Sitaram Yechury Press meet

লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে মেরুকরণ তীব্র করছে বিজেপি সতর্ক করলেন ইয়েচুরি

জাতীয় রাজ্য

Sitaram Yechury Press meet

আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিজেপি সারা দেশে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করতে ঝাঁপিয়েছে বলে সতর্ক করলেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। এই সাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে পরাস্ত করে দেশ ও দেশবাসীকে বাঁচাতে সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে দেশপ্রেমিক সব শক্তিকে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে ইয়েচুরি বলেছেন, ভারতের ভবিষ্যতকে রক্ষার জন্য বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সবাইকে এখনই একজোট হতে হবে। 
 

   মঙ্গলবার ও বুধবার সিপিআই(এম)’র রাজ্য কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন সীতারাম ইয়েচুরি। সভার পরে পার্টির রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে সঙ্গে নিয়ে এদিন সাংবাদিক বৈঠক করেছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক এবং নির্বাচনী ফায়দা তুলতে এবারের রামনবমীকে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের লঞ্চিং প্যাড হিসাবে ব্যবহার করেছে বিজেপি। সংখ্যালঘুদের আক্রমণের জন্য ব্যবহার করেছে যাতে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও মেরুকরণ তীব্র হয়। এটা দেশের পক্ষে বিপজ্জনক। এর আগে এভাবেই গোরক্ষা, লাভ জেহাদ ইত্যাদির কথা বলে সংখ্যালঘুদের ওপরে আক্রমণ চালিয়েছে।


 

    অর্থ মন্ত্রী নির্মলা সীতারামন আমেরিকায় গিয়ে সাফাই গেয়ে বলেছেন যে, ভারতের বাস্তবতা অন্যরকম, সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হলে তাঁদের জনসংখ্যা বাড়ছে কী করে! সীতারাম ইয়েচুরি এর নিন্দা করে বলেছেন, সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি মোটেই জাতীয় গড়ের বেশি নয়, স্বাভাবিকতার মধ্যেই তা রয়েছে। কিন্তু একথা বলার মধ্য দিয়ে ঘৃণ্য ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রকাশ করেছেন অর্থ মন্ত্রী। ব্রিটিশ সরকারের নীতির কারণে ১৯৪৩ সালের বাংলার মন্বন্তরের সময় সমালোচনা এড়াতে চার্চিল বলেছিলেন, ‘ক্ষুধায় মানুষের মৃত্যু সত্যি হলে ইঁদুরের মতো জনসংখ্যা বাড়ছে কী করে!’ নির্মলা সীতারামনও সেই চার্চিলের মতোই মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

   সাম্প্রদায়িক আক্রমণের পাশাপাশি ভারতের মানুষের অর্থনৈতিক জীবনে, রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক অধিকারে মোদী সরকার কীভাবে আক্রমণ নামিয়ে এনেছে তার উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেছেন, দারিদ্র নিয়ে ২০১৭-১৮ সালের জাতীয় নমুনা সমীক্ষার রিপোর্ট সরকার প্রকাশ করেনি। বেসরকারি সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে মানুষের প্রকৃত আয় এক জায়গায় আটকে গেছে, পণ্য ও পরিষেবা ক্রয় কমছে, দারিদ্র বাড়ছে মোদী জমানায়। গত ৮ বছরে সমাজের নিচের দিকে প্রকৃত আয় ৫৩ শতাংশ কমেছে, আর উপরের দিকে আয় বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। ধনীরা আরও ধনী হয়েছে, গরিবরা আরও গরিব, এটাই মোদীর শাইনিং ইন্ডিয়া। দারিদ্র বাড়ছে, মুদ্রাস্ফীতি বাড়ায় সমস্যা আরও বাড়ছে। অর্থনীতির এই গতিমুখ উলটে দিতে সংগ্রাম করতে হবে। এরজন্যই গত ৫ এপ্রিল দিল্লির বুকে কিষান মজদুর সংগ্রাম দেখা গিয়েছে, সেই সংগ্রামকে আরও তীব্র করতে হবে। মোদী সরকার কৃষক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। 
    গণতন্ত্রের ওপরে আক্রমণের উল্লেখ করে ইয়েচুরি বলেছেন, সরকারের বাইরের স্বাধীন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে খর্ব করা হচ্ছে। ১৯৫২ সালের পরে এই লোকসভায় অধিবেশন সংক্ষিপ্ততম হয়েছে। বিচারবিভাগকে সরকারের তরফে আক্রমণ করে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। রাজ্যপাল, ইডি, সিবিআই ইত্যাদির অপব্যবহার করে দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

স্বাধীন কন্ঠস্বর দমন করতে মিডিয়ার ওপরেও আক্রমণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, কোন সংবাদ মিথ্যা, কোনটা প্রকাশ করা যাবে না সেটা ঠিক করে দেওয়ার কর্তৃপক্ষ হবে সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো? এতো প্রেস সেন্সরশিপ! স্বৈরতন্ত্রে এসব চলে। ইতিহাসের পাঠ্যসূচি বদলে দেওয়া হচ্ছে, মোঘল শব্দ যেভাবে বাদ দেওয়া হচ্ছে তাতে ‘মুঘল ই আজম’ সিনেমার নাম পালটে তো এবার ‘ই আজম’ করতে হবে, হলদিঘাটের যুদ্ধ হয়েছিল কিনা তা চাপা পড়ে যাবে! বিরক্তিকর এই সব কাণ্ডকারখানার পিছনে সেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে যে উদ্দেশ্যে ভারতের ইতিহাস থেকে গান্ধীজী এবং গান্ধী হত্যাকারীর নামও মুছে দেওয়া হচ্ছে। 
    এই রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে জনপ্রিয় আন্দোলনের চাপ তৈরি করার ডাক দিয়েছেন ইয়েচুরি। সেই সঙ্গে বলেছেন, কর্পোরেট কমিউনাল আঁতাতে দেশে লুট চলছে। ভারতের জীবন বিমা নিগমে জনগণের সঞ্চিত টাকায় আদানির গোষ্ঠীর পতন বাঁচাতে শেয়ার কেনা হচ্ছে। আদানিকাণ্ডে আমরা যৌথ সংসদীয় কমিটির তদন্ত দাবি করেছিলাম। এই কমিটি তৈরি হলে তাতে বিজেপি’রই সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য থাকতো,
    

চেয়ারম্যানও বিজেপি’রই হতো। তা সত্ত্বেও কোনও সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠন করতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী? 
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে আলোচনায় বসবেন সীতারাম ইয়েচুরি। সাম্প্রদায়িক ও জনবিরোধী বিজেপি সরকারের সামগ্রিক মোকাবিলায় বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সিপিআই(এম) কথা বলছে বলে জানিয়েছেন ইয়েচুরি। তিনি বলেছেন, আমরা চাই প্রতিটি রাজ্যে বিজেপি বিরোধী ভোটের বিভাজন সর্বনিম্ন করে বিজেপি বিরোধী ভোট সর্বোচ্চ একত্রিত করে বিজেপি’র পরাজয় নিশ্চিত করতে। কিন্তু এটা করতে হবে প্রতিটি রাজ্যভিত্তিক নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুসারে। এরপর নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোট গঠিত হবে। বিহারে মহাগাটবন্ধনে কংগ্রেস আরজেডি এবং বামেরা ছিল, আগামী লোকসভা নির্বাচনে জেডি(ইউ) তাতে যুক্ত হবে।


 

সারা দেশে যে একই ধাঁচে বিজেপি বিরোধী নির্বাচনী ঐক্য হবে না, বরং রাজ্যভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিস্থিতি অনুযায়ী করাই জরুরি তা বোঝাতে ইয়েচুরি বলেছেন, বিজেপি বিরোধিতায় থাকলেও অনেক রাজ্যেই একাধিক আঞ্চলিক দল পরস্পর বিরোধিতায় আছে। আবার কেরালায় কংগ্রেসের সঙ্গে বামেদের লড়াই আছে। বিজেপি’কে জায়গা না দিয়ে পরাস্ত করতে পারলে নির্বাচনোত্তর সরকার গঠনে এতে কোনও সমস্যা হবে না। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৪ সালে তার উদাহরণ আছে। ২০০৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বামপন্থীরা ৬১ আসনে জিতেছিল যার মধ্যে ৫৭টিতেই পরাস্ত করেছিল কংগ্রসকে। কিন্তু বাম সাংসদরা সবাই নির্বাচনের পরে মনমোহন সিংয়ের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারকেই সমর্থন করেছিল দেশের স্বার্থে। দেশের স্বার্থে বিজেপি বিরোধিতায় দায়বদ্ধতাটাই আসল কথা। 
 


 

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি’র নেতারা তৃণমূলকে হারাতে বামপন্থীদের পাশে চাইছে বলে সাংবাদিকরা জানালে ইয়েচুরি বলেন, ওরা যাই বলুক, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে বলছে। উদ্দেশ্যপূরণের জন্য যে কোনও মিথ্যা প্রচার ওরা করতে পারে। কিন্তু আমাদের কথা স্পষ্ট, বিজেপি’র সঙ্গে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না, দেশহিতে বিজেপি’কে পরাস্ত করতে হবে।

Comments :0

Login to leave a comment