চা শ্রমিকরা হারাবেন মালিকের সাথে দরকষাকষির অধিকার। লেবার কোর্ট উঠে গিয়ে ক্ষমতা বাড়বে আমলাদের। ন্যূনতম মজুরি নির্ধারিত হবে সরকারের খেয়ালখুশি মতো, কোনো নির্দিষ্ট ফর্মুলা থাকবে না মালিকপক্ষের জন্যে। লকআউট, লে অফ, ছাঁটাই করা সহজ হবে। শ্রমিকদের জন্য ধর্মঘট করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে।
এমনকী হারাতে হবে ইউনিয়ন করার অধিকারও।কাজের ঘন্টা অনুযায়ী মজুরি প্রদান করা হবে। শ্রমিকের অধিকার কেড়ে দাসে পরিণত করার ব্যবস্থা হয়েছে শ্রম কোডে। বাতিল করা হয়েছে ২৯টি শ্রম আইন। ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় আবার দল বেঁধে দাবি জানাতে গেলেও জামিন অযোগ্য ধারায় জেলে ভরার ব্যবস্থা রয়েছে। আর কর্পোরেট, মালিকপক্ষ বিধি ভাঙলেও ছাড় পেয়ে যাবে সামান্য জরিমানা দিয়ে। তার বিরুদ্ধে ধর্মঘট ডকেছে দেশের ট্রেড ইউনিয়ন সমূহ। সমর্থন কর্মচারীদের, সমর্থন কৃষক-খেতমজুরদের। সমর্থন করেছেন সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষ। জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে রবিবার প্রচার অভিযানে এই কথাগুলো তুলে ধরেন বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জলপাইগুড়ি দিন বাজারে যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে দোকান কর্মচারী থেকে দোকানের মালিক তাদের কাছে অনুরোধ জানানো হয় ধর্মঘটের সমর্থনে দোকানপাট বন্ধ রাখার জন্য। স্টেশন বাজারে ছাত্ররা সমস্ত সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের কাছে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার সংঘটিত করে। এছাড়া সিআইটিইউ’র পক্ষ থেকে বেসরকারি বাস স্ট্যান্ডে পরিবহণ কর্মীদের কাছে ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানিয়ে প্রচার করা হয়। ১২ই জুলাই কমিটি জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ড গুলোতে ধর্মঘটের সমর্থনে পথসভা ও লিফলেট বিলি করে। খড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিভিন্ন সংগঠন হাট বাজার জনবহুল অঞ্চলের পথসভা ও মধ্য দিয়ে ধর্মঘটের সমর্থনের প্রচার সংঘটিত করে। অনুরূপভাবে বানারহাট নাগরাকাটা ধুপগুড়ি রাজগঞ্জ সহ সমস্ত অঞ্চলের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার আন্দোলন চালানো হয়। এছাড়াও জলপাইগুড়ি শহরের বিভিন্ন শপিং মলে চিঠি দিয়ে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার সংঘটিত করা হয়।
ধর্মঘটের সমর্থনে সোমবার শিলিগুড়িতে হাজার মানুষের কেন্দ্রীয় মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। মিছিল বিকেল ৫ টায় কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামের সুইমিং পুলের সামনে থেকে শুরু হয়ে হিলকার্ট রোড হয়ে শিলিগুড়ি জংশন চত্বরে শেষ হবে। রবিবার শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডের সিআইটিইউ'র জেলা দপ্তরে সাংবাদিক সন্মেলনে এই কথা বলেন, সিআইটিইউ নেতা গৌতম ঘোষ। তিনি বলেন, মোদী সরকারের সময় বিগত এক দশক ধরে দেশের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও অতিক্ষুদ্র শিল্প এবং তার সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসা ও বনিক সমাজকেও চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। নোটবন্দির ফলে ছোট ব্যবসাকে মারাত্মক ভাবে ধাক্কা দেয়। হাজার হাজার দোকান বন্ধ হয়ে যায় এবং কাজ হারান লক্ষ লক্ষ মানুষ। এছাড়া জটিল ফাইলিং পদ্ধতি, অপরিকল্পিত ভাবে বিভিন্ন পন্যের ওপর জিএসটি আরোপ ও ই-ওয়ে বিলের ঝামেলা ছোট ব্যবসাকে বিপদে ফেলে দেয়। এর সঙ্গে জিএসটি ও আয়কর দপ্তর থেকে অহেতুক নোটিশ পাঠানো ছোট ব্যবসায়ীদের আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। বৃহৎ শিল্পপতিদের অবাদ কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে, তার বোঝা ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের বইতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে মানুষের কাধে মূল্যবৃদ্ধির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার বড় বড় কর্পোরেট ও ই-কমার্স দানবদের পক্ষে থাকছে। এই পরিস্থিতিতে শ্রমিক ও কৃষকের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগ্রাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আমরা এই নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে সমস্ত সাধারণ মানুষের কাছে ৯ জুলাই সাধারণ ধর্মঘটকে সমর্থনের আবেদন করছি। তিনি ছাড়াও এদিন সাংবাদিক সন্মেলনে বক্তব্য রাখেন, এআইটিইউসি'র পক্ষে পার্থ মৈত্র, এআইসিসিইউসি'র বাসুদেব বসু, ইউটিইউসি'র তাপস গোস্বামী, ১২ জুলাই কমিটির পক্ষে পার্থ ভৌমিক, ব্যাঙ্ক কর্মচারী ইউনিয়নের লক্ষ্মী মাহাতো। ছিলেন সমন পাঠক, মোহন পান্ডা, অভিজিৎ মজুমদার, মনোজ নাগ প্রমুখ।
Comments :0