Teachers Protest

জেলায় জলায় বিক্ষোভ চাকরিহারাদের, আমার বাবা যোগ্য বলছে শিশু

রাজ্য জেলা

জলপাইগুড়িতে পোস্টার হাতে বাবার সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল ছোট্ট শিশু।

স্কুল সার্ভিস কমিশনকে ওএমআর’র মিরর ইমেজ প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া ব্যবস্থা করা, সরকার তথা এসএসসি-কে দ্রুততার সাথে যোগ্য, অযোগ্যদের তালিকার সার্টিফায়েড কপি ওয়েবসাইট ও সংবাদপত্রে প্রকাশ করার পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া, যোগ্যদের চাকরি সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়ার দায়ভার রাজ্য সরকারকে বহন করার দাবি সহ একাধিক দাবিকে সামনে রেখে বুধবার কোচবিহার শহরে মিছিল ও কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শামিল হল যোগ্য শিক্ষক- শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মী অধিকার মঞ্চ-২০১৬।  এদিন মিছিল করে কোচবিহার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের সামনে আসবার পথে এই চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষা কর্মীদের মিছিলকে বাঁধা দেয় পুলিশ। রাস্তার ওপর ব্যারিকেড দিয়ে রীতিমতো আটকে দেওয়ার চেষ্টা হয় তাদের। কিন্তু এদিন আন্দোলনকারী চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষা কর্মীরা এই ব্যারিকেড ভেঙে চলে আসেন বিদ্যালয় পরিদর্শকের দপ্তরের মূল ফটকের সামনে। এখানে পুলিশের কাছে বাঁধাপ্রাপ্ত হয়ে রাস্তার ওপরই বসে পড়েন তাঁরা।  আন্দোলনে এসে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এক কর্মচ্যুত শিক্ষক। প্রাথমিক সুশ্রুষার পর তাকে টোটোতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কোচবিহার এমজেএন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। অভিযোগ, লাঠি, জল কামান, টিয়ার গ্যাসের সেল সবকিছু নিয়ে প্রশাসন প্রস্তুত থাকলেও, কোন অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা ছিল না প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলে এদিন অভিযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনে এসে গুরুতর অসুস্থ কর্মচ্যুত শিক্ষক।


বুধবার চাকরিহারাদের বিক্ষোভে সংহতি জানিয়ে শিলিগুড়িতে বিক্ষোভ মিছিল সিপিআই(এম)’র। মিছিল শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক থেকে শুরু হয়ে হিলকার্ট রোড হয়ে এয়ারভিউ মোড়ে (মহাত্মা গান্ধী মোড়) শেষ হয়। এরপর এয়ার ভিউ মোড় অবরোধ হয়।
বুধবার দুপুরে উত্তর দিনাজপুর জেলার ডিআই কে ঘেরাও করে বিক্ষোভ জানান চাকরিহারারা।
এদিন জলপাইগুড়িতে পোস্টার হাতে বাবার সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল ছোট্ট শিশুও! বলে আমার বাবা যোগ্য শিক্ষক। বাবার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আর্জি জানায়। এদিন জলপাইগুড়ি ডিআই অফিসের সামনে এই ছবি ধরা পড়ে গণশক্তির চিত্র সাংবাদিকের ক্যামেরায়। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক(মাধ্যমিক)’র অফিসে মিছিল করে গিয়ে চাকরিহারাদের দাবিপত্র পেশ করতে এসে দাবি করেন শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের ওএমআর শিটের মিরর ইমেজ এসএসসিকে প্রকাশ করতে হবে। যোগ্য অযোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীদের দ্রুত সার্টিফায়েড কপি সরবরাহ করতে হবে। এমনকি রাজ্য সরকারকে তাদের চাকুরি সসম্মানে ফিরিয়ে দেওয়ার দায় নিতে হবে। ডিআই অফিসের গেটে ঢুকতে গেলে তাদের গেটের সামনে ব্যারিকেড করে পথ আটকায় বিরাট পুলিশ বাহিনী। দাবির সপক্ষে কোন সদুত্তর না মেলায় চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকারা শহরের অন্যতম প্রবেশদ্বার গোশালা মোরের সামনে জাতীয় সরক অবরোধে সামিল হন। পরে প্রশাসনের অনুরোধে ও মানুষের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে জাতীয় সরক অবরোধ স্থগিত রেখে বাড়ি ফিরে যান তাঁরা। 
এদিন বালুরঘাটে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তা অবরোধ করে ডিআই অফিসে তালা ঝুলিয়ে দিলো সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা। দক্ষিণ দিনাজপুরে রঘুনাথপুরে (মাধ্যমিক) ডিআই অফিস চত্ত্বর রাগে ক্ষোভে আবেগে কেঁদে ফেলেন চাাকরিহারারা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কয়েকশত চাকরি হারানো শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী বুধবার মিছিল করে পৌঁছে যায় ডিআই সেকেন্ডারি অফিসের তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখায়। এদিন বিক্ষোভে এসে চাকুরীহারা শিক্ষক বিশ্বজিৎ প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমি দর্শন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেল পেয়েছি। আমার বাবা দিন মজুর ও মা পরিচারিকার কাজ করে আমার পড়াশোনা চালিয়েছে। আমিও এক দোকানে দিনে কাজ করতাম এবং রাতে চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে চাকরি পেয়েছি। আমার মা, বাবা,স্ত্রী, দশ বছরের মেয়ে নিয়ে আমি এখন দিশাহারা।’’   এদিন চাকরিহারারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আমরা কোন দোষ করিনি। এসএসসি আমাদের পরীক্ষা সহ ইন্টারভিউ নিয়েছে। যারা দোষ করেছে সেটা তারাই বুঝুক আমাদের কেন বলি দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য আমরা চাকরি হারিয়ে ক্রমশ মৃত্যু মুখে এগিয়ে যাচ্ছি।

চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে উত্তাল বিক্ষোভ বীরভূমের সিউড়িতে।

যোগ্য-অযোগ্য তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ওএমআর-এর মিরর ইমেজ গেল কোথায় ? জবাব দিতে হবে এসএসসিকে। মন্ত্রীদের বাঁচিয়ে যোগ্যদের কেন বলি করা হল ? এই সব প্রশ্ন তুলে বহরমপুরে ডিআই অফিস ঘিরে বিক্ষোভ দেখালেন চাকরি হারারা। অফিসের গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হল তালা।  স্পষ্ট বললেন সরকার  যোগ্য, অযোগ্য ফারাক করছে না। অযোগ্যদের সঙ্গে যোগ্যদের মিশিয়ে দিতে চাইছে। বুধবার দুপুরে চাকরি হারানোর প্রতিবাদে বহরমপুরে ডিআই অফিস অভিযানে শামিল হয় যোগ্য শিক্ষক - শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ মুর্শিদাবাদ শাখা। 
এখন আর অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ নয়। যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ পিটিশন দাখিল করা, চাকরিতে বহাল রাখা, বেতন বন্ধ না করা এবং ওএমআরের মিরার ইমেজ প্রকাশ করার দাবি জানিয়ে সারা রাজ্যের সাথে পুরুলিয়াতেও জেলা শিক্ষা দপ্তরে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন সদ্য চাকরিহারা শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষা কর্মীরা।  তালা ঝুলিয়ে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখালেন তারা। ক্ষোভে ফেটে পড়লেন রাজ্য সরকারের ভূমিকার প্রতি তীব্র ধিক্কার জানিয়ে। ঘটনাকে ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায় শিক্ষা ভবনের বাইরে। এদিন চাকরি বাতিল হওয়া শিক্ষক শিক্ষিকারা পুরুলিয়া শহরের জেলা শিক্ষা দপ্তরের মাঠে জমায়েত হন। সেখান থেকে ব্যানার পোস্টার ও ওএমআর সিটের প্রতীক নিয়ে নিয়ে মিছিল করে শিক্ষা ভবনের মূল দরজার সামনে হাজির হন। সেখানে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।  সদ্য চাকরি হারানো শিক্ষক শুভাশিস পান বলেন, ‘‘তারা ডি আই মারফত শিক্ষা দপ্তরের কাছে বার্তা পৌঁছে দিতে চান। ওএমআর শিটের মিরার ইমেজ অতি সত্বর প্রকাশ করে রিভিউ পিটিশন দাখিল করতে হবে, যোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করা, তাদের চাকরি বহাল রাখা, পেমেন্ট বন্ধ না করার দাবি জানান তিনি।’’ তিনি বলেন ,‘‘ যোগ্য হয়েও আজ তারা চাকরি হারা। কোনমতেই তারা ভলেন্টারি সার্ভিস দিতে পারবেন না। মুখ্যমন্ত্রীর সেদিনের সভার আশ্বাসে তারা আশাহত হয়েছেন। তাদের একটাই দাবি তারা যোগ্য তাই কোনোভাবেই তাদের চাকরি কেড়ে নেওয়া চলবে না। নতুন করে এই পদের জন্য  পরীক্ষাও তারা দেবেন না।’’
আরেক শিক্ষিকা মল্লিকা মণ্ডল বলেন,‘‘ সামনে শুধুই অন্ধকার। কোনভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আমরা যোগ্য অথচ আমাদের সঙ্গে চরম অন্যায় করা হলো। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গিয়ে ভেবেছিলাম ললিপপ পাব। কিন্তু তিনি ললিপপের থেকেও আরও বেশি জিনিস ধরালেন। সেটা হলো অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচার থেকে ভলেন্টিয়ার সার্ভিস টিচার।’’ তিনি বলেন ,‘‘আমরা যদি মুখ্যমন্ত্রীকে ভলেন্টিয়ার মুখ্যমন্ত্রী বলি তাহলে কি সেটা তার শুনতে ভালো লাগবে। ন্যায্য চাকরির দাবিতে তারা আন্দোলন করবেন। তাদের দাবি নিয়ে তারা জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) এর সঙ্গে এদিন আলোচনাও করেন।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী একরাশ ধিক্কার জানিয়ে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে উত্তাল বিক্ষোভ বীরভূমের সিউড়িতেও। সদ্য সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে বাতিল হওয়া প্যানেলের জেরে চাকরি খোয়ানো শিক্ষক, শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মীরা বুধবার সিউড়ি শহরে মিছিল সংঘটিত করেন। বাসস্ট্যান্ডে পথ অবরোধের মধ্যে দিয়ে তাদের ক্ষোভ উগড়ে দেন। ক্ষোভের নিশানায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তার পৃষ্ঠপোষকতায় চলা এসএসসি। এদিন চাকরিহারারা পথ অবরোধ করার সাথে সাথে ডিআই অফিসেও তুমুল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। পুলিশের বাধা সরিয়ে অফিস চত্বরে ঢুকে অবস্থান করেছেন। স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। বিক্ষোভ কারীদের মধ্যে বিনয় কর্মকার, নুরুল ইসলামরা একরাশ ক্ষোভ উগড়ে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের স্পষ্ট দাবি ওএমআরের মিরর কপি বের করো, অযোগ্যদের ছেঁটে ফেলে যোগ্যদের চাকরিতে পুনর্বহাল করো। আর এটা এখনও হয় নি একমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর জন্য।’’ মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই আজ তাদের এই পরিণতি বলে দাবি করে সিউড়ি বাসস্যান্ডে টায়ার জ্বালিয়ে তাদের ক্ষোভ, বঞ্চনা উগড়ে দেন বিপর্যস্ত শিক্ষকরা।

Comments :0

Login to leave a comment