স্থানীয় সূত্রকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানাচ্ছে, এরবিল শহরে মোট ৮টি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, ঘটনায় ৪জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহতের সংখ্যা ৬।
ইরানে বক্তব্য, ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ইজরায়েলের পাশাপাশি অন্য দেশে মোসাদের এই ঘাঁটিগুলি থেকেও মধ্য প্রাচ্যে অস্তিরতা ছড়ানো হচ্ছে।
এই হামলায় প্রবল বিত্তশালী কুর্দিশ ব্যবসায়ী পেশরাভ দিজায়ী এবং তাঁর পরিবারের একাধিক সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। রুশ টেলিগ্রাম চ্যানেল স্লাভিয়ানগ্রাড জানাচ্ছে, আবাসন এবং বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা চালানোর ব্যবসা করতেন দিজায়ী। ইরানের অভিযোগ, নিজের নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে মোসাদের হয়ে গুপ্তঘাতক এবং গুপ্তচর নিয়োগ করতেন দিজায়ী। তাঁর সঙ্গে মার্কিন ঘনিষ্ঠতারও প্রমাণ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২৩’র ডিসেম্বরে রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রয়াত জেনারেল কাসেম সোলেমানির কবরস্থানে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়। ইরান অভিযোগ, এক শত্রু দেশের সংস্থা সেই হামলার নেপথ্যে ছিল। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মঙ্গলবার সেই ঘটনার ‘জবাব’ দিয়েছে ইরান।
ইরানের সরকারি সংবাদসংস্থা আইআরএনএ নিউজ জানাচ্ছে, এই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে ইরান। রেভল্যুশনারি গার্ডের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘ইরাকের ওই অঞ্চলকে ইজরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছে। এরবিলকে ঘাঁটি বানিয়ে ইরান বিরোধী ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এদিনের হামলায় সেই নাশকতা ছড়ানোর কেন্দ্রগুলিকে নির্মূল করা হয়েছে।’’
রেভল্যুশনারি গার্ডের তরফে দাবি করা হয়েছে, ইরাক এবং সিরিয়ায় মোট ১১টি মিসাইল ছোঁড়া হয়েছে।
এদিকে ইরানের এই হামলাকে কড়া নিন্দা জানিয়েছে বাগদাদ। ইরাকের বিদেশমন্ত্রক ক্ষোভ প্রকাশ করে জানিয়েছে, ‘‘ইরানের হামলার ফলে ইরাকের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। ইরাকের মানুষের নিরাপত্তাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে তেহেরান।’’
আল জাজিরা জানাচ্ছে, এই হামলার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চলেছে ইরাক।
ইরানের হামলার ফলে মঙ্গলবার সকাল অবধি এরবিল বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। বহু বিমানের যাত্রাপথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
ইরানের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র নাসের কানানি জানিয়েছেন, ‘‘তেহেরান সমস্ত দেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে। কিন্তু এক্ষেত্রে কেবলমাত্র নিজেদের রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’’
২০২৩ সালের অক্টোবর মাস থেকে গাজায় বেনজির তাণ্ডব চালাচ্ছে ইজরায়েলী সেনা। ইজরায়েল প্যালেস্তাইন সংঘর্ষে এখনও অবধি ২৪ হাজারের বেশি সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে ইজরায়েল অভিযোগ করে এসেছে, হামাসকে সাহায্য করছে ইরান। আবার গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে লোহিত সাগরে ইজরায়েলী জাহাজের উপর হামলা চালানো শুরু করে ইয়েমেনের হাউথি বিদ্রোহীরা। ইজরায়েল সহ পশ্চিমী বিশ্বের অভিযোগ, হাউথিদেরও অর্থ এবং অস্ত্র যোগায় ইরান।
চলতি মাসে আমেরিকা এবং ব্রিটেন ইয়েমেনে একশোর কাছে ক্ষেপণাস্ত্র ফেলে হামলা চালায়। আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল হাউথিদের বিমান এবং সামরিক ঘাঁটি। সেই হামলার পরে সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই ইরাকে হামলা চালালো ইরান।
Comments :0