ABHISHEK OLD AGE PENSION

ভাতা কেবল নিজের কেন্দ্রে কেন, প্রশ্ন অভিষেকের ঘোষণায়

রাজ্য

প্রতীম দে
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ আলাদা বার্ধক্য ভাতা চালু করেছেন। ৭ জানুয়ারি পৈলানে কয়েকজনের হাতে হাজার টাকার চেক তুলে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি। আলাদা করে নিজস্ব উদ্যোগে এবং কেবল ডায়মন্ড হারবারেই এই প্রকল্প কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর।
দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। রাজ্যের সরকারে  আসীন তৃণমূল। কিন্তু অভিষেকের পরিকল্পনা অনুযায়ী ডায়মন্ডহারবারে যে ভাতা চলবে রাজ্যেরই যাদবপুরে হবে না, অন্তত আপাতত!
বড় প্রশ্ন রয়েছে টাকার উৎস নিয়েও। সাংসদ তহবিলের টাকায় এই খরচ উঠবে না। 
উমা জানার বাড়ি খানাকুলে। মঙ্গলবারের দুপুরে তিনি জানিয়েছেন যে দুয়ারে সরকারে ফর্ম জমা করলেও বার্ধক্য ভাতা মেলেনি। স্থানীয় তৃণমূল নেতার কাছে পাড়ার লোকের কথা শুনে ফর্ম জমা করেছে তাতেও হয়নি। কথা বলার সময় আক্ষেপ ঝরে পড়ছিল তার গলায়। 
ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় ৭০ হাজার বয়স্ক মানুষের জন্য বার্ধক্য ভাতা চালু করেছেন বলে দাবি সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির। বছরে খরচ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা। প্রতি মাসে হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। 
একজন সাংসদ কি এই ভাবে কোন ‘ভাতা’ চালু করতে পারেন?
কোনও জনপ্রতিনিধি এভাবে টাকা বিলি করতে পারেন না বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট অংশ। তাঁদের প্রশ্ন, সাংসদের হিসেব অনুযায়ী বছরে ৮৫ কোটি টাকা দরকার। একজন সাংসদের কাছে এই টাকা কিভাবে আসবে তা অস্পষ্টই রয়েছে।
এখনও পর্যন্ত কোন হিসাব দেখাতে পারেননি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারাণ সম্পাদক। আয়কর দপ্তরের পক্ষ থেকেও এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলা হয়নি। হয়নি কোন স্বতঃপ্রণোদিত মামলা। 
রাজনৈতিক মহলে একাংশ মনে করছে যে এমন প্রকল্পের দেখিয়ে হিসেব বহির্ভূত কালো টাকা সাদা করার রাস্তা রয়েছে। 
বার্ধক্য ভাতা রাজ্যে অতীতেও ছিল। তৃণমূল সরকারও এই ভাতা চালু রেখেছে। প্রতি মাসে হাজার টাকা করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢোকে প্রাপকদের। তা’হলে রাজ্যের এই প্রকল্প থাকা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবারে আবার আলাদা করে এই প্রকল্প কেন চালু করছেন অভিষেক?
একটু পিছিয়ে যেতে হবে। গত বছর অভিষেক জানিয়ে ছিলেন যে তাঁর এলাকার বয়স্ক মানুষদের জন্য বার্ধক্য ভাতা তিনি চালু করবেন। কারা সেই প্রকল্পের সুবিধা পাবে? যাঁরা রাজ্য সরকারের বার্ধক্য ভাতা পান না। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, এর জন্য দলীয় কর্মীদের দিয়ে গোটা এলাকা জুড়ে ২০৩টি ক্যাম্প করিয়েছেন তিনি। জমা নিয়েছেন প্রয়োজনীয় নথি। তারপর ৭ জানুয়ারি পৌলান থেকে চালু করেছেন এই প্রকল্প। 
এখানেই উঠছে প্রশ্ন।
তৃণমূলের ছোট বড় নেতা মন্ত্রীরা বার বার নিজেদের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বাজার গরম করেন। দুর্নীতিকে ঢাকা দিতে ব্যবহার করেন এই সব প্রকল্পের কথা।  দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঘুরিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে প্রয়োজন থাকলেও অনেকেই সরকারি প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা পান না। অনেকে বঞ্চিত হয়েছেন বা হচ্ছেন।
বিরোধীরা বিভিন্ন সময়েই বলেছেন যে উপভোক্তা হওয়ার যোগ্যতা সত্ত্বেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই ভাতার সুযোগ অনেকে পাচ্ছেন না। বার্ধক্য ভাতার ক্ষেত্রেও তা রয়েছে। শুধুমাত্র ডায়মন্ড হারবার নয় গোটা রাজ্যেই এই ধরনের অনেক মানুষ আছেন যারা এই ভাতা পায় না। তাহলে সেই এলাকার সাংসদেরও চালু করতে হবে এমন প্রকল্প। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এক অধ্যাপকের কথায়, ‘‘অভিষেকের দল যখন রাজ্যে সরকার চালাচ্ছে তাহলে তার উচিত ছিল রাজ্য সরকারের এই প্রকল্প যাতে সবার কাছে পৌছায় সেটা নিশ্চিত করা।’’

Comments :0

Login to leave a comment