Editorial

নিয়ন্ত্রণে নেই দমনে সক্রিয়

সম্পাদকীয় বিভাগ

দিল্লিতে দূষণের প্রাবল্য যত বাড়ছে দিল্লিবাসীর যন্ত্রণা তত প্রকট হচ্ছে। শ্বাসকষ্ট থেকে শুরু করে নানা ধরনের উপসর্গ মানুষের মনে ভীতি ও আতঙ্ক তৈরি করছে। এইভাবে চলতে থাকলে দিল্লি সত্যিই মানুষের বাসযোগ্য থাকবে কিনা তাই জোরালো চর্চা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি বাড়ছে অজানা আশঙ্কা। এই অবস্থায় মানুষের মনে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দানাবাঁধা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নানা আঙ্গিকে ঘটাও স্বাভাবিক। বাস্তবে সেটা ঘটছেও। দিল্লির অধিবাসীরা বেশ কিছুদিন ধরেই নানা পরিবেশ সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ করছেন। মিছিল হচ্ছে, বিক্ষোভ হচ্ছে, অবস্থান হচ্ছে। জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ নিয়মিত যে দূষণ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তাতে দূষণ সূচক শুধু বিপজ্জনক স্তরেই থাকছে না বেশিরভাগ জায়গায় তা অতি বিপজ্জনক। দিল্লিতে এখন সকাল ও বিকেলে এমনকি দুপুরেও সূর্য দেখা যায় না। ঘন কুয়াশা ও ধোঁয়াশায় অন্ধকার হয়ে থাকে। এই অবস্থায় রাস্তাঘাটে চলাফেরা, স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সচল রাখা কঠিন। বয়স্ক মানুষ এবং ছোটদের পক্ষে এই বিষাক্ত বাতাস ধীরে ধীরে মৃত্যুকে এগিয়ে আনার কাজ করে যাচ্ছে নীরবে।
এমন এক অসহনীয়, বিষাক্ত এবং উদ্বেগের পরিস্থিতি মানুষ রাস্তায় নামছেন নির্মল বাতাসে স্বাভাবিক শ্বাস নেবার দাবিতে। দিল্লিতে ত্রিপল ইঞ্জিনের সরকার চলা সত্ত্বেও মানুষের বেঁচে থাকার এই অপরিহার্য দাবিটি পূরণের ন্যূনতম কোনও দায় নেই। দিনের পর দিন, বছরের পর বছর এই অসহনীয় পরিস্থিতি চলছে। কোনও গুরুত্ব নেই সরকারের। উলটে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করে নির্মল বাতাস দিল্লিবাসীকে উপহার দেবার বদলে পরিবেশকর্মী ও সাধারণ প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন নামিয়ে আনছে। মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেবার দাবি জানিয়ে মিছিল করার অপরাধে সাধারণ মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অমিত শাহ’র বীর পুঙ্গব পুলিশ। বেপরোয়া লাঠি চালিয়ে মানুষের প্রতিবাদী কণ্ঠ থামিয়ে দেবার চেষ্টা। এমনকি ভয়ানক হিংস্র হয়ে ওঠা পুলিশ জনৈক প্রতিবাদীকে মাটিতে ফেলে বুকের উপর হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রাখতে দেখা গেছে। আর একজন হাত দিয়ে মাথা চাপছে মাটিতে। এরপরও যাতে নড়াচড়া করতে না পারে অন্যরা টেনে রেখেছে হাত। দেখলে শিউরে উঠতে হয়। গণতান্ত্রিক দেশে প্রতিবাদীদের উপর পুলিশের এমন আচরণ স্বৈরাচারেরই নমুনা।
প্রতিবাদীদের উপর প্রবল উৎসাহে নির্যাতন চালালেও দূষণ সঙ্কটের সমাধানে সরকার কার্যত নীরব। রাস্তায় জল ছড়ানো, দূষণ মাপার যন্ত্রের আশেপাশে স্প্রে করা ইত্যাদি প্রসাধনী কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছে। লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়‌ করে কৃত্রিম বৃষ্টির চেষ্টা মাঠে মারা গেছে। আসল কাজ, যা করলে দূষণ সৃষ্টির পথ বন্ধ হতে পারে তা কিন্তু করা হচ্ছে না। দূষণ তৈরির সবরকমের রাস্তা খোলা রেখে উপর উপর কিছু লোক দেখানো পদক্ষেপ করে লোক ভোলানোর চেষ্টা হচ্ছে। অনেকটা মলম লাগানোর মতো।

Comments :0

Login to leave a comment