দেশে সাধারণ নির্বাচন ঘোষণার মুখেই এক নির্বাচন কমিশনারের ইস্তফা দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ জানালো সিপিআই (এম) সহ বিরোধী দলগুলি। রবিবার এক বিবৃতিতে সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো দাবি জানিয়েছে, কোন পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েল ইস্তফা দিয়েছেন, তা সরকারকে স্পষ্ট করে বিবৃতি দিয়ে জানাতে বলেছে। সিপিআই (এম) বলেছে, একজন নির্বাচন কমিশনার যাঁর এখনও তিন বছর মেয়াদ ছিল, তিনি ইস্তফা দিলেন এবং তা গৃহীত হলো। একজন কমিশনারের পদ আগে থেকেই খালি ছিল। এই ইস্তফার পরে তিন জন কমিশনারের মধ্যে শুধু মাত্র মুখ্য নির্বাচন কমিশনারই রইলেন। লোকসভা ভোটের আগে এই ঘটনা অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে নতুন যে আইন আনা হয়েছে, তাতে সম্পূর্ণ ক্ষমতা সরকারের হাতে চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তাকে দূর করতে এই সাংবিধানিক সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে।
কংগ্রেসের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনার অরুণ গোয়েলের ইস্তফা দেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বলেছেন, অরুণ গোয়েলের ইস্তফা তিনটি প্রশ্ন তুলেছে। মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কি তাঁর সংঘাত হয়েছে? নাকি মোদী সরকারের সঙ্গে বিরোধের জেরে ইস্তফা দিয়েছেন? নাকি ব্যক্তিগত কারণে ইস্তফা দিয়েছেন? পাশাপাশি কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির মতো তিনিও বিজেপি’র প্রার্থী হতে চলেছেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেও একই কথা বলেছেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে উষ্মা প্রকাশ করে বলা হয়েছে আট মাস ধরে ইন্ডিয়া মঞ্চের দলগুলির পক্ষ থেকে সময় চাওয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের কাছে, বৈদ্যুতিন ভোট প্রক্রিয়ার গণ্ডগোল রুখতে ভিভিপ্যাটের ব্যবহার নিয়ে আলোচনার জন্য। কিন্তু সেই সময় কমিশন দিচ্ছে না। এখন ভোটের মুখে ইস্তফার জেরে পুরো বিষয়টিই অনিশ্চয়তায় চলে গেছে।
শিবসেনা উদ্ধব গোষ্ঠীর নেতা, সাংসদ সঞ্জয় রাউত এদিন বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপি’র সম্প্রসারিত শাখায় পরিণত হয়েছে। টিএন শেসনের সময়ে যে নির্বাচন কমিশন ছিল, তা আর আজ নেই। নিরপেক্ষ থেকে সেই সময়ে কাজ করেছে কমিশন। গত দশ বছরে নির্বাচন কমিশনের বেসরকারিকরণ হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশন বিজেপি’র একটি শাখায় পরিণত হয়েছে। যেভাবে বিজেপি’র লোকেদের হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট, রাজভবনে নিয়োগ করা হচ্ছে, একইভাবে দুই জন বিজেপি’র লোককে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হবে। সাংসদ আসাউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, লোকসভা ভোটের আগে কেন তিনি পদত্যাগ করেছেন সেটা অরুণ গোয়েল নিজে বা সরকারের কারণ জানানো উচিত। এনসিপি’র শারদ পাওয়ার অংশের পক্ষ থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে নির্বাচনই সুষ্ঠুভাবে হবে কি না, তা নিয়ে। সমাজবাদী পার্টিনেতা অখিলেশ যাদবও মনে করছেন, সরকারের চাপের মুখেই ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন নির্বাচন কমিশনার গোয়েল। কার চাপে ভোটের মুখে নির্বাচন কমিশনারকে ইস্তফা দিতে হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
এদিকে সূত্রের খবর ১৫ মার্চ দুই কমিশনারকে নিয়োগ করা হতে পারে। আইনমন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল, স্বরাষ্ট্র সচিব ও ডিওপিটি সচিব পাঁচ জনের নামের দুটি পৃথক তালিকা তৈরি করবেন। তারপর প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সিলেকশন কমিটির কাছে পাঠানো হবে। যাতে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং লোকসভার কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরি থাকবেন। সেখান থেকেই দুই নির্বাচন কমিশনারের নাম চূড়ান্ত হবে। এর আগে মনে করা হয়েছিল, ১৫ মার্চের মধ্যে ভোট ঘোষণা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ১৩ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করার কর্মসূচি স্থির হয়ে আছে। ১৪ বা ১৫ মার্চ ভোট ঘোষণার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু এখন ১৫ মার্চ যদি নতুন কমিশনার নিয়োগ হয়, সেই ক্ষেত্রে ভোট ঘোষণা আরও পিছিয়ে যাবে। এক নির্বাচন কমিশনারের আচমকা ইস্তফা কেন, তার সঙ্গে ভোট ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়টি নিয়েও চর্চা চলছে।
Comments :0