Birbhum Accident

পুলিশের তোলা এড়াতে দুর্ঘটনা, মৃত ২, বিক্ষোভ বীরভূমে

রাজ্য

তোলা ফাঁকি দিতে মরিয়া ছিল বালি ভর্তি লরিটি। তার থেকেও মরিয়া ছিল থানার ‘ডাক’ পার্টি। তোলা আদায়ের জন্য মরিয়া থানার সেই ‘ডাক’ ধাওয়া করেছিল লরিটিকে। লরিটিরও গতি বেপরোয়া করেছিল চালক। তাতেই ঘটে বিপত্তি। রুদ্ধশ্বাসে যাওয়া লরিটি ধাক্কা মারে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মোটর চালিত ভ্যানকে। সেই ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দুই তরতাজা যুবক। প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকার মানুষ। ‘ডাক’ পার্টির তোলা আদায়ে দৌরাত্বের জন্যই এভাবে বেঘোরে প্রাণ দিতে হয়েছে দুই যুবককে বলে অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন এলাকার মানুষ। পুলিসে যে গাড়িটি ধাওয়া করছিল বালি বোঝাই লরিকে সেই গাড়ি আটকে তার চালকেও মারধর করে ক্ষুব্ধ মানুষজন। রীতিমত উত্তপ্ত হয় এলাকা।
ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমে জাতীয় সড়কের উপর। মাড়গ্রাম থানার লক্ষীবাটি মোড়ে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় দুই গাড়ির। জানা গেছে, এই এলাকাতেই পুলিশ গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। বালি, পাথর সহ নানা গাড়ি থেকে আদায় করে টাকা। তেমনই এক বালির গাড়ি রবিবার দশটা নাগাদ রামপুরহাট থেকে নলহাটিকের দিকে যাওয়ার সময় পুলিশকে টাকা না গুঁজে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। তাতেই রুষ্ট হয় পুলিশ। পুলিশের গাড়ি ধাওয়া করে লরিটিকে। শুধু চালকই পুলিশের গাড়ি নিয়ে ধাওয়া করেছিল। সেই  ধাওয়া খেয়ে গতি বাড়ায় লরিটিও। সেই সময় উল্টোদিকে তেজহাটি থেকে রামপুরহাট উদ্দেশ্যে যাওয়া মোটর চালিত ভ্যানে ধাক্কা মারে লরিটি। তাতেই রক্তাক্ত হয়ে এলাকা। ভ্যানে থাকা বনেশ্বর লেট (১৮) ও ইন্দ্রজীৎ লেটের (১৬) মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। নিমেষে জড়ো হয়ে যান এলাকার মানুষ। ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। লরিটিকে আটক করে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ক্ষুব্ধ মানুষজন। পুলিশের গাড়িটিও আটকান তারা। উত্তেজনাবশত: পুলিশের গাড়ির চালক সারুল সেখকে আটকে তাকেও মার লাগান জনতা। এলাকার বাসিন্দা জামিরুল সেখ, বিমল লেটদের অভিযোগ, ‘‘মাড়গ্রাম থানার ডাক পার্টি ধাওয়া করেছিল লরিটিকে। প্রতিদিন থানার পুলিশ এই এলাকায় দাঁড়িয়ে টাকা তোলে। বালির লরিটি হয়ত টাকা না দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তাই তাকে ধাওয়া করেছিল পুলিশের গাড়ি। উল্টোদিক থেকে ভ্যানটি কিন্তু নিজের সাইডে ঠিকই আসছিল। কিন্তু লরির গতি বেশি থাকায় তাল না পেয়ে মেরে দেয়।’’ উত্তেজিত জনতার হাতে আটক পুলিশের গাড়ির চালক সারুল সেখ অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, ‘‘আমি থানার গাড়ি চালাই। আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। সেই সময় দূর্ঘটনা ঘটে। এলাকার মানুষ চারিদক থেকে ছুটে এসে আমাকে ঘিরে মার লাগিয়েছি।’’ তবে এই চলাকের কথায় অসঙ্গতি কিন্তু স্পষ্ট ধরা পড়েছে। কোন থানার গাড়ি চালান প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সে প্রথমে বলে মাড়গ্রাম, পরক্ষনেই ঢোক গিলে বলে নলহাটি। ঘাতক লরির চালক অবশ্য পলাতক। দিন কয়েক আগে মমতা ব্যানার্জি পুলিশকে ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন যাতে জাতীয় সড়কে যেন পুলিশ কোনও টাকা পয়সা না তোলা। সেটা ছিল শুধু কথার কথা তার জানান মিলেছিল আগেই। তারই খেসারতে অকালে প্রাণ দিতে হল এবার দুই তরতাজা যুবককে। পরিণাম, এলাকা তপ্ত হয়েছে ক্ষোভের আঁচে।

Comments :0

Login to leave a comment