Gangasagar Mela 2024

সাগরে স্নান সেরে বাড়ির পথে দর্শনার্থীরা

রাজ্য

ছবি- রবীন গোলদার

অনিল কুণ্ডু – গঙ্গাসাগর

শীতের ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে সোমবার দিনভর মকর সংক্রান্তির স্নান সারলেন লক্ষাধিক মানুষ। রাতের জোয়ারের জলে পুলিশি বাধায় নামতে না পারায় ভোর রাতে সাগরের জলে ডুব দিলেন যাত্রীরা। মেলা প্রাঙ্গণে, সমুদ্রের ধারে সারা রাত স্নানের অপেক্ষার প্রহর গুনেছেন। রাত প্রায় ৩টে বাজতেই পূণ্যস্নানে জলে নামেন গঙ্গাসাগর মেলায় আসা দর্শনার্থীরা। সব ধর্ম, বর্ণের মানুষ একসঙ্গে ডুব দিলেন সাগরের জলে। ধর্মীয় মানুষের মধ্যে বিভেদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে এটাই ঐতিহ্য, পরম্পরা গঙ্গাসাগর মেলার। একইভাবে নিশ্চিদ্র সুরক্ষা বলয়ে দিনভর চলেছে দুর্ঘটনা বিহীন স্নান পর্ব। গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে নানান ভাষাভাষির লক্ষ লক্ষ মানুষের মহামিলন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে সাগরদ্বীপ। রাজ্য সরকারের তরফে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেছেন, এদিন বিকেল ৩টে পর্যন্ত ১ কোটি তীর্থযাত্রী গঙ্গাসাগর মেলায় এসেছেন। 
এদিকে রবিবার গঙ্গাসাগর মেলায় আসা হরিয়ানার সিরসা’র বাসিন্দা ওম প্রকাশ(৬৮) নামে আরো এক দর্শনার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে মোট ৩ জন দর্শনার্থীর মৃত্যু হয়েছে বলে সোমবার জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে মেলা প্রাঙ্গন থেকে সোমবার উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা রাম সেবক (৬৫) নামে এক যাত্রীকে কলকাতায় এয়ার লিফট করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত সাগরের বিভিন্ন হাসপাতালে ২৩৬ জন ও কলকাতায় বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২জন যাত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 
রবিবার রাত বাড়তেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকেছিল গঙ্গাসাগরের আকাশ। সঙ্গে বাতাস থাকায় তাপমাত্রার পারদ ক্রমশই নামতে থাকে। তীব্র ঠান্ডায়, ঘন কুয়াশার মধ্যেই সারা রাত সমুদ্রের ধারে খোলা আকাশের নীচে আশ্রয় নিয়ে ছিলেন বহু যাত্রী, দর্শনার্থী। কুয়াশার তীব্রতা এতোটাই ছিল যে পাশে থাকা কাউকে চেনা যাচ্ছিল না। সোমবার সকালে কুয়াশা ভেদ করে যখন সূর্যের আলো দেখা যায় তখন ঘড়িতে সময় প্রায় ৮টা। ঘন কুয়াশার কারণে রাতে প্রায় ৬ ঘন্টা নদীতে ভেসেল, লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল। কচুবেড়িয়া থেকে বাস চলাচলও বেশ কিছু সময় বন্ধ ছিল। সকাল ৮ টার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জোয়ারের ঢেউয়ে সমুদ্রের পাড় ভেঙেছে। জল ঢোকায় সমুদ্রের তট বলে কিছু নেই। পুরনো স্নানের ঘাট ভাঙনের ফলে এবারে গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনের ১, ২ ও ৩ নম্বর রাস্তার শেষে সমুদ্রে স্নানের ঘাট বন্ধ রাখা হয়েছে। এবারে ১ এ, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর রাস্তার শেষে সমুদ্রে দর্শনার্থীদের স্নানের ব্যবস্থা করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। স্নানের সময় দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সিভিল ডিফেন্স’র স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষা বলয়ের মাধ্যমে কড়া নজরদারির ব্যবস্থা ছিল। সমু্দ্রে ছিল উপকূল রক্ষী বাহিনীর স্পিড বোটে টহলদারি। এদিন বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, কাকদ্বীপের লট এইটে, নামখানা পয়েন্টে বহু যাত্রী রয়েছেন। রাতেই গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে তাঁরা পৌঁছবেন। 
গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গন এযেনো চিরাচরিত এক গোলক ধাধা। মেলায় বহু মানুষের সমাগম। ভীড়ের মধ্যে বহু যাত্রী দলছুট হয়েছেন। সঙ্গী ছাড়া হয়েছেন। পুলিশ, মেলা প্রাঙ্গনে থাকা স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় তাঁরা পৌঁছেছেন সূচনা কেন্দ্রে। এদিন বিকাল পর্যন্ত ১২,৮৭৩ জন দর্শনার্থী তাঁদের পরিজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। এর মধ্যে মেলাতেই ১২, ৮১৭ জনকে তাঁদের পরিবার পরিজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ভীড়ের মধ্যে কেপমারির ঘটনাও ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসনের দেওয়া তথ্যানুযায়ী ৩১৪ টি কেপমারির ঘটনা ঘটে। ৭৫২ জনকে কেপমারিসহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মেলায় আসা যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসাসহ বিভিন্ন পরিষেবায় এবারেও ১৪০টি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। স্নানপর্ব সেরে নির্বিঘ্নে ঘরমুখী হতে শুরু করেছেন দর্শনার্থীরা।

Comments :0

Login to leave a comment