Dead Ball

আউট হয়েও নট আউট, ডেড বলের মজার ইতিহাস!

খেলা

সুমিত গাঙ্গুলি

এবারের এশিয়া কাপে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সুপার ফোরের গুরুত্বহীন ম্যাচের সুপার ওভারে যা ঘটল তা অভূতপূর্ব। 
অর্শদীপ সিং প্রথম বলেই কুশল পেরেরাকে ফিরিয়ে দেন। তিনি যখন চতুর্থ বল করতে যাচ্ছেন তখন শ্রীলঙ্কা এক উইকেট হারিয়ে দু’ রান করেছে। দাসুন সানাকা বলটি খেলতে না পারায় বল চলে যায় উইকেটরক্ষক সঞ্জু স্যামসনের কাছে। শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা রান নিতে যাওয়ার সময় অর্শদীপ কট বিহাইন্ডের আবেদন করেন। 
আম্পায়ার আবেদনে সাড়া দিয়ে আউটের নির্দেশ দেন। ততক্ষণে সঞ্জু রান আউট করে দিয়েছেন। উলটো দিকে ব্যাটার ক্রিজের বাইরে থাকায় খালি চোখেই রান আউট ছিল। এরপর শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা তৃতীয় আম্পায়ারের সাহায্য নেন। কারণ, ‌আইসিসি’র ২০.১১.৩ ধারা অনুযায়ী ব্যাটার আউট ঘোষিত হলেই বল ডেড হয়ে যাবে। যেহেতু আম্পায়ার ক্যাচ আউটের আবেদনে সাড়া দিয়েছিলেন, তাই বল ওখানেই ডেড। স্টাম্প ভাঙা হলেও সেটি গ্রাহ্য হবে না। 
তৃতীয় আম্পায়ার ভিডিও দেখে আউটের আবেদন খারিজ করতে কোনও উইকেটই হারাতে হয়নি শ্রীলঙ্কা দলকে। ভারতীয় দল বিষয়টি বুঝতে না পেরে আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলে। ফিল্ড আম্পায়ার গাজি সোহেল বিষয়টি সম্পর্কে ভারতীয় দলকে সচেতন করে।
‘ডেড বল’ বিষয়টা ক্রিকেটে বেশ পুরোনো। এমসিসির আইনে ১৭৯৮ সালের আগে ডেড বলের কোন উল্লেখ ছিল না। যে সব ঘটনায় এখন ডেড বল ধরা হয়, তখন সেগুলোকে সাময়িক স্থগিত রাখা হয়েছে বলা হত। ১৭৯৮ সালে সর্বপ্রথম ‘ডেড বল’ শব্দটি যুক্ত হয়। তবে এই আইন আরো মজবুত করে আরো উন্নত করা হয় ১৮৯৯ সালে। তার পিছনে রয়েছে দু’টি মজার গল্প। 
১৮৭৮ সালে ক্লিফটন কলেজের মাঠে গ্লস্টারশায়ারের সঙ্গে সারের ম্যাচ হচ্ছিল। সারের এক ফিল্ডারের থ্রো ডব্লিউ জি গ্রেসের জামার পকেটে ঢুকে যায়। ততক্ষণে তিনি দৌড়ে তিন রান নিয়ে ফেলেছেন। এরপর তিনি কিছুতেই বল বার করতে দিচ্ছিলেন না এবং দৌড়ে দৌড়ে আরো তিনটে রান নিয়ে নেন। শেষ পর্যন্ত ফিল্ডাররা জাপটে ধরে তাকে থামিয়ে তার পকেট থেকে বল বার করে। ম্যাচের দুই আম্পায়ার ছিলেন উইলিয়াম মর্টলক এবং চার্লস পুলিন। তারা শেষ পর্যন্ত দেশের তিনটি রান যোগ করার নির্দেশ দেন। 
তবে এর থেকেও সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে অস্ট্রেলিয়ায় ১৮৮৫ সালে। নিউ সাউথ ওয়েলসে প্রায় ভিক্টোরিয়া রাজ্যের সীমানার ঘেঁষে টোকামওয়াল বলে একটি জায়গা আছে। সেখানে টোকামওয়াল ও নুমুরখা নামে দুটি দলের মধ্যে ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছিল। রিভেরিনা অ্যাডভারটাইজার (৬/১/১৮৮৫) নামে একটি পত্রিকায় এই ম্যাচের বিবরণ পাওয়া যায়। নুমুরখার একজন ব্যাটার জোরে শট মারলে সেটি উল্টো দিকের দাঁড়িয়ে থাকা নন-স্ট্রাইকারের জামায় ঢুকে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বোলার জাপটে ধরে নন-স্ট্রাইকারকে। সেই নন-স্ট্রাইকার তো নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এদিকে শুধু বোলার নয়, ফিল্ডিং দলের অধিনায়ক সহ গোটা পাঁচ ছয় এক ফিল্ডার তাকে জাপটে ধরে। খেলা তখন ক্রিকেট না রাগবি বোঝাই দায়। এসব দেখে প্যাভিলিয়ন থেকে নুমুরখার একজন ক্রিকেটার বেরিয়ে আসে এবং রীতি মতন বিপক্ষে ৫-৬ জনের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু করে দেয়। শেষ পর্যন্ত সেই নন-স্ট্রাইকার কোনরকমে উঠে দাঁড়ান। আম্পায়ার তাকে 'হ্যান্ডলিং দ্যা বল' আউট দিয়ে দেয়। নুমুরখার অধিনায়ক এতে প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে দল নিয়ে মাঠ ছেড়ে চলে যান বিপক্ষের দিক থেকে 'কোনরকম আতিথেয়তার লক্ষণ দেখা যায়নি’ এই অভিযোগে। 
এর ১৫ বছর পর ১৮৯৯ সালে ১৮৮৪ সালের আইনের '৩৩-এ' ধারা সংশোধিত করে লেখা হয়, ‘কোন বল যদি ব্যাটে লেগে বা না লেগে ব্যাটারের জামাকাপড়ে আটকে যায়। তাহলে সেটি ডেড বল হবে।’
ক্রিকেটের ডেডবলের ইতিহাসের সঙ্গে এমনই সব মজার ও নাটকীয় ঘটনা জড়িয়ে গেছে। এশিয়া কাপের সুপারফোরের ম্যাচের নাটকীয়তা কোন নতুন ব্যাপার নয়।

Comments :0

Login to leave a comment