MD SALIM

বিজেপি জিতলে উঠে যাবে লোকসভা,বিধানসভা, মুর্শিদাবাদে বললেন সেলিম

রাজ্য

CPIM TMC BJP AIKS WEST BENGAL PANCHAYAT ELECTION WEST BENGAL POLITICS 2023 BENGALI NEWS

অনির্বাণ দে 

 

২০২৪ সালের নির্বাচন সাধারণ কোনও নির্বাচন নয়। এটা অসাধারণ নির্বাচন। বিজেপি বলছে এক দেশ এক ভোট। কিন্তু ওরা যেটা বলছে না সেটা হলো, এই ভোট শেষ ভোট। আগামী দিনে মানুষ ভোট দিতে পারবেন কিনা, লোকসভা বিধানসভা থাকবে কিনা, জন প্রতিনিধি থাকবে কিনা সেটা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাবে এবারে বিজেপি জিতলে। নতুন সংসদ ভবন তৈরি হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও আলোচনা হয় না। আলোচনা ছাড়াই বিল পাশ হয়ে আইন তৈরি হয়ে যাচ্ছে, বাজেট পাশ হয়ে যাচ্ছে। 

রবিবার মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার স্বপনগড় মোড়ের জনসভা থেকে এমনটাই বললেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। এদিন সভায় সেলিম ছাড়াও সিপিআই(এম) মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা সহ জেলার অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। 

সেলিম বলেন, ‘‘যখন এই ভাবে লোকসভা চলে, তখন সড়কে নামতে হয়। কৃষকদের মারার জন্য ও আম্বানি আদানির সুবিধা করে দিতে ৩টি কৃষি বিল নিয়ে এসেছিল। তার বিরুদ্ধে হরিয়ানা, দিল্লি, পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশে কৃষকরা এখনও লড়ে যাচ্ছেন। কৃষক কেন ফসলের দাম পাবেন না? কেন ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থাকবে না? কেন সারের দামে ভর্তুকি দেওয়া হবে না? বামপন্থীরা সংসদে না গেলে এই প্রশ্ন কেউ তুলবে না।’’

সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘আমরা ইডি সিবিআই’কে বলেছি, জ্যোতিপ্রিয়, পার্থ, অনুব্রতকে গ্রেপ্তার করলেই হবে না। কালীঘাটের টালির চালার নীচে কত টাকা আছে সেটাও খুঁজে বের করতে হবে। তখন বিজেপি বলছে, জ্ঞানবাপী মসজিদের নিচে, তাজমহলের নিচে কি রয়েছে সেটা খুঁড়ে দেখতে হবে। আমরা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি, তখন বিজেপি হিন্দু মুসলিমের জিগির তুলে মানুষের ঐক্য নষ্ট করার চেষ্টা করছে।’’

সেলিম এদিন বলেছেন, ‘‘মানুষের হকের দাবিতে নবান্ন অভিযানে মইদুল ইসলাম মিদ্দ্যা খুন হল, আনিস খান খুন হল, ছাত্রদের দাবিতে সুদীপ্ত গুপ্ত খুন হল। মানুষ এর জবাব চাইতে গেলে তৃণমূলের পুলিশ বলল কোনও কথা শুনব না।  তখন বিজেপি এসে বলল, নবান্নকে জবাব দিতে পারবে একমাত্র ছাপ্পান্ন। আসলে কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর ছাতি ছাপ্পান্ন ইঞ্চির নয়। কিন্তু বিজ্ঞাপনের জোরে মিথ্যাকে সত্যি প্রমাণ করা হয়েছে।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলেছিলাম ১০ মার্চ রাজ্যের ১০ জায়গায় সভা করব। কিন্তু আমরা ১৪ জায়গায় সভা করছি। এবার আপনাদের কাজ আলপথ পেরিয়ে, সাঁকো পেরিয়ে রাজ্যের সমস্ত গ্রাম, বুথে লালঝান্ডার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। যাঁরা আমাদের থেকে একটু নড়ে গিয়েছিল, একটু সরে গিয়েছিল, আমাদের কোনও আচরণে অভিমান করেছিলেন,  সেই সমস্ত মানুষকে গত ১ বছর ধরে আমরা আবার এক জায়গায় নিয়ে এসেছি।’’

সেলিম এদিন বলেন, ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষকে নিয়ে ইনসাফ সভা হয়েছে। এটা মমতা ব্যানার্জির ফ্যাশন প্যারেডের র‌্যাম্প শো নয়। কোটি কোটি টাকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া ডিমভাতের আয়োজন নয়। মানুষ নিজের পয়সায়, নিজের জোগাড় করা রসদে ভর করে ৫০ দিন ধরে হেঁটেছেন, তারপর সফল করেছেন ব্রিগেড সমাবেশ। মুর্শিদাবাদে সবথেকে বেশিদিন ছিল ইনসাফ যাত্রা। মানুষ সেই যাত্রাকে সমর্থন করেছিলেন।’’

পরিযায়ী সঙ্কট নিয়ে সেলিম বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদের ছেলেরা কি পরিযায়ী শ্রমিক হওয়ার জন্য জন্মেছে? আমাদের ঘরের ছেলেরা কি শুধুই কাশ্মীরে পাহাড়ের উপরে উঠে তার টানা, কেরলে টাওয়ারের উপরে উঠে তার টানবে, সিকিম, মেঘালয়ে গিয়ে ব্রিজ বানাবে? আর সেইখানে কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় কিংবা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লাশ হয়ে ঘরে ফিরবে?’’

এর সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘বাংলার ছেলেরা এইজন্য জন্মায় নি। তাঁদের লাশ আমরা দেখতে চাইনা। আমরা চেয়েছিলাম রাজ্যের ছেলে মেয়েদের শিক্ষা, দক্ষতা বাড়িয়ে এই বাংলাকে নতুন করে গড়ে তুলতে। এখানেই যাতে তাঁরা উপযুক্ত পারিশ্রমিকে কাজ পায়।’’

সেলিম জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই মাটিতে রক্ত  দিয়ে সেচ দিয়েছেন। অধিকার আদায় করেছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা ঐক্যের মিনার গড়ব। বাংলার মানুষ এককাট্টা হলে বাংলা গোটা দেশকে পথ দেখাবে। মুর্শিদাবাদের লড়াই থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেশের স্বাধীনতা কেড়েছিল। আমরা সেই মুর্শিদাবাদ থেকে শপথ নিচ্ছি, ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানির বিরুদ্ধে স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই আমরা লড়ব। এবং গোটা দেশে সেই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment