SAFF CUP INDIA

সাফ কাপের শুরুতেই পাকিস্তানকে দুরমুশ ভারতের,
হ্যাটট্রিক বয় সুনীল ছেত্রী

খেলা

india pakistan football saff cup bengali news sunil chetri

বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে হারাল ভারত। হ্যাটট্রিক করলেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী।    

ম্যাচের ১০ মিনিটেই ডেডলক ভাঙেন ভারতীয় ফুটবলাররা। পাকিস্তান গোলরক্ষকের মিসকিকের সুযোগ নিয়ে, ঠাণ্ডা মাথায় বলকে জালে জড়িয়ে দেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri)। স্বভাবতই, এই গোলের পর আক্রমণের তেজ আরও বাড়ায় টিম ইন্ডিয়া। 

প্রথম গোলের কিছুক্ষণ পরেই, টপ বক্সের মধ্যে পাক ডিফেন্ডারের হ্যান্ডবল। ফলে, পেনাল্টি পায় ভারত। ম্যাচের ১৫ মিনিটে, সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যাবধান বাড়ান সুনীল।

তবে আক্রমণে উঠে আসার চেষ্টা করে পাকিস্তানও। কিন্তু ব্লু-টাইগার্সদের মুহুর্মুহু অ্যাটাকিং-এর ফলে, বেজায় চাপে পড়ে যায় তাঁরা। ম্যাচের ২৪ মিনিটে, ডানপ্রান্ত থেকে প্রীতম কোটালের বাড়ানো বলে ছাংতের শট সেভ করেন পাক গোলকিপার। কান্তিরাভাতে, খুব ভালো একটি বোঝাপড়া  ফুটিয়ে তোলেন দুজন। ঠিক তারপরই অনিরুদ্ধ থাপার শট সাইডনেটে না লাগলে, ফলাফল অন্যরকম হতে পারত।

এই ম্যাচে ভারত বরাবর পেনিট্রেশন বজায় রাখে। মাঝমাঠের দখল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছিল তাঁদেরই দখলে। সাহাল আবদুল সামাদ থেকে শুরু করে আশিক কুরনিয়ান এবং জেকসন সিং থেকে শুরু করে সন্দেশ ঝিঙ্গান, গোটা দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে তাঁরা আজ জিততেই মাঠে নেমেছেন। ম্যাচের ৩১ মিনিটে, পেনাল্টি বক্সের একদম কাছে ফ্রিকিক পায় ভারত। কিন্তু বল বাইরে চলে যায়।

বৃষ্টিস্নাত কান্তিরাভায় যেন ফুল ফোটাতে ব্যস্ত ছিল সুনীল ব্রিগেড। বৃষ্টির তেজ এতটাই বেশি ছিল যে, সাউথ স্ট্যান্ডের সমর্থকরা স্কোরবোর্ডের তলায় গিয়ে আশ্রয় নেন। 

অন্যদিকে, আনোয়ার আলি এবং শুভাশিস বোসের কথা বলতেই হয়। ডিপ ডিফেন্সে দুজনই এদিন অনেকটা ওয়ার্ক লোড নেন। গোলরক্ষক অমরিন্দর সিং ভালো ফর্মে ছিলেন। তবে ছাংতের কথা বারবার উঠে আসবে। কারণ, গোটা ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন তিনি। 

গোটা মাঠ জুড়ে খেলেন তিনি এবং সর্বোপরি খেলা তৈরির ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। অন্যদিকে, প্রীতম কোটাল নিজের ক্যারিয়ারের ৫০ তম আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলে ফেললেন।

ফার্স্ট হাফ শেষ হওয়ার একটু আগে, প্রীতম কোটালের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিপক্ষ দলের ডিফেন্ডারের। কেন ফাউল দেওয়া হল না, সেই প্রতিবাদে হাত দিয়ে বল কেড়ে নেন ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ ইগোর স্টিমাচ। থ্রো আটকে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। আর এরপরই, বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন দুই দলের ফুটবলার এবং কোচিং স্টাফরা। যদিও দুই দলের অধিনায়ককেই পরিস্থতি সামাল দিতে দেখা যায়। 

কিন্তু শেষপর্যন্ত স্টিমাচকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। হলুদ কার্ড দেখেন ঝিঙ্গান সহ পাকিস্তানের এক ফুটবলার এবং একজন কোচিং স্টাফ। প্রথমার্ধ শেষ হয় ২-০ ফলাফল নিয়েই।    

দ্বিতীয়ার্ধের একেবারে শুরুতেই, সহজ সুযোগ মিস করেন আবদুল সামাদ। নাহলে, তখনই ব্যবধান বাড়তে পারত। প্রথমার্ধে যথেষ্ট ডমিনেটিং ফুটবল উপহার দেয় ভারত। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম ৫ মিনিটের মধ্যেই বেশ কয়েকটি পজিটিভ আক্রমণ তুলে আনে তাঁরা। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে, বিপুল পরিমাণ দর্শকের উপস্থিতিতে “ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া“ চিৎকার যেন আরও তাতিয়ে দিচ্ছিল গোটা দলকে। সেকেন্ড হাফে ভারতের আক্রমণে, আরও জোরালো গতি আসে।

ম্যাচের ৬৫ মিনিটে, দুটি পরিবর্তন হয় ভারতীয় স্কোয়াডে। মাঠে আসেন রোহিত কুমার। সেইসঙ্গে, প্রীতম কোটালের পরিবর্তে মাঠে নামেন নিখিল পূজারি। ম্যাচের ৭১ মিনিটে, আশিক কুরনিয়ানের শট ব্লক করেন পাক ডিফেন্ডার, নচেৎ আরও একটি গোল পেতে পারত ভারত। ম্যাচের ৭৩ মিনিটে, সুনীল ছেত্রীকে টপ বক্সের মধ্যে ফাউল করেন পাকিস্তান ডিফেন্ডার এবং সঙ্গে সঙ্গে বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি পায় ভারত এবং ফের সেই সুনীল ম্যাজিক। বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে, এখনও একজন পারফেক্ট ফুটবল সৈনিক তিনি। আবার প্রমাণ দিলেন নিজেই।

ম্যাচের ৭৪ মিনিটে, পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্লু- টাইগার্সদের এগিয়ে দেন ৩-০ ব্যবধানে। ম্যাচের ৮১ মিনিটে, আনোয়ার আলির ঠিকানা লেখা পাস পৌঁছে যায় উদান্তা সিং-এর কাছে। এক্ষেত্রে, উদান্তার ফার্স্ট টাচটি বেশ ভালো হয়। গোলকিপারকে একা পেয়ে কোনও ভুল করেননি তিনি। বুদ্ধিদীপ্ত ভঙ্গিতেই বলকে জালে জড়িয়ে দেন উদান্তা সিং এবং ভারত এগিয়ে যায় ৪-০ ব্যবধানে।

ম্যাচের ৮৬ মিনিটে, ফ্রিকিক পেলেও শট বাইরে যায় পাকিস্তানের। পরিবর্ত হিসেবে মাঠে আসেন নাওরেম মহেশও। ম্যাচের ৮৭ মিনিটে, সুনীল ছেত্রীর পরিবর্তে মাঠে নামেন লিস্টন কোলাসো। নির্ধারিত সময়ের পর, আরও ৬ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেন রেফারি। তবে আর কোনও গোল হয়নি। শেষপর্যন্ত, সাফ কাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে টগবগ করে ফুটছে ভারত। ম্যাচ শেষে, সমর্থকদের দিকে এগিয়ে যায় গোটা দল, গুজবাম্পস দিতে দেখা যায় ফুটবলারদেরও।

সবমিলিয়ে, দুর্দান্ত একটি ম্যাচ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে হারিয়ে বড় জয়। নিঃসন্দেহে গোটা প্রতিযোগিতায় ভারতকে আলাদা মাত্রায় আত্মবিশ্বাস জোগাবে।

Comments :0

Login to leave a comment