Police camp in library

বন্ধ পাঠাগারে তৈরি হলো পুলিশ ক্যাম্প

রাজ্য জেলা

নন্দীগ্রামের গাংড়া দেশপ্রাণ পাঠাগাড়ের পরিচিতি বদলেছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এবার থেকে তার পরিচিতি হয়েছে ‘পুলিশ ক্যাম্প’। একটা সময় যেখানে বোর্ডে লেখা থাকতো ‘কথা বলবেন না’, সেখানে শোনা যাচ্ছে ভারি বুটের আওয়াজ।
ঠিক গ্রামের লাইব্রেরি আর নেই। একমাত্র সরকারি পোষিত লাইব্রেরিকে তুলে দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেখানে তৈরি করা হয়েছে পুলিশ ক্যাম্প।
জেলা প্রশাসনের যুক্তি এলাকার আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এই পুলিশ ক্যাম্প। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি এই পুলিশ ক্যাম্প ২০০৮ সাল থেকে। অর্থাৎ নন্দীগ্রাম ষড়যন্ত্রের সময়। তৎকালিন সরকার কিন্তু লাইব্রেরি বন্ধ করে পুলিশ ক্যাম্প করেনি। অন্যত্র করা হয়েছিল ক্যাম্প।
সোনাচুড়া বাজারের কাছে এই লাইব্রেরি। বহু মুল্যবান বই এলাকার এই সরকারি লাইব্রেরিতে আছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। চন্দ্রকান্ত পাইকের কথায় শুকিয়ে মারা হয়েছে এই লাইব্রেরিকে। 
কি ভাবে?
তিনি বলেন, ‘‘একজন লাইব্রেরিয়ান এবং একজন ক্লার্ক ছিলেন। নিয়মিত লাইব্রেরি খোলা হতো। এলাকার বহু মানুষ যেতেন সেখানে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে লাইব্রেরিয়ান এবং ক্লার্ক দুজনেই চাকরি থেকে অবসর নেয়। ব্যাস তারপর থেকে আর কেউ এখানে কাজ করতে আসেননি। সরকারের পক্ষ থেকেও কোন নিয়োগ হয়নি। তারপর থেকে বন্ধ থেকেছে লাইব্রেরি। বই নষ্ট হয়েছে। এখন এখানে পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে।’’
তার কথায়, ‘‘পুলিশ ক্যাম্প করার তো অনেক জায়গা ছিল সেখানে তো করতে পারতো, এখানে কেন? লাইব্রেরিটা তো নতুন ভাবে শুরুও করা যেতো।’’
ওই লাইব্রেরির প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান আনন্দ মণ্ডলের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের সময় এই লাইব্রেরি তৈরি হয়। সেই সরকারের সময় ভালো চলতো লাইব্রেরি। নিয়মিত টাকা আসতো। বই কেনা হতো। লোকজন আসতেন। কিন্তু হঠাৎ করে এই সরকার কেন এই লাইব্রেরি বন্ধ করার কথা ভাবলো তা বুঝতে পারছি না।’’ 
আনন্দ মণ্ডল আরও বলেন, ‘‘শুধু এই একটা নাকি, আশপাশের অনেক লাইব্রেরি এই ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ ক্যাম্প হয়নি, কিন্তু বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন তুলে দেওয়া হবে?’’
২০১৭ সালে তিনি অবসর নেওয়ার পর আর কোন নতুন লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ না হওয়ার কথাও শোনা যায় তার মুখে।
যেই এলাকায় এই লাইব্রেরি বন্ধ হয়েছে সেখানকার বিধায়ক বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারি। স্থানীয়দের কথায় শুভেন্দু অধিকারি তৃণমূলের বিধায়ক থাকার সময়ও কোন চেষ্টা করেনি লাইব্রেরি বাঁচানোর এখনও করেন না।
পশ্চিমবঙ্গে সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে ১৩টি, ২৪৬৭টি সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সাধারণ গ্রন্থাগার রয়েছে। ১৩টি সরকারি গ্রন্থাগারের অনুমোদিত ১৬৪টি পদের মধ্যে ৮০টি শূন্যপদ। ২৪৬৭টি সরকার পোষিত ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সাধারণ গ্রন্থাগারের অনুমোদিত ৫৫২০টি পদের মধ্যে ৪২০০টি শূন্যপদ। সরকারি সূত্রে বিভিন্ন জেলাগুলিতে কর্মীর অভাবে ৩৯২টি বন্ধ গ্রন্থাগারের কথা বলা হলেও যেভাবে প্রতিদিন কর্মীদের অবসরের সঙ্গে সঙ্গে শূন্যপদ তৈরি হচ্ছে তাতে প্রায় ৮৫ শতাংশ শূন্যপদ। বাস্তবে ১৩০০ গ্রন্থাগার বন্ধ। 
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটকে সামনে রেখে ৭৩৮টি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কোনও নিয়োগই হয়নি।

Comments :0

Login to leave a comment