PROBANDHA | TAPAN KUMAR BAIRAGYA | NABARATNA O PANCHARATNA | MUKTADHARA | 2025 APRIL 9

প্রবন্ধ | তপন কুমার বৈরাগ্য | নবরত্ন ও পঞ্চরত্ন পাঁচকথা | মুক্তধারা | ২০২৫ এপ্রিল ৯

সাহিত্যের পাতা

PROBANDHA  TAPAN KUMAR BAIRAGYA  NABARATNA O PANCHARATNA  MUKTADHARA  2025 APRIL 9

প্রবন্ধ | মুক্তধারা

নবরত্ন ও পঞ্চরত্ন পাঁচকথা
তপন কুমার বৈরাগ্য

নবরত্ন বলতে নয়জন রত্ন।যারা কোনো না কোনো ক্ষেত্রে
নিজেদের অবদান রেখে গেছেন। একটি বৃত্তাকার পথ।যার একটি
কেন্দ্র থাকবে।সেই কেন্দ্রে থাকবে প্রধান রত্নটি।আর পরিধি
বরাবর পরিভ্রমণ করবে অন্যান্য রত্নগুলো।নবরত্নের কেন্দ্রে
থাকে রুবি।বৃত্তাকার পথে পরিভ্রমণ করে একটি নীলকান্ত
মণি,একটি হীরা,একটি প্রাকৃতিক মুক্তা,লাল প্রবাল,হেসোনাইট,
একটি হলুদ নীলকান্ত মণি,বিড়ালের চোখ,একটি পান্না।
এই নবরত্নের কথা মনে রেখে আমরা মহান রাজা বা সম্রাটদের
রাজসভায় নবরত্নের কথা জানতে পারি।বিক্রমাদিত্য ছিলেন
উজ্জয়িনীর শাসক।তার রাজসভায় ভারত বিখ্যাত শুধু নয়,
পৃথিবী বিখ্যাত রত্নরা বিরাজ করতেন ।এদের কেন্দ্র বিন্দুতে
ছিলেন মহাকবি কালিদাস।অন্যান্য আটজন হলেন আর্যভট্ট,
ধন্বন্তরি, বরাহমিহির,বররুচি,বেতালভট্ট,ক্ষপণক,শঙ্ক, অমরসিংহ।
আর্যভট্ট ছিলেন সেই সময়ের পৃথিবী বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ।ধন্বন্তরি
সকল যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক। আকবর জন্মগ্রহণ করেন ১৫ই
অক্টোবর ১৫৪২খ্রিস্টাব্দে।মারা যান ২৭শে অক্টোবর ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে।আকবর ৬৩বছর বেঁচে ছিলেন।এর মধ্যে তিনি ৫০বছর
রাজত্ব করেন।হমায়ুনের পুত্র আকবর ১৩বছর বয়েসে সিংহাসনে
বসেন।অভিভাবক হিসাবে ছিলেন বৈরাম খাঁ। মুঘল শাসকদের
মধ্যে তিনি ছিলেন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি রাজ্য শাসনে
বসেই জ্ঞানী,গুণী,পন্ডিত ব্যক্তিদের খুব সমাদর করতে লাগলেন।
তার রাজসভায় ৯জন জ্ঞানী,গুণী,কবি সাহিত্যিক, রাজকার্যে
অভিজ্ঞ ব্যক্তি,উপস্থিত বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তিরা বিরাজমান ছিলেন।
এদের কেন্দ্রে ছিলেন পৃথিবী বিখ্যাত সংগীতজ্ঞ তানসেন।
আকবরের রাজসভায় দীপক রাগ গাওয়ার সময় তানসেনের মৃত্যু হয়।
আবুলফজল: আবুলফজল ছিলেন বিখ্যাত ঐতিহাসিক
এবং লেখক ।তিনি আকবরের জীবনী নিয়ে লিখেছিলেন
'আকবরনামা'গ্রন্থটি।
টোডরমল:আকবরের রাজসভায় রাজস্ব বিভাগের একজন
প্রভাবশালী কর্মকর্তা। আকবর রাজস্ব বিভাগের যে কোনো
বিষয়ে তার সাথে পরামর্শ করতেন।
ফয়েজি:তিনি আকবরের দরবারে শ্রেষ্ঠ কবি ও লেখক।
বিভিন্ন ভাষায় তিনি পারদর্শী ছিলেন।
বীরবলঃএকজন রসিক ও জ্ঞানী ব্যক্তি।আকবর যখনি কোনো
সমস্যায় পড়তেন,তিনি একনিমেষে সেইসব সমস্যার সমাধান
করে দিতেন।আকবরের ব্যথিত হৃদয়ে তিনি আনন্দের জোয়ার
এনে দিতেন।
আব্দুর রহিম খান-ই-খানা:ইনি সেইসময়ের একজন খ্যাতিমান
কবি এবং লেখক।আকবর তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন।
ফকির আজিওদ্দিন:সেইসময়ের একজন ধর্মীয় চিন্তাবিদ
ছিলেন।তিনি আকবরকে সুচিন্তিত মতামত দিতেন।
রাজা মানসিংহ: আকবরের  একজন সামরিক এবং রাজনৈতিক
সাহায্যকারী ব্যক্তি ছিলেন।
মোল্লা-দো-পিয়াজা:আকবরের রাজসভায় একজন মহাপন্ডিত
ব্যক্তি এবং মহাজ্ঞানী পুরুষ ছিলেন।
কৃষ্ণনগরের মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজসভায় ছিলেন
নয়জন রত্ন।এদের মধ্যে গোপাল ভাঁড় ছিলেন মধ্যমনি।অসম্ভব
বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন।ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর, তিনি অন্নদামঙ্গল
কাব্য লিখেছিলেন।রায়গুণাকর উপাধি দিয়েছিলেন মহারাজ
কৃষ্ণচন্দ্র রায়।
রামপ্রসাদ সেন শাক্তপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি ছিলেন। তিনি বিদ্যাসুন্দর কাব্য লিখে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়কে উৎসর্গ
করেছিলেন।মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাকে কবিরঞ্জন উপাধি
দেন।অন্যান্য বিদগ্ধ ব্যক্তিরা ছিলেন বানেশ্বর বিদ্যালঙ্কার,
কৃষ্ণধন রায়,রামমোহন গোস্বামী,মধুসূদন ন্যয়নকানন,
মধুসূদন ন্যাশনাল,হরিরাম তর্কসিদ্ধান্ত।প্রতিজনাই সেইসময়কার
এক একজন দিকপাল ছিলেন।
এছাড়া লক্ষণ সেনের রাজসভায় ছিলেন পঞ্চরত্ন। কবি
জয়দেব লক্ষণ সেনের সভাকবি ছিলেন।ইনি গীতগোবিন্দ
কাব্য লেখেন। এছাড়া ছিলেন  গোবর্ধন,মারণ,উমাপতি,
ধোয়ী।
এসকল রাজা,মহারাজা,সম্রাটেরা যোগ্য ব্যক্তিদের স্ব স্ব
আসনে বসিয়ে যথাযথ সম্মান দিয়েছিলেন।তাইতো তারা
চিরকাল স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। 

 

Comments :0

Login to leave a comment