সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বা সিএএ’র বিধি স্থগিত করার আবেদন জানিয়ে নতুন করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল কেরালা সরকার। আবেদনে কেরালা সরকার বলেছে, ‘‘এই নীতি বৈষম্যমূলক এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার পরিপন্থী।’’
কেন্দ্রীয় সরকার ১১ মার্চ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন দেশে চালুর নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে বিজ্ঞপ্তি জারি করে আইন পাশের ৪ বছর পর। এই আইন অনুযায়ী, ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে পরিচয়পত্র ছাড়া পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সী, খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই তালিকায় মুসলিমদের বাদ রাখা হয়েছে। ভারতে নাগরিকত্ব আইনে ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের সংস্থান ছিল না। কেন্দ্রের দ্বিতীয়বার সরকার গড়ার পর ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্বের এই আইন পাশ করেছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার।
সিএএ’র নিয়মগুলিকে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে কেরালা সরকার বলছে, ‘‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেওয়া বৈষম্যমূলক, অন্যায্য এবং সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের পরিপন্থী।’’
আবেদনে কেরালা সরকার বলেছে, ‘‘২০১৯ সালে পাশ হওয়া আইন ২০২৪ সালে এসে লাগু হচ্ছে। এর থেকেই স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় সরকার এই আইনকে গুরুতর মনে করছে না। তাই ২০২৪ সালের সিএএ’র বিধি স্থগিত করা হোক।’’
এর আগে সিএএ’র বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিল কেরালা সরকার। ১৯ মার্চের আবেদনে বলা হয়, ‘‘সিএএ বিধিতে ফাস্টট্র্যাক পদ্ধতিতে কেবলমাত্র বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে আসা অ-মুসলিম মানুষকে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ভারতে রয়েছেন শ্রীলঙ্কা, ভুটান, বার্মার মত প্রতিবেশী দেশগুলির উদ্বাস্তুরা। কোন মাপকাঠিতে এই দুই অংশের উদ্বাস্তুর মধ্যে ফারাক করা হবে? এই সংক্রান্ত কোনও স্বচ্ছতা আইনে নেই।’’
আবেদনে আরও বলা হয়, ‘‘ধর্মীয় পরিচয় এবং এলাকাগত পরিচয়ের ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক পদক্ষেপ। ন্যায় বিচারের প্রতিষ্ঠিত রীতি অনুযায়ী, কোনও আইনের ভিত্তি যদি বৈষম্য হয়, তাহলে তার বৈধতা থাকে না।’’
রবিবার সেই আবেদনের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকটি কথা যুক্ত করা হয়েছে। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, আগামী শুক্রবার সিএএ স্থগিত ও বাতিল করার দাবি জানিয়ে দাখিল হওয়া সমস্ত আবেদনকে এক জায়গায় এনে শুনানি হবে। সেখানে কেরালা সরকারের আবেদনও রয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে আইন পাশ হলেও সরকার বা বাস্তবায়িত করার সাহস দেখাতে পারেনি। আইনের বৈষম্যমূলক দিকগুলির প্রতিবাদে ২০১৯ এবং ২০২০ সালে দেশজোড়া ব্যাপক বিক্ষোভ হয়। তারপর কোভিড অতিমারির প্রকোপে আন্দোলন স্থগিত হয়ে যায়। সরকারও আর আইন নিয়ে এগোয়নি। চলতি মাসের ১১ তারিখ, কেন্দ্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানায়, অবিলম্বে সিএএ লাগু হল।
ইতিমধ্যেই সিএএ’র বিরুদ্ধে অসম সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। কেরালা, তামিলনাডু সহ একাধিক রাজ্যের সরকার জানিয়েছে, তাঁরা সিএএ প্রয়োগ করবে না।
Comments :0