রোজ আসেন এই কর্মচারীরাই। তাঁদের নাম, নথিপত্র রয়েছে কর্তৃপক্ষের হাতে। তবু সেই কর্মচারীদের ব্যাগ তল্লাশি হচ্ছে নবান্নে।
প্রতিবাদের জেরে কতটা ত্রস্ত রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার, দেখাচ্ছে এই তল্লাশিই। বস্তুত শুক্রবার কলকাতারই গুরুত্বপূর্ণ সব সরকারি দপ্তরে ধর্মঘটের গুরুতর প্রভাব পড়েছে। নব মহাকরণ থেকে খাদ্য ভবন, প্রতিবাদের মানচিত্রে বাদ নেই কোন দপ্তর। পাবলিক সার্ভিস কমিশনেও সেই একই ছবি।
কাজ করতে আসার জন্য হুঁশিয়ারি দিয়েছিল সরকার। জারি হয়েছে নোটিশ। তবে কাজ করতে আসা কর্মচারীদের ব্যাগ তল্লাশি কেন?
জানা গিয়েছে, ব্যাগের মধ্যে থাকতে পারে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার। একেবারে খোদ নবান্নে, সরকারের সদর দপ্তরে ভেতরে ডিএ থেকে শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে উঠতে পারে স্লোগান। তা থেকে বাঁচতে মরিয়া নবান্ন। বাঁচার চেষ্টা চালাচ্ছে মমতা ব্যানার্জির সরকার, তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস।
এক লহমায় কলকাতার বড় সরকারি ভবনের দিকে দেখলেই বোঝা যাবে ধর্মঘটের প্রভাব কতটা গভীর। নব মহাকরণেই রয়েছে অনেকগুলি রাজ্য সরকারি দপ্তর। সেখানে কাজে যোগ দেননি একের পর এক দপ্তরের কর্মীরা। খাদ্য ভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে হাজিরা নামমাত্র।
কলকাতার কালেক্টরেটে একই ছবি। নব মহাকরণে অ্যাডমিনিট্রেটর জেনারেল অ্যান্ড অফিসিয়াল ট্রাস্টির দপ্তরে পড়ে রয়েছে ফাঁকা টেবিল, ফাইল।
বোঝা যাবে, কেবল কলকাতা হাইকোর্ট নয়, জেলার আদালতের দিকে তাকালেও। শ্রীরামপুরে মহকুমার আদালতের সামে হাতে মাইক নিয়ে প্রচার করছেন ধর্মঘটীরা। বসেছেন অবস্থানে। জানাচ্ছেন কেন এই ধর্মঘট।
বাঁকুড়া জেলা পরিষদ, গঙ্গারামপুর ব্লক দপ্তর, মালদহের কালিয়াচকে বৈষ্ণবনগরের ব্লক দপ্তরের সামনে জমায়েত, পোস্টার, ব্যানার।
জায়গায় জায়গায় ধর্মঘটের পক্ষে জমায়েত, স্লোগান। তার সঙ্গে অবধারিত জনসমর্থন। শ্রমজীবী জনতার মধ্যে ‘সরকারি’ এবং ‘না-সরকারি’ ভাগ করতে চেয়েছিল তৃণমূল।
মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা থেকে টিভি’র টক শো, সর্বত্র সেই প্রয়াস জারি ছিল। ধর্মঘটের ব্যাপকতা এবং গভীরতা বুঝিয়ে দিচ্ছে জনতার সমর্থন কতটা।
না হলে স্কুল শিক্ষক থেকে আদালত কর্মচারী বা জেলায় জেলায় গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এমন প্রতিবাদ হয় না, বলছে কর্মী আন্দোলনই।
এমনকি তৃণমূলের সমর্থকদের একাংশ, সরাসরি ধর্মঘটে যোগ না দিলেও, সক্রিয় বিরোধিতায় নামেনি। দলীয় কিছু বাহিনী পাঠিয়ে হুমকি, ভয় দেখানোর চেষ্টা তৃণমূল করেছে। তবে প্রতিবাদের আগুনে উড়ে গিয়েছে সে সব প্রয়াস।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদ দপ্তরেও হুমকি কাজ করেনি। শুক্রবার পুরো ফাঁকা একের পর এক ঘর। ধর্মঘটী কর্মীরা এসেছেন, গেটের বাইরে শামিল রয়েছেন বিক্ষোভে।
বেলা দেড়টার মধ্যে রাজ্যের দপ্তরে দপ্তরে তাকালেই পরিষ্কার। হুমকি কাজ করেনি। বদলি, চাকরির মেয়াদে ছেদের নোটিসে ভীত নন কর্মচারীরা। ভীত নন রাজ্যবাসী।
Comments :0