কোথায় গেল পানীয় জল প্রকল্প, গরীবের জমির পাট্টা, যানজটমুক্ত শিলিগুড়ি শহর সহ শিলিগুড়িতে তৃণমূল পরিচালিত পৌর বোর্ডের নানা প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি পূরণ না হলে প্রতিশ্রুতিভঙ্গের বিরুদ্ধে গরীব মানুষদের নিয়ে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাওয়া হবে। তৃণমূলের উন্নয়ন স্তব্ধতা, ব্যার্থতা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো আওয়াজ উঠলো দার্জিলিঙ জেলা বামফ্রন্টের ডাকে নাগরিক কনভেনশনে। শনিবার বিকেলে শিলিগুড়ি মিত্র সম্মিলনী হলে নাগরিকদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, নির্বাচনের আগে শহরবাসীকে দেওয়া কোন প্রতিশ্রুতিগুলির একটিও বাস্তবায়িত হয়নি।
শহরের উন্নয়নের প্রশ্নে পৌর পরিষেবা প্রদানে দায়দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছে বর্তমান পৌর বোর্ড। পৌর পরিষেবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার দায় তৃণমূল কংগ্রেসকেই নিতে হবে। এর বিরুদ্ধে ওয়ার্ড ভিত্তিক নাগরিক সভা করা হবে।
শিলিগুড়ির নগর জীবনের সমস্যাগুলি নিয়ে নাগরিক আন্দোলন, স্বাক্ষর সংগ্রহ ও নাগরিক সংগঠন গড়ে তোলার পাশাপাশি শহরের শিক্ষা, সংষ্কৃতি, খেলাধূলার পরিকাঠামো উন্নয়ন, মহানন্দা নদী সংরক্ষন, বেআইনী নির্মান সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়াকে সামনে রেখে নাগরিকদের সামনে কনভেনশনের মূল প্রস্তাব উত্থাপন করে মুন্সি নুরুল ইসলাম বলেন, কর্পোরেশনের বর্তমান বোর্ড বামফ্রন্ট কাউন্সিলারদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরন করছে।
কনভেনশনের সভাপতি সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, পৌর কর্পোরেশনের দায়িত্ব পাবার পর থেকে শুরু করে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড আজ পর্যন্ত কোন দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেনি। পানীয় জল সহ পৌর পরিষেবা বিঘ্নিত হয়েছে বারবার। জরুরী পরিষেবা দেবার সময় খেলা মেলা কার্নিভাল উৎসবের ফিতে কাটতেই ব্যস্ত থেকেছেন মেয়র ও মেয়র পারিষদরা। ফলে পৌর পরিষেবাতে ঘাটতি থেকেছে। পরিকল্পিতভাবে শহরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিলিগুড়ি শহরের উন্নয়নের ধারা গত এক বছর সময়ে কিভাবে থমকে গেছে তা নাগরিকদের অভিজ্ঞতায় আছে। সাধারন গরীব মানুষের সাথে প্রতারনা করা হচ্ছে। শিলিগুড়ি শহরে আমরা বামপন্থীরাই ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছি। প্রসাধনী উন্নয়নের কাজ চলছে।
শহর জঞ্জালের স্তূপে মুখ ঢেকেছে। শহর জুড়ে অসামাজিক কাজ বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলার অবনতি, তৃণমূলের দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, শহরবাসীর দুর্দশা ও হয়রানি চলছেই। রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার গণতন্ত্র বিকাশের পথ একেবারেই রুদ্ধ করে দিয়েছে। আর কেন্দ্রের সরকার রেল থেকে শুরু করে বীমা ব্যঙ্ক সব কিছুই বিক্রি করে দিচ্ছে। শিলিগুড়িতে প্রকৃত উন্নয়নের কান্ডারি বামপন্থীরাই। বস্তি উন্নয়ন হয়েছে বামপন্থীদের হাত ধরেই। শহরের অরাজকতার কথা তুলে ধরে বলেন, শহরের প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের পৌঁছে যেতে হবে। শুধুমাত্র শহরের উন্নয়নই নয়, বস্তির মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থারও কোন উন্নতি হয়নি। সবচাইতে বেশী অবহেলিত বস্তির মানুষ। নাগরিকদের মতামত বিনিময়ের মাধ্যমে নাগরিক সভার সমৃদ্ধ হবে বলেই তিনি আশা প্রকাশ করেন।
নাগরিক সভার মূল প্রস্তাব নাগরিক সংগঠন গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে অশোক ভট্টাচার্য বলেন, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের সময় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, পৌর কর্পোরেশন, এসজেডিএ এবং নাগরিক অংশগ্রহনের মিলিত প্রচেষ্টায় উন্নয়নের কাজ গতি পেয়েছিলো। শহরের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশন ও এসজেডিএ একে অপরের পরিপূরক। তৃণমূলীরা দুই সংস্থাকেই দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এসজেডিএ—তে ২০০কোটি টাকার নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে ডবল ইঞ্জিন কথাটি তৃণমূলীদের প্রচারে থাকলেও আসলে কাজ করার কোন সদিচ্ছাই নেই ওদের। সভায় নগরায়নের বিভিন্ন পর্যায় বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছেন তিনি। বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়ে রাজ্যের পৌরসভাগুলিতে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। নির্ধারিত সময় পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ৭৪তম সংবিধান সংশোধনের মূল জায়গায় আঘাত হানছে কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার। নব্য উদারিকরন আর্থিক নীতি নিয়ে চলছে কেন্দ্র সরকার। রাজ্য সরকারও সেই পথেই এগোচ্ছে। পরিষেবাকে বাজারিকরন করা হচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে নাগরিক সমাজ। প্রশ্রয় পাচ্ছে প্রমোটার, জমির দালাল ও মাফিয়া রাজ। উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএম নেতা জয় চক্রবর্তী দিলীপ সিং ফরওয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বোস।
সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা সম্পাদক সমন পাঠক বলেন, রাজ্য জুড়ে গণতন্ত্র আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। বিপন্ন গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হবে এবং শিলিগুড়ি শহরকে বাঁচাতে হবে। কেন্দ্র ও রাজ্যে অধিষ্ঠিত দুই সরকার একের পর এক মানুষের স্বার্থবিরোধী নীতি গ্রহন করে চলেছে। সাধারন গরীব মানুষের জীবন জীবিকা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলেছে। কিন্তু কথার সাথে কাজের কোনই মিল নেই। এখনও বিরোধী দলে থেকেও আমরাই শহরের মানুষের দাবিদাওয়া ও সমস্যাকে তুলে ধরে প্রতিনিয়ত আন্দোলন করছি।
নাগরিক কনভেনশনে উপস্থিত বিভিন্ন ওয়ার্ডের নাগরিকেরা সভার প্রস্তাবের সমর্থন জানিয়ে পয়েন্ট আকারে তাদের মতামত তুলে ধরেছেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আরএসপি'র তাপস গোস্বামী, সিপিআইএমএল'র বাসুদেব ভট্টাচার্য, অধ্যাপক সঞ্জীবন দত্ত রায়। পৌর এলাকার নাগরিক পরিষেবা ও শহরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে নাগরিকদের মতামত গ্রহনের লক্ষ্যে নাগরিক সভায় উপস্থিত ছিলেন প্রখ্যাত টেবিল টেনিস কোচ ভারতী ঘোষ ঘোষ সহ সিপিআই(এম) নেতা জয় চক্রবর্তী দিলীপ সিং ফরওয়ার্ড ব্লকের অনিরুদ্ধ বোস প্রমুখ।
Comments :0