জয়ন্ত সাহা- সিকিম
গত তিন-চারদিন ধরে লাগাতার বর্ষণ চলছে সিকিমে। প্রবল বর্ষণে সিকিমের একাধিক জায়গায় ধস নামে। বিপর্যস্ত সিকিম। শুক্রবারও ধস অব্যাহত। ফুঁসছে তিস্তা নদী। পাহাড়ি রাস্তায় একের পর এক ধস নামতে শুরু করেছে। পাশাপাশি চলছে উদ্ধার কাজ। তবে সিকিম সরকার সূত্রে আশ্বস্থ করে জানানো হয়েছে মূলত লাচুং জেলা সিকিম থেকে এই মুহুর্তে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সেনাবাহিনী জোর তৎপরতার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করছে। আবহাওয়ার কারণে কিছুটা ধীর গতিতে চলছে উদ্ধার কাজ। ফের ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে সিকিমে।
এদিকে সিকিম সরকারের টুরিজিম এবং সিভিল এভিটেশন দপ্তরের থেকে শুক্রবার একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়েছে সিকিমে ধসের জেরে লাচুং জেলা সিকিম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। সিকিমের বাকি জেলাগুলি পুরোপুরি সুরক্ষিত রয়েছে। শুধু মাত্র লাচুং জেলাতেই মোট ১২০০ ভারতীয় পর্যটক এবং ১৫ জন বিদেশি পর্যটক সিকিমে আটকে রয়েছেন। ১৫ জনের মধ্যে থাইল্যান্ডের ২ জন, নেপালের ৩ জন এবং বাংলাদেশের ১০ জন পর্যটক রয়েছেন। এরা প্রত্যেকেই লাচুংয়ের মানগাও জেলায় ধস নামার কারণে আটকে রয়েছেন। মোবাইল নেটওয়ার্ক বসে যাওয়ায় যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন।
এদিন সকালে নতুন করে ধস নামার ঘটনা ঘটেছে উত্তর ও দক্ষিণ সিকিমে। টুং, দক্ষিণ সিকিমের লিঙ্গসে, লিঙ্গে ও পাইয়ংয়ের মূল রাস্তা এবং কাওখোলা ও সুন্তালে এলাকাতেও ধস নামে। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে পর্যটকেরা প্রত্যেকেই নিরাপদে রয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের থাকা খাওয়া চিকিৎসার সব রকম ব্যবস্থা করেছে। উদ্বেগের কোন কারণ নেই। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের অনুরোধ করা হয়েছে ধস সরিয়ে রাস্তা স্বাভাবিক হবার আগে কেউ যেন এই এলাকা থেকে সমতলে নামার চেষ্টা না করেন। পর্যটকদেরকে আস্বস্থ করা হয়েছে পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। চিন্তার কোন কারণ নেই। ইতিমধ্যে সিকিম সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে ভারত সরকারের সাথে যোগাযোগ করে আকাশ পথে নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছোনোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরি আটকে থাকা পর্যটকেরা বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে প্রশাসনের তরফে পর্যটকদেরকে আস্বস্থ করা হয়েছে। সম্ভব হলে সড়ক পথেও ফেরানো হবে আটকে থাকা পর্যটকদের।
এদিকে বাড়ছে তিস্তার জল, যানবাহন বাহন চলাচলে প্রশাসন একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তিস্তার অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে বহু পর্যটক তিস্তা নদীর পাড়ে শুধুমাত্র তিস্তা নদীকে দেখতে ছুটে আসেন। সেই তিস্তাই বর্তমানে হয়ে উঠেছে ভয়াল ভয়ঙ্করী। বর্ষা আসলেই তিস্তা ভয়ংকর রূপ ধারণ করে থাকে। তবে গত বছর থেকেই সেই ভয়ংকর রূপ হয়ে উঠেছে আরো ভয়ংকরী। যা দেখে শিউরে উঠতে হয়। আর এই তিস্তাই এখন বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে পাহাড়বাসীদের কাছে।
পাহাড়ের মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করে চলেছে তিস্তা। মূলত সিকিম ও কালিম্পংকে ক্রমাগত নাস্তানাবুদ করে চলছে এই ভয়ংকরী তিস্তা। যেন কোন বিরাম নেই। ভয়ঙ্কর গর্জনে বয়ে চলেছে ভয়ংকরী তিস্তা। দুকুল প্লাবিত করার ধারা অব্যাহত। এবারও সিকিম ও কালিম্পং এ প্রবল বর্ষণে তিস্তা হয়ে উঠেছে ভয়াল ভয়ংকরী। তিস্তা নদীর জল স্তর বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে তিস্তা বাজার, মল্লি ,রম্বি গেইলখোলা, ২৯মাইল সহ বিভিন্ন এলাকা। স্থানীয় এলাকাবাসীরা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। তিস্তার গ্রাসে সড়ক পথ থেকে শুরু করে মানুষের বসবাসের বাড়ি সবটাই তিস্তা গর্ভে বিলীন হয়ে চলেছ। তিস্তার আতঙ্কে বহু মানুষ ঘর ছাড়া। বন্ধ বহু সড়ক পথ। সড়ক পথের পরিস্থিতি দেখে বেশ কিছু এলাকায় যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কালিম্পং প্রশাসন। জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ক্রান্তি এলাকার অসংরক্ষিত এলাকায় মাইক যোগে সচেতন করা হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। মাইকিং করে তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার বার্তা দেওয়া হচ্ছে। কারণ তিস্তার আবারও জল ছাড়া হলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিপদ এড়াতে ছোট যানবাহন বাদ দিয়ে বড় গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। যদিও এই নির্দেশিকা অল্প কয়েক দিনের জন্য বলে জানিয়েছেন কালিম্পং জেলাশাসক বালাসুব্রমুনিয়াম। তিনি আরো জানান, বর্তমানে তিস্তা ভয়ঙ্কর গতিতে প্লাবিত হচ্ছে। সিকিমে কোনো বাঁধ না থাকায় বৃষ্টির জল সরাসরি তিস্তা হয়ে এরাজ্য প্রবেশ করছে। যার দরুন অল্প বৃষ্টিতে তিস্তার জল দ্রুত বেড়ে উঠছে। সেই কারণে যানবাহনের ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিষেধাজ্ঞা আনা হয়েছে। কিছু যানবাহনকে ঘুর পথে লাভা, গরুবাথান হয়ে শিলিগুড়ি যাওয়া আসার কথা বলা হয়েছে।
Comments :0