরকার। হিসেব বলছে, কেন্দ্রের মোট পদের ৯২শতাংশই পাঁচটি বৃহদাকার মন্ত্রক ও দপ্তরের। এগুলি হলো রেল মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা (সিভিল) মন্ত্রক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, ডাক দপ্তর এবং রাজস্ব দপ্তর। দেখা যাচ্ছে, ১০টি কেন্দ্রীয় অসামরিক পদের মধ্যে ৪টিই রেলের। 

সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ মার্চে রেলে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিলো ১৫.০৭ লক্ষ। কিন্তু মোট কর্মীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ১১.৯৮ লক্ষ। অর্থাৎ রেলে ৩ লক্ষেরও বেশি পদ ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
প্রতিরক্ষা (অসামরিক) ক্ষেত্রে ২০২২ সালের ১ মার্চে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিলো ৫.৭৭ লক্ষ। কিন্তু সেসময়ে মোট কর্মরতের সংখ্যা ছিলো প্রায় ৩.৪৫ লক্ষ। 

অর্থাৎ এই দপ্তরে শূন্যপদের সংখ্যা ২.৩২ লক্ষ।
ওই সময়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিলো ১০.৯০ লক্ষ। এর মধ্যে চাকরিরতের সংখ্যা ৯.৬৯ লক্ষ। অর্থাৎ ফাঁকা রয়েছে ১.২০ লক্ষ পদ।
 

কর্মসংস্থানের আরেকটি বড়ো ক্ষেত্র ডাক বিভাগে ২০২২ সালের ১ মার্চে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিলো ২.৬৪ লক্ষ। কিন্তু সেসময়ে মোট কর্মরতের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১.৬৪ লক্ষ। অর্থাৎ ডাক বিভাগেও শূন্যপদের সংখ্যা ১ লক্ষ।


এছাড়া ওই একই সময়ে রাজস্ব দপ্তরে মোট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিলো ১.৭৮ লক্ষ। কিন্তু সেসময়ে মোট কর্মরতের সংখ্যা ছিলো প্রায় ১.০৪ লক্ষ। এখানে শূন্যপদের সংখ্যা ৭৪ হাজার।


অর্থমন্ত্রকের অন্তর্গত ব্যয় সংক্রান্ত দপ্তরের সর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টে কেন্দ্রের মোট শূন্যপদ সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য জানানো না হলেও বোঝাই যাচ্ছে, এতদিন কর্মীদের অবসরের পরে সেই অনুপাতে নতুন নিয়োগ হয়নি। তাছাড়া কেন্দ্রের বহু কাজই বহুদিন ধরে বাইরের সংস্থার কাছে আউটসোর্সিং করা হয়েছে, ফলে স্থায়ী পদে নিয়োগের প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেছে সরকার। 

উল্লেখযোগ্য ঘটনা হলো, চলতি বছরের গোড়ায় রাজ্যসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে কর্মীনিয়োগ মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জীতেন্দ্র সিংয়ের কাছেও কেন্দ্রীয় সরকারের শূন্যপদ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন সাংসদরা। এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব এড়িয়ে হেঁয়ালির ভঙ্গীতে মন্ত্রী লিখিত জবাব দিয়েছিলেন, ‘‘সরকারের শূন্যপদে নিয়োগ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।’’ 

প্রধানমন্ত্রী মোদী ঘোষিত বিতর্কিত ‘রোজগার মেলা’র উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘দেশজুড়ে এই কর্মসূচীর মাধ্যমে  বিভিন্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রক, দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত অধিগৃহীত সংস্থা, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ইত্যাদিতে নতুন নিয়োগ হচ্ছে। এতে ১০ লক্ষ নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’’ 

তবে স্পষ্ট ভাষায় জ্ঞাতব্য তথ্য না জানিয়ে মন্ত্রীর এসব ভাসাভাসা কথা আসলে কর্মসংস্থানের প্রশ্নে কেন্দ্রের চরম ব্যর্থতা ঢাকারই অপকৌশল, বলেছেন বিশ্লেষকরা।

Comments :0

Login to leave a comment