সুখবিলাস বর্মা
পুবে যখন সন্দেশখালি জ্বলছে, বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চল সুন্দরবনের মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরূদ্ধে তাদের জমায়িত ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে প্রতিবাদের বিভিন্ন মাধ্যমে, তখনই আমাদের মুখ্যমন্ত্রী, ‘স্বঘোষিত বাংলার গর্ব’, পশ্চিমে পুরুলিয়ার জনসভায় গর্জন করছেন মোদীর বিরুদ্ধে। কারণ কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার শ্রমিকদের ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরির টাকা, বাংলার বাড়ি ইত্যাদি প্রকল্পের টাকা আটকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর দরবার, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দিল্লিতে সাংসদ-বিধায়কদের ধরনা, পঞ্চায়েত মন্ত্রীর দরবার কোনও কিছুতেই চিঁড়ে ভেজেনি। কারণ বকেয়া দাবির সমর্থনে অথবা প্রমাণে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পগুলির খরচের হিসাব সিএজি-কে দিয়ে অডিট করিয়ে সেই প্রত্যায়িত রিপোর্ট পাঠায়নি। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গরিব মানুষের মজুরির টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের সরকার।
আসলে, অডিট করলে তো সত্যিটা বেরিয়ে আসত। সরকারের দাবি একেক বার একেক রকম- কখনো ৩১ লক্ষ, কখনো ৪২ লক্ষ আবার কখনো বা ৫৯ লক্ষ মানুষের মজুরি বকেয়া। হিসাবের কাগজপত্র ঠিক থাকলে তো অঙ্কের এমন তারতম্য হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভাণ্ডার থেকেই ১০০ দিনের কাজের বকেয়া মজুরির কেন্দ্রীয় প্রাপ্য মেটানোর নাটক অভিনীত ও প্রচারিত হতে পারত না । কি পরিমাণ কাজ হয়েছে, তার মধ্যে কত পরিমাণ জেসিবি মেশিনে, কত ভুয়ো জব কার্ডে কাজ দেখানো হয়েছে এই সব প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? মজুরি বাবদ কত টাকা বাকি এবং তার মধ্যে রাজ্য সরকারের দেয় কত টাকা? মুখ্যমন্ত্রী বা তাঁর সাংসদ বিধায়কেরা কিন্তু একবারও বকেয়া মজুরির রাজ্য সরকারের দেয় কতটা, তার উল্লেখ করছেন না। অডিট করতে না দিয়ে বাংলার জনগণকে বিভ্রান্ত করে মাঠে ঘাটে তর্জন গর্জন চলছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের পাওনা দিচ্ছে না।
মাস কয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর পেশ করা বকেয়া টাকার দাবি ছিল- 'শিক্ষা'র খাতে ১৫,৮৬৪ কোটি, একশো দিনের কাজে ৬,৫৬১ কোটি, খাদ্য ভরতুকির ১,২৬৩ কোটি টাকা। আমফান বাবদ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ৩২,৩১০ কোটি টাকা প্রাপ্য। Economic Review ২০২০-২১ অনুসারে আমফানে খরচ হয়েছে ১,৯৬৯ কোটি টাকা, আর মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ৩২,৩১০ কোটি। মিথ্যার বহর দেখুন ।
‘বাংলা আবাস যোজনা’ বা 'বাংলার বাড়ি' প্রকল্পের রূপায়ণ মুখ্যমন্ত্রীর মিথ্যার চরমতম উদাহরণ। বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী দাবি করেছিলেন যে, ২০১৭-১৮ সালের পরের চার বছরে ২৭ লক্ষ বাড়ি তৈরি হয়েছে। কিন্তু এর জন্য বাজেট বরাদ্দ তিনি কোথাও দেখাতে পারেননি। যেমন, ২০১৯-২০ সালের বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন যে, এখন পর্যন্ত এই বছরে ৫,৭৬,৩৫৫ টি বাড়ির মঞ্জুরি বাবদ বাজেট বরাদ্দের ১০,০৮০ কোটির মধ্যে ৫৮৬৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। পুরো বক্তব্যটিই ছিল মিথ্যা। এমন কোনও অঙ্কই ছিল না। অর্থমন্ত্রী মিথ্যাচারে বিধানসভাকে বিভ্রান্ত করছিলেন, তাই তাঁর বিরূদ্ধে প্রিভিলেজ কেস করতে হয়েছে। অর্থমন্ত্রীর মিথ্যাভাষণ মেনে নিয়ে মাননীয় অধ্যক্ষ রুলিং-এ বলেছেন যে breach of privilege হয়নি কারণ অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য সভাকে বিভ্রান্ত করার জন্য willfully and deliberately করা হয়নি। কিন্তু সরকার এই মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকেনি। ২০২২-২৩ বাজেট বক্তৃতায় আবার ডাহা মিথ্যা বলে নতুন মন্ত্রী দাবি করেছেন যে এই প্রকল্পে এখনো পর্যন্ত ৪৭,৩৪,০০০ বাড়ি তৈরি হয়েছে। অস্তিত্ববিহীন এই ৪৭ লক্ষ বাড়ির টাকাই মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে। কি বলা উচিত - মামা বাড়ির আবদার, নাকি দিদির সংসারের আবদার!
পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় টিমের পরিদর্শনের আগে জেলায় জেলায় ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের টাকায় তৈরি বাড়িগুলোতে 'বাংলার বাড়ি' নামের প্ল্যাকার্ড খুলে ফেলার আদেশে বোঝা গেল এই মিথ্যাচারের রহস্য। এমন জালিয়াতির ঘটনা দেখা যাচ্ছে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে ।
শুধু তাই নয়, সরকারের স্বগৌরব গাঁথার তথাকথিত 'Flagship programme' যথা-সবুজ সাথী, খাদ্য সাথী/খাদ্য সুরক্ষা, স্বাস্থ্য সাথী, ইন্দিরা আবাস/প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, এসজেডিএ, ক্লাবগুলোকে অনুদান, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যয়ে খবরের কাগজগুলোর পাতা ভর্তি বিজ্ঞাপন (এ বিষয়ে প্রশ্ন করে ও আরটিআই করে কোনও উত্তর পাওয়া যায় নি), বার্ষিক বাণিজ্য সম্মেলন, কন্যাশ্রী প্রমুখ 'শ্রী' সংবলিত অসংখ্য নামের প্রোগ্রামের অডিট করতে দেয়নি রাজ্য সরকার।
যতটুকু অডিট হয়েছে তাতেই প্রভূত আর্থিক অনিয়ম ও তছরুপের ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। যেমন, গীতাঞ্জলী হাউজিং প্রোগ্রামে ২০১১ থেকে ২০১৬, এই সময়ে সরকারের ২,১৮,৭০৯ লক্ষ্য বাড়ির মধ্যে তৈরি হয়েছে মাত্র ১৮,১,৮২৬টি। প্রকল্প রূপায়ণে ঘটেছে বহু অনিয়ম। উপভোক্তা/সুবিধাভোগীর তালিকায় রয়েছে বহু পাকা বাড়ির মালিক। বাড়ির কার্পেট এরিয়া প্রকল্প নির্দিষ্ট ২৫ বর্গমিটারের চেয়ে কম, ৬০% এর বেশি বাড়িতে টয়লেট নেই। বাড়ি তৈরির অনেক টাকা ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে আছে ইত্যাদি।
রেশন বাবদ প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাহায্য, এসএসএ সহ শিক্ষা সংক্রান্ত নানা প্রকল্প, খাদ্য সুরক্ষার টাকায় খাদ্যসাথী ইত্যাদি নিয়ে চলছে মিথ্যার কারবার। অডিট করতে বাধা দেওয়ার কারণ অত্যন্ত স্পষ্ট। অনেক প্রকল্পের টাকা আটকে থাকায় ক্ষতি হচ্ছে বাংলার গরিব সাধারণের। আর এসব নিয়ে ধাষ্টামো চালিয়ে যাচ্ছে পিসি-ভাইপোর নেতৃত্বে গোটা তৃণমূল দলটি ।
অনিয়মের, ভুল পরিকল্পনার, ব্যর্থতার, দুর্নীতির উদাহরণ আছে আরও অনেক। অ্যাবস্ট্রাক্ট কন্টিনজেন্ট বিলে তোলা টাকার ডিটেল্ড কন্টিনজেন্ট বিল অবশ্যই ৬০ দিনের মধ্যে সিএজি'র কাছে পেশ করার কথা । এই রাজ্যে সেই কাজ বছরের পর বছর বকেয়া রয়েছে। সিএজি'র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১২-১৩ থেকে ২০২০-২১ পর্যন্ত বকেয়া এসি বিলের পরিমাণ ৩৪০০ কোটি টাকা। শিক্ষা বিভাগের সেকেন্ডারি স্তরের স্কুলগুলির পরিকাঠামোগত অবস্থা যথা, শ্রেণিকক্ষ-ছাত্র অনুপাত, শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত, ল্যাবরেটরি, লাইব্রেরি, কম্পিউটার রুম, টয়লেট ব্যবস্থা ইত্যাদি সব কিছুরই খুব খারাপ অবস্থা। সিএজি'র মতে, ‘বিভাগের দেওয়া তথ্য বিশ্বাসযোগ্য নয় কারণ বিভিন্ন প্রকল্পের তথ্যে মিল নেই।’
২০০১ সালে শুরু হওয়া অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড প্রকল্পে
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে দেয় সুদ ১২৭.৫২ কোটির মধ্যে সরকার দিয়েছে মাত্র ৮
কোটি। ২০১৯ মার্চ পর্যন্ত এই বাবদ সরকার ৫৪৭.২৯ কোটি টাকা দেয়নি। মা-ব্রিজ সহ কয়েকটি উড়ালপুলের অডিট রিপোর্ট দেখিয়েছে যে, কেএমডিএ নানা প্রযুক্তিগত খামতি রেখে নানা আর্থিক অনিয়মের মধ্য দিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা বেশি খরচ করেছে। অডিট দূরের কথা, ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট না দেওয়ার জন্য ফিনান্স কমিশনের সুপারিশের টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে গ্রামীণ ও শহুরে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলি। ২০২১ সময়কাল পর্যন্ত ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট বাকি ২২,৯,০৯৯ কোটি টাকার ৩৯,৪,১৬২টি প্রকল্প। যার মধ্যে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের ৮১,৯৫০, বিদ্যালয় শিক্ষা বিভাগের ৩৮,১১৭ এবং পৌরবিষয়ক বিভাগের ৩৪,৮৩৭। ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট ২০১১-১২-র আগেরও কিছু বাকি আছে ।
এতদিন মুখ্যমন্ত্রিত্ব করার পরও তিনি বলছেন পুরানো বছরগুলির ইউসি দেওয়ার
দায়িত্ব নাকি তাঁর নয়। তাহলে কে দেবে? এ ব্যাপারে তাঁর উপদেষ্টামহলের
পরামর্শ কি? তাছাড়া, ২০১১-১২ পর্যন্ত সংখ্যাটা হলো ২,২৯,০৯৯ কোটির মধ্যে
৩৪,৮৮০ কোটি টাকা অর্থাৎ ১৫% মাত্র। রিপোর্ট বলছে পিএল অ্যাকাউন্টে হাজার হাজার কোটি টাকা পড়ে থাকা সত্ত্বেও বাজার ও কেন্দ্রীয় সরকার থেকে প্রভূত ঋণ নেওয়া হয়েছে ।
আর অডিট করা হলেই বা কি? অডিটের পর রিপোর্টের ওপর প্রধান কাজ পিএসি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলির সাক্ষ্য গ্রহণ। এই সাক্ষ্য গ্রহণের সময়েই প্রকাশ্যে আসে 'ঝুলি থেকে বেড়াল'। সিএজি’র অডিট, পিএসি’র পরীক্ষা-নিরিক্ষা, বিধানসভায় প্রতিবেদনগুলি পেশ করা ইত্যাদি সব কিছুর প্রধান উদ্দেশ্য সংবিধানের ধারা অনুযায়ী বিধানসভার কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা (Accountability) পালন করা। সেই জন্যই পার্লামেন্ট সহ সমস্ত রাজ্যে পিএসি’র চেয়ারম্যান হন বিরোধী দল মনোনীত কোনো সাংসদ/বিধায়ক। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভাতেও ২০১৫-১৬ বছর পর্যন্ত একই নিয়ম চলেছে। কিন্তু ২০১৬-র নির্বাচনের পরে কেবলমাত্র ২০১৮-১৯ থেকে ২০২১-র নির্বাচন পর্যন্ত সময়ে বিরোধীদের দাবি মেনে চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ড. সুখবিলাস বর্মাকে; তাঁর সভাপতিত্বে সীমিত সময়ে পিএসি পেশ করেছিল ১২টি রিপোর্ট। বাকি সময়ে বিরোধী দল থেকে আসা দলত্যাগী সদস্যকে, যেমন ২০২১-এ বিজেপি থেকে তৃণমূলে আসা প্রথমে মুকুল রায় এবং পরে কৃষ্ণ কল্যাণীকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়ারম্যানের পদটিতে এভাবে নিজের লোক নিযুক্ত করে পিএসিকে ঠুঁটো জগন্নাথ করে রেখেছেন ।
সংবিধান অনুযায়ী পিএসি'র প্রথম ও প্রধান কাজ বাজেট অতিরিক্ত ব্যয় নিয়মিতকরণ। সিএজি’র ২০২২ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০০৯-২০২০ সময়কালে ৩৮,৯২৪.২৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয় নিয়মিতকরণ হয়নি। এই সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রেও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণা আদায় করতে পারেননি। অডিট হলে দেখা যেত যে রাজ্যে বড় কেলেঙ্কারিগুলির অন্যতম কেলেঙ্কারি হয়েছে গ্রন্থাগার বিভাগে। ত্যাগ ও মহত্ব প্রকাশের জন্য মমতা বন্দোপাধ্যায় সুযোগ পেলেই ঘোষণা করেন যে তিনি সরকার থেকে বেতন নেন না, সংসার ও দল চালান নিজের আঁকা ছবি বিক্রি করে এবং এখন বই বিক্রির রয়্যালটি থেকে। তাঁর ছবির ইতিহাস তো বাংলার মানুষ জানেন- এক কোটি ছিয়াত্তর লক্ষ টাকায় একটি ছবি সারদা, রোজভ্যালি বা অন্য কোনও কোম্পানি কিনেছে কি না, সে উত্তর তিনি আজও দিতে পারেননি। ছবি ছেড়ে কবি হয়েছেন- ইতিমধ্যে তিনি ১২০ খানা বই লিখেছেন এবং সেগুলির রয়্যালটিই নাকি তাঁর আয়ের মূল উৎস। বইগুলির গুণগত মান কেমন, ক্রেতা কারা, সেসব প্রশ্নে যাওয়া নিরর্থক। প্রতি বছর রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের গ্রন্থাগারের জন্য সরকারের অর্থে গত কয়েক বছর ধরে কেনা হচ্ছে মুষ্টিমেয় কিছু লেখকের বই যার মধ্যে প্রধান স্থান ‘বাংলার গর্ব’-র। বাংলার গ্রামীণ থেকে স্টেট লাইব্রেরি সব জায়গাতে পাবেন মুখ্যমন্ত্রীর গাদাগাদা বই। সরকারি অর্থ মুখ্যমন্ত্রীর পকেটে (আঁচলে) পাঠানোর এবং অর্থ তছরুপের অপূর্ব কৌশল ।
এই রাজ্যে শিক্ষা বিভাগ সহ সব বিভাগে চাকরির জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এনিয়ে বিধানসভায় কতবার বিরোধীরা সরব হয়েছেন, হাইকোর্টে মামলা হয়েছে, নেতা-মন্ত্রীরা জেলে গেছেন, কত শিক্ষকের চাকরি গেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই চাকরির জন্য ঘুষ, সিন্ডিকেটবাজি, কাটমানি ইত্যদি নিয়ে সাবধান করে দিয়ে বলেছেন যে, কালিঘাটকে ভাগ না দিয়ে এসব কাজ চলবে না। অনুব্রত মণ্ডল প্রমুখ নেতা-নেত্রীদের কাছ থেকে কয়লা, গোরু, চাকরি ইত্যাদি বাবদ কোটি কোটি টাকার আমদানি, সোনা স্মাগলিং-এ জড়িত ব্যক্তিকে পুলিশ পাঠিয়ে কাস্টমস থেকে ছিনিয়ে আনা ইত্যাদি সবই করেছেন তিনি। আর বাঙালির গরিমায় সুড়সুড়ি দিয়ে নানা অঙ্গভঙ্গিতে তিনি সব দোষ চাপাতে চেষ্টা করছেন বিরোধী দল ও অন্যদের ওপর ।
ইতিমধ্যে যোগ হয়েছে অনুব্রতের দোসর শাহজাহান- সুন্দরবনের ‘টাইগার’। অনুব্রত, পার্থ, অর্পিতা এদের কারুর হিম্মত হয়নি কেন্দ্রীয় এজেন্সির উপর হামলা করার বা পুলিশের নজর এড়িয়ে ৫৬ দিন গা ঢাকা দেওয়ার। দলের সর্বোচ্চ মহল থেকে এমনতর প্রোটেকশন বেতাজ নবাব আর তারই শাগরেদ শিবু-উত্তমদেরই জুটেছে। সন্দেশখালির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে দিদি একটি বড় কাজ করেছেন - আগামী নির্বাচনে বাংলায় তাঁর ডেকে আনা বিজেপি-কে আরও বড় জায়গা করে দিয়েছেন। তবেই ইডি’র অফিসাররা মারধর খেয়ে ১৯ দিন চুপ করে বসেই বা রইল কেন, দিল্লির বিজেপি-কেও সে উত্তর তো দিতে হবে।
তাল সামলাতে এখন গর্জন থেকে জনগর্জন আয়োজন করে বাংলার মানুষের দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা করছেন। নাগরিকত্ব নিয়ে, উন্নয়ন নিয়ে ধাপ্পাবাজ বিজেপি নতুন রসদ পেল- অত্যাচার, অনাচার, নারী ধর্ষণ ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনে বাংলার দৃষ্টি ঘোরাতে মরিয়া মোদীজী। বারাসত থেকে শিলিগুড়ি - সর্বত্র সন্দেশখালির অত্যাচারের কথা মোদি’র মুখে। দিদিও বলছেন বিলকিস বানো, হাথরস, মণিপুরের কথা। দিদিও সন্দেশখালির অত্যাচারিতদের কথা শোনার সময় পান না, আর মোদীও মণিপুরের অত্যাচারিতদের কথা শোনার সময় পান না। ব্রিগেডের র্যা ম্প থেকে জনগর্জনে বোঝানোর চেষ্টা করলেন কিভাবে সংবাদমাধ্যম ও বিরোধীরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। মোদী-দিদির নকল লড়াইয়ে বাংলার রাজনৈতিক পরিবেশ উত্তাল। তবে দুই দলের তরজার মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের অনেক অপকর্মের খতিয়ান বেরিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষকে সঠিক পথে চালিত করার একমাত্র ভরসা বাম ও কংগ্রেসের সুচিন্তিত সুপরিকল্পিত গাঁঠবন্ধন ও সংগ্রাম। বাংলার মানুষ সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে তেমন কিছুর জন্য ।
Comments :0