3 female farmers died

পাঞ্জাবে আন্দোলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনায় নিহত ৩ কৃষক

জাতীয়

হরিয়ানার তোহানা আর পাঞ্জাবের খানৌরী মহাপঞ্চায়েতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে প্রাণ হারালেন ৩ মহিলা কৃষক। শনিবার পাঞ্জাবের বরনালা অঞ্চলের এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিজসবীর কৌর, সরবজীৎ কৌর ও বলবীর কৌর নামের ৩ কৃষক। তাঁরা ভাঠিন্ডা জেলার কোঠাগুরু গ্রামের বাসিন্দা। সকালে ঘন কুয়াশা থাকায়, কোঠাগুরু থেকে খানৌরীগামী এই বাস বরনালা-হন্ডিয়ায়া বাইপাসের এক ডিভাইডারে সজোড়ে ধাক্কা মরে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তৎক্ষণাৎ রাস্তার উপর বাসটি উল্টে যায়। এই দুর্ঘটনায় ২৪ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ১২ জনের অবস্থা গুরুতর। আহতরা স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 
এদিন সকালেই ফরিদকোট জেলার দাল্লেওয়াল গ্রাম থেকে খানৌরী যাওয়ার পথে বরনালায় দুর্ঘটনার মুখে পড়েন আন্দোলনকারী কৃষকরা।  বাসে করে আসার পথে ঘন কুয়াশার কারণে চালক দেখতে না পেয়ে, একটি মালবোঝাই ট্রাককে ধাক্কা মারলে ৪ জন কৃষক আহত হয়েছেন। এছাড়াও এদিন পাঞ্জাবের ভাতিণ্ডা জেলার দেওনওয়ালা গ্রাম থেকে হরিয়ানার তোহানা মহাপঞ্চায়েতে যাওয়ার পথে, আন্দোলনকারী কৃষকদের আরেকটি বাস কুয়াশায় কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জাস্সি চকে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫ কৃষক। তাঁদের ভাতিণ্ডা এইমস হাসপাতালে ভর্তি। একই সঙ্গে ফরিদকোট জেলার মাত্তা গ্রাম থেকে আসা কৃষকদের একটি বাস রাস্তায় উল্টে গিয়ে তিন জন আহত হয়েছেন। ইতিমধ্যে শনিবারের চারটি ঘটনায় বিভিন্ন কৃষক সংগঠন নিহতদের পরিবারের জন্য সরকারের থেকে ক্ষতিপূরণের দাবি করেছে। বরাদ্দ টাকা সহ পরিবারের একজনের সরকারি চাকরির আবেদন করা হয়েছে। 
ঘটনাচক্রে ফরিদকোট থেকে আসা দু’টি বাস শনিবার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে, তার মধ্যে একটি কৃষক নেতা জগজিৎ সিং দাল্লেওয়ালের গ্রাম থেকে আসছিল বলে জানা গেছে। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি অধিকারের দাবিতে গত ৪০ দিন ধরে অনির্দিষ্টকালের জন্য টানা অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন পাঞ্জাবের এই কৃষক নেতা। তবুও আন্দোলনকারী কৃষকদের দাবিদাওয়া নিয়ে বিজেপি সরকারের কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। ফলে আন্দোলন আরও জোরদার করতে, শনিবার দুই রাজ্যে ‘মহাপঞ্চায়েত’-র ডাক দেয় বিভিন্ন কৃষক সংগঠন। 
পাঞ্জাবের খানৌরী মহাপঞ্চায়েতে শনিবার অনশনরত কৃষক নেতা জগজিৎ সিং দাল্লেওয়াল উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের শুরুতে এদিন পথ দুর্ঘটনায় নিহত আন্দোলনকারী কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের কৃষকদের এই আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দাল্লেওয়াল। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কৃষকরা এক সঙ্গে আন্দোলনে নামলে বিজেপি আরও বড় রকমের বিপাকে পড়বে বলে তিনি জানিয়েছেন। ‘‘এই লড়াই একা পাঞ্জাবের নয়, গোটা দেশের লড়াই। গোটা দেশের কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রয়োজন,’’ এদিন ভাষণে এই কথা বলেন দাল্লেওয়াল। কৃষক বিরোধী বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ছাড়াও অন্যান্য রাজ্যেও কৃষক সংগঠনগুলিকে যৌথ লড়াইয়ে নামার কথা বলেন তিনি। 
কৃষকদের আয় দিনদিন কমতে থাকায় তারা ঋণের দায়ে আরও জর্জরিত হয়ে পড়ছেন। ফলে তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ছে। গত কয়েক বছরে এদেশে অন্তত সাত লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। অথচ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের এই বিষয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। উলটে কৃষকদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা সংক্রান্ত ন্যূনতম যেটুকু নিশ্চয়তা রয়েছে, তাও মুছে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে কৃষকদের উপর বেপরোয়া লাঠি চার্জ, কাদানে গ্যাস দিয়ে দমন করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অপরাধে অসংখ্য কৃষককে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।  
এদিকে, কৃষকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধিদের সরাসরি আলোচনায় বসার জন্য দাবি করেছেন পাঞ্জাবের মন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা গুরমিত সিং খুদ্দিয়ান। শনিবার কেন্দ্রের কৃষি মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে এক অনলাইন বৈঠকে তিনি এই আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। 

Comments :0

Login to leave a comment