UP EXAM CANCELLATION

ফের উত্তর প্রদেশে বাতিল চাকরির পরীক্ষা, অবসাদে আত্মঘাতী তরুণী

জাতীয়

 চাকরির পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় নিজের সরকারের গাফিলতি ঢাকতে হুটপাট পরীক্ষাই বাতিল করে দিচ্ছেন আদিত্যনাথ। রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) দুই পদের নিয়োগ পরীক্ষা শনিবার আচমকাই বাতিল ঘোষণা করেছেন তিনি। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফিরোজাবাদের বাইশ বছরের তরুণী বর্ষা মানসিক অবসাদে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করেন। রবিবার সকালে ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে। নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ভারতে এমন নির্মম মৃত্যু প্রথম নয়। যোগীরাজ্যের কনৌজেই ক’দিন আগে বেকার যুবক ব্রিজেশ পাল গলায় দড়ি দেন। ‘ডিগ্রির মূল্য কী, যদি চাকরিই না পাই’— তাঁর সুইসাইড নোটে লেখা ছিল। বর্ষার ঘর থেকে পাওয়া কাগজেও সরকারি চাকরি না পাওয়ার হতাশা কীভাবে তিলে তিলে তাঁকে শেষ করে দিয়েছে, সেকথা লেখা। দেশের অর্থনীতির অবনমন, বেকারত্ব সবেতেই নেহরুর ঘাড়ে দোষ চাপানো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অবশ্য এসবে নজর দেওয়ার সময় নেই। যুবদের ধোঁকা দিয়ে মোদী বুঝে গিয়েছেন, বাস্তব পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে ভোট হলে মুখ পুড়বে। তাই চেনা হাতিয়ার, ধর্মের নামে জিগির তোলো। সেই একই কায়দায় এবারের নির্বাচনী-যুদ্ধেও জিততে চাওয়া মোদী চেঁচিয়ে যাচ্ছেন, ‘আব কি বার, চারশো পার’। 
ব্রিজেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাসের সেই পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যায়। তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখালে চাকরিপ্রার্থীদের লাঠিপেটা করে বিজেপি সরকারের পুলিশ। মাত্র ৬০ হাজার পদে পরীক্ষা দিয়েছিলেন ৫০ লক্ষ যুবক-যুবতী। বর্ষাও সেই পরীক্ষা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি বসেছিলেন পিএসসি’র রিভিউ অফিসার (আরও) এবং সহকারী রিভিউ অফিসার (এআরও) পদে। এই পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস হয়ে যায়। বিজেপি’র অন্যতম ‘মুখ’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ কী ব্যবস্থা নিলেন? পরীক্ষাটাই বাতিল করে দিলেন এবং জানালেন, ছ’সপ্তাহ পর ফের পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু গত মাসের ১১ তারিখ মাত্র ৪১১টি পদের জন্য যে ১০ লক্ষেরও বেশি যুব এই পরীক্ষা দিয়েছিলেন তাঁদের কী মানসিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, তা একবারও তিনি ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করলেন? 
দেশে বেকারত্ব কী চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা একটি মাত্র রাজ্যে চাকরির জন্য এই হাহাকারেই স্পষ্ট। তবে শুধু উত্তর প্রদেশই নয়, বিজেপি শাসিত আরেক রাজ্য মহারাষ্ট্রের পুনেতে সম্প্রতি তিন হাজার ইঞ্জিনিয়ার একটি চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দিয়েছেন। মুম্বাইয়ে কাতার এয়ারওয়েজে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখে দলে দলে ছেলেমেয়ে সিভি জমা করেছেন। হায়দরাবাদেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। সরকারি চাকরির পাশাপাশিই প্রচুর সংখ্যক যুবক-যুবতী বেসরকারি ক্ষেত্রেও পরীক্ষা দিয়ে চলেছেন। এই যুবসমাজকেই চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে প্রথম ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী। দু’দফায় প্রধানমন্ত্রিত্ব সামলে লক্ষ-লক্ষ কোটি খরচ করে নিজে বিদেশ ভ্রমণ করছেন, মন্দির বানাচ্ছেন আর বেকারত্বের রেখচিত্র ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। 
মেয়ের দেহ সামনে নিয়ে বসে এদিন বর্ষার মা-বাবা বলেন, ‘‘একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছিল ও। কেরিয়ার নিয়ে ভয়ে-দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছিল। প্রথমে কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষা বাতিল হয়ে গেল এবং পরে এই পরীক্ষাও বাতিল করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হতাশ হয়ে পড়েছিল খবর শুনেই।’’ বর্ষা এসএসসি পরীক্ষার জন্যও প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। যোগীর পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু বর্ষা, ব্রিজেশ, হেমিল অশ্বিনভাইদের মতো যে তরতাজা প্রাণগুলি অকালে হারিয়ে যাচ্ছে, তা আটকাতে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কী? দেশে চাকরি না পেয়ে হেমিল রাশিয়া চলে যান। সেদেশের সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে প্রাণ যায় তাঁর। গাজায় ইজরায়েলের অবিরাম বোমাবর্ষণ, লক্ষ-লক্ষ মৃত্যুও এদেশের শিক্ষিত যুবদের আটকাতে পারছে না প্যালেস্তাইনে যাওয়া থেকে। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা বলতে বাধ্য হচ্ছেন, খেতে না পেয়ে মরার চেয়ে যুদ্ধে মরা ভালো। প্যালেস্তাইনে তাঁদের কেউ বিদ্যুৎকর্মী, কেউ নির্মাণ শ্রমিক, কেউ আবার কলের মিস্ত্রি। প্রতিদিন দেশের কোনও না কোনও রাজ্যে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে আর হাসির খোরাক বানানো হচ্ছে বেকার যুবক-যুবতীদের। রাজস্থান, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ সহ বিভিন্ন রাজ্যের হালই এক। 
‘পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’ (পিএলএফএস)-র রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, পঁচিশ বছরের কম বয়সি ৪২.৩ শতাংশ স্নাতক এখনও কর্মহীন। ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে দেশে বেকারত্ব ৪৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গিয়েছিল। এখন বেকারত্বের হার তুলনামূলক কমলেও, তার কারণ স্পষ্ট। সমীক্ষা থেকেই জানা গিয়েছে, কাজ না পেয়ে অধিকাংশ ফিরে গিয়েছেন চাষাবাদে। ফলে পরোক্ষে বেকার যুবর সংখ্যা কমে গিয়েছে। ‘সেন্টার ফর স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিস’ (সিএসডিএস)-এর সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, দেশের ৬৫ শতাংশ যুব সরকারি চাকরিই করতে চান। আর সামগ্রিক হিসাব বলছে, ৭ লক্ষ ২২ হাজার পদের জন্য চাকরিপ্রার্থী ২২ কোটি। এদিকে, সরকার শূন্যপদে নিয়োগে আগ্রহী নয়। শুধু রেলেই ৩ লক্ষ পদ খালি পড়ে রয়েছে। কবে সেসব নিয়োগ হবে তার কোনও দিশা নেই। বছরের পর বছর ধরে নিয়োগ না হওয়ায় বাড়ছে প্রতিযোগিতা এবং বর্ষা-ব্রিজেশদের তালিকাও দীর্ঘতর হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment