Salim Malda

ভোট লুঠ আটকাবেন মানুষ : সেলিম

রাজ্য

ফাইল চিত্র

উৎপল মজুমদার, মালদা

‘‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে কোন নির্বাচনের মুখোমুখি হতে চায়নি বিজেপি এবং তৃণমূল। তাই পঞ্চায়েত নির্বাচন যাতে না হব তার জন্য দুই দল চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু আমরা বলেছিলাম ভোট হোক। মানুষ চোরেরদের হারিয়ে নিজেদের পঞ্চায়েত গঠন করবেন। আর ভোট লুঠ পুলিশ না আটকালে মানুষ আটকাবে। এবার পাহারায় পাবলিক।’’ বুধবার মালদায় সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বললেন মহম্মদ সেলিম।

সেলিম আরও বলেন, ‘‘তৃণমূলের তলার স্তরে অনেকে আছেন যারা বিজেপি। আবার বিজেপির তলার স্তরে অনেকে আছে যারা তৃণমূল। আমাদের লড়াই এই দুই দলের বিরুদ্ধে।’’


তিনি বলেন, ‘‘ভোট ঘোষণার পর থেকে মানুষ খুন হচ্ছে। চোপড়ায় মনসুর আলাম খুন হলো, ডিজি বলছে দুই একটা ঘটনা ঘটেছে। নির্বাচন কমিশনও তাই বলছে। আসলে এদের ব্লুটুথের মাধ্যমে কালিঘাট থেকে যা বলে দেওয়া হচ্ছে তাই আওড়াচ্ছে। পুলিশের যদি সাহস থাকে তাহলে বিবৃতি দিয়ে জানাক ভোট শান্তিপূর্ণ হবে। সব বেআইনি অস্ত্র তারা উদ্ধার করবে।’’
এদিন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘কোন রকম প্রস্তুতি ছাড়াই পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। বিডিও অফিসে কাগজ আসেনি, টেবিল বসেনি, ডিসিআর আসেনি। কিন্তু ভোট ঘোষণা হয়ে গেলো।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের অয়েবসাইটে এখনও পর্যন্ত মনোনয়নের সব তথ্য পুরোপুরি তোলা হয়নি।’’ তাঁর অভিযোগ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল মনোনয়ন জমা করেছে। উল্লেখ্য মহম্মদ সেলিম কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলনে এই অভিযোগ প্রথম করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, যেই যেই তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যে নেই তাদের মনোনয়ন জমা পড়েছে। তিনি আরও বলেছিলেন যে, বিদেশে প্রার্থী অথচ তার মনোনয়ন জমা পড়েছে। সেলিমের সেই অভিযোগ যে সত্য প্রমানিত। কয়েকদিন পূর্বে মীনাক্ষায় তৃণমূল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছে হাই কোর্ট। অভিযোগ তিনি হজে থাকা সত্ত্বেও তার মনোনয়ন জমা পড়েছে। 


রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে বিভিন্ন জায়গায় শাসক দলের সন্ত্রাসের ছবি দেখা গিয়েছে। খুন হয়েছেন সিপিআই(এম), কংগ্রেস, আইএসএফ কর্মী। গোষ্ঠী দ্বন্দের কারণে তৃণমূল কর্মীও খুন হয়েছেন। এই প্রসঙ্গে টেনে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘রাজ্যে ১০ শতাংশ ব্লকে পুলিশের সাহায্য নিয়ে তৃণমূল বিরোধীদের মনোনয়ন জমা দেওয়া আটকাতে চেয়েছিল। কিন্তু মানুষের জেদের কাছে তারা মাথানত করতে বাধ্য হয়।’’


বিজেপি নিজেদের রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বলে দাবি করলেও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের সাথে মুখোমুখি লড়াইতে তারা অনেকটাই পিছিয়ে। সেই জায়গায় মনোনয়ন থেকে শুরু করে প্রচার পর্বে শাসক দলকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে টেক্কা দিচ্ছে বামফ্রন্ট এবং তার সহযোগীরা। আর সেই কারণে শাসক দলের কথা অনুযায়ী মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে বামফ্রন্ট, আইএসএফ এবংকংগ্রেস কর্মীদের। বুধবার সেলিম বলেন, ‘‘প্রচার পর্ব থেকেই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে বামফ্রন্ট এবং তার সহযোগীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। প্রচার, নির্বাচন যাতে ব্যাহত হয় তাই তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। প্রার্থী, তার পরিবারের সদস্য, বুথ কর্মী, বুথ এজেন্ট তাদের মিথ্যা মামলায় আটকে রাখা হচ্ছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আগে তৃণমূল বিরোধীদের ঘর ছাড়া করতো। এখন তা করতে পারছে না। তাই মিথ্যা মামলা দেওয়াচ্ছে পুলিশকে দিয়ে।’’


সেলিমের কথায়, ‘‘দুর্নীতি এবং দুষ্কৃতিতন্ত্র একসাথে চলছে। বিজেপি এবং তৃণমূল একসাথে লুঠ চালাচ্ছে। তাই তারা মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে।’’ মণিপুরের পরিস্থিতির উদাহরন টেনে তিন বলেন, ‘‘মণিপুরের মতো উত্তরবঙ্গের মানুষের মধ্যে ভাগ করতে চাইছে বিজেপি। তাই তারা রাজবংশী, আদিবাসী, গোরখা এই সব সম্প্রদায়ের মধ্যে মানুষকে ভাগ করছে। মণিপুরেও একই কাজ করেছিল। আর মানুষ যখন নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছে তখন তাদের মধ্যে ঝামেলা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’


এদিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে শুভেন্দু অধিকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই শুভেন্দু তৃণমূলের হয়ে ভোট লুঠ করেছিল মালদা, মুর্শিদাবাদে। টাকার বিনিময় জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতির আসন বিক্রি করেছিল। সেই শুভেন্দু আজ বিজেপিতে গিয়ে বড় বড় কথা বলছে।’’ 

Comments :0

Login to leave a comment