STUDENT’S CREDIT CARD

স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড থেকে উধাও সরকার, সুদ গুণছেন অভিভাবকরা

রাজ্য জেলা

students credit card bengal tmc bengali news

স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড থেকে পড়াশোনার জন্য ঋণ নিয়ে সুদের ১৫ শতাংশ টাকাই জমা দিতে হচ্ছে অভিভাবকদের!


পড়াশোনার জন্য ঋণ প্রাপ্তির পর ৪ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার কথা ছিল ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকদের। বাকি ৫ শতাংশ সুদের দায়িত্ব নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এমনকি ঋণের টাকা মেটানোর জন্য ১৫ বছর সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি পাওয়ার জন্য ঋণ শোধের জন্য এই সময়সীমা ঠিক করা হয়েছিল। 


অভিযোগ, ঋণের জন্য এখন থেকে সুদের ৯ শতাংশ অভিভাবকদের কাছ থেকে নেওয়া শুরু হয়েছে। ১৫ বছর তো পরের কথা, ঋণ গ্রহণের কিছু মাসের মধ্যেই ব্যাঙ্কের শাখা থেকে ৯ শতাংশ সুদ কাটা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকদের কাছে। অভিভাবকদের কাছ থেকে মৌখিক অভিযোগ শোনার পর শিক্ষা দপ্তরের জেলা আধিকারিকরা লিখিত অভিযোগ জমা নিয়েছেন। গোটা রাজ্য থেকে সব অভিযোগ একত্র করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিকাশ ভবনের শিক্ষা দপ্তরে। 


কেন ৯ শতাংশ সুদ উপভোক্তাকে গুণতে হবে তা নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন বেশ কিছু অভিভাবক। ছাত্র ঋণ নেওয়া এক অভিভাবকের বক্তব্য, ‘‘ব্যাঙ্কের শাখা থেকে জানানো হয়েছে রাজ্যের ৫ শতাংশ সুদের টাকা দিতে হবে অভিভাবকদেরই। পরে রাজ্য সরকার টাকা দিলে তা অভিভাবকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’ 

ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ ধরনের মন্তব্য আসার পর শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরাই এখন থমকে গিয়েছেন।

স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্নের মধ্যেই চলতি দুয়ারে শিবিরে রাজ্য সরকার ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড নাম দিয়ে বেকার যুবক যুবতীদের জন্য ঋণদান প্রকল্প ঘোষণা করেছে। গত শুক্রবার স্টেট লেবেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠক আলোচনা হয়েছে ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প নিয়ে। এই প্রকল্পের জন্য এবারই দুয়ারে সরকার শিবিরে আবেদনপত্র দেওয়া শুরু হবে। ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত ২ লক্ষ যুবক, যুবতীদের এই কার্ডের মাধ্যমে ৫ লক্ষ টাকা করে ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।


রাজ্যস্তরে ব্যাঙ্কার্স কমিটির সভার পরে সাংবাদিক বৈঠকে অমিত মিত্র জানান, ‘‘ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ডের ১৫ শতাংশ অর্থের গ্যারান্টি দিচ্ছে রাজ্য সরকার। বাকি ৮৫ শতাংশ ঋণের টাকার নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য সিডবি (ক্রেডিট গ্যারান্টি ট্রাস্ট ফর স্মল অ্যান্ড মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ)-র সঙ্গে কথা বলে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা করেছে। ফলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের ঋণ দিয়ে টাকা ফেরতের জন্য আর কোনও চিন্তা করতে হবে না।’’ স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের এই পরিণতি দেখার পর ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 


ছাত্র ঋণের প্রকল্প নিয়ে কীভাবে এই অভিযোগ সামনে এল?

পঞ্চায়েতের ভোটের আগে ফের একবার দুয়ারে সরকার শিবির চালু করছে নবান্ন। ১ এপ্রিল থেকে সেই শিবিরে প্রতিবারের মতো এবারই স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প রাখা হয়েছে। কীভাবে এই প্রকল্প নিয়ে শিক্ষা দপ্তর এগবে তার পরিকল্পনা করতে দিনকয়েক আগে বিকাশ ভবন থেকে দপ্তরের শীর্ষ আধিকারিকরা জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠক করেন।

 দুয়ারে সরকার শিবিরে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড নিয়ে ওই বৈঠকেই বেশ কিছু জেলা থেকে ব্যাঙ্কের তরফ থেকে সরাসরি ৯ শতাংশ সুদ এখনও কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠে আসে। ভার্চুয়াল সভায় এই তথ্য আসার পর চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে আধিকারিক মহলে। নবান্নের বহুল বিজ্ঞাপিত স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের এহেন পরিণতি শুনে অস্বস্তি শুরু হয়ে যায় আধিকারিকদের মধ্যে।


শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় অভিভাবকদের তরফ থেকে অভিযোগ এসেছে। লিখিত সেই অভিযোগকে একত্র করে বিকাশ ভবনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এক আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্প নবান্ন থেকে মনিটর করা হয়। শিক্ষা দপ্তর শুধু নোডাল দপ্তর হিসাবে কাজ করে। অভিযোগ যা এসেছে নবান্নে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সরকার যা করার করবে।’’ 


রাজ্যের স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পের এই বেআব্রু চেহারা ফুটে উঠেছিল গত ডিসেম্বর মাসেই এসএলবিসি (স্টেট লেবেল ব্যাঙ্কার্স কমিটি)-র সভায়। স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ড প্রকল্পে ব্যাপক সংখ্যায় ব্যাঙ্কের তরফ থেকে খারিজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যের আর্থিক পরামর্শদাতা অমিত মিত্র। এক বছর ধরে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজারের বেশি পড়ুয়া সরকারের শিক্ষা দপ্তরের কাছে স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য আবেদন করে বসে আছে। 

অথচ ৩৭ হাজার ৯০০-র কিছু বেশি আবেদন ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য মঞ্জুর করেছি। ফলে আবেদনের মাত্র ১৭ শতাংশ এখনও পর্যন্ত ঋণ পেয়েছে। রাজ্যের তরফে গত ডিসেম্বর মাসেই এসএলবিসি’র সভায় কেন ছাত্র-ঋণের আবেদন করলেও পড়ুয়ারা ঋণ পাচ্ছে না, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। 

ওইসময়ই অমিত মিত্র বলেছিলেন, ‘‘ঋণের সুদের মাত্র ৪ শতাংশ বোঝা বইতে হবে উপভোক্তাকে। বাকি সুদের ভার বহনের দায়িত্ব রাজ্য সরকার নিয়েছে। গত দু’বছর ধরে এসএলবিসি’র সভায় শুধু স্টুডেন্টস ক্রেডিট কার্ডের ঋণ নিয়ে আলোচনা করে যেতে হয়েছে।’’ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি যে কতটা ভিন্ন তা দুয়ারে সরকার শিবির করতে গিয়ে শিক্ষা দপ্তরের বৈঠকের পর প্রকাশ্যে এসেছে। 

এখন উপোভোক্তার ৪ শতাংশের সঙ্গে রাজ্যের ৫ শতাংশ সুদের ভার পর্যন্ত বহন করতে হচ্ছে পরিবারকে। তার থেকেও বড় কথা ১৫ বছর যে ঋণ শোধ করার কথা, তা পাঠরত অবস্থা থেকেই সুদ সহ পরিশোধের চাপ আসছে। 


এপ্রিল মাসে দুয়ারে সরকার শিবিরে তাঁতশিল্পীদের জন্য উইভার ক্রেডিট কার্ড ও হস্তশিল্পীদের ব্যাঙ্ক ঋণের জন্য আর্টিজেন কার্ড প্রকল্প বহাল থাকছে। এই দুই প্রকল্পের ভবিষ্যত যে কতটা অনিশ্চিত তা উঠে এসেছে ব্যাঙ্কার্স কমিটির সভাতেই। ৬৬শতাংশ আবেদনই খারিজ হয়ে গেছে এই দুই ক্রেডিট কার্ডে। 

Comments :0

Login to leave a comment