এই সরকার পড়বে। ফিরে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই। পারিবর্তনের যে স্লোগান উঠেছে, এটাকে সুসংহত করতে এগিয়ে আসুন। রাজ্যের প্রান্তে প্রান্তে ভোটারদের প্রতি এই আহ্বান জানালেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। রবিবার কমলাসাগর বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিআই (এম)’র জনসভায় বক্তব্য রাখছিলেন সিপিআই (এম) পলিট ব্যুরো সদস্য।
পর্যটনের জন্য খ্যাত এই বিধানসভা কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় গ্রামীণ বাজার মধুপুরে সমাবেশ হয়। এদিন বিকালের সমাবেশ ঘিরে বেশ সাড়া ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। আগরতলা-সাব্রুম সড়ক থেকে কমলাসাগরমুখী ঐ রাস্তায় স্থানীয় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম এখন অটো রিক্শা। গত পাঁচ বছরে এই রুটের সব বাস উঠে গেছে। ছোট যাত্রী গাড়ির সংখ্যাও কমেছে। মূলত আর্থিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় ধীরে ধীরে যোগাযোগে তার প্রভাব পড়ে। মধুপুর বাজারে পৌঁছানোর খানিক আগে খোলা মাঠে সভার আয়োজন করা হয়েছিল। বিরোধী দলের সভায় লোকসমাগম আটকাতে রাস্তার মাথা থেকে কমলাসগর পর্যন্ত অটো সার্ভিস জোর করে বন্ধ করে রেখেছিল শাসক দল। বিরোধীদের ঠেকাতে শাসক দলের এই অপচেষ্টা বিফলে গেছে। বহু কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বহু দূরের গ্রামের মানুষও জনসভায় মিশেছেন। কমলাসাগর, ফুলতলি, কামথানা এবং গোকুলনগর এই চারটি পয়েন্টে তারা জড়ো হয়ে সেখান থেকে মিছিল করে জমায়েতে পৌঁছান। দীর্ঘদিনের বাম দুর্গ বলেই পরিচিত কমলাসগর বিধানসভা কেন্দ্র। ২০১৮ সালে সরকার বিরোধী প্রবল ঝোঁকের মধ্যেও এই দুর্গ অটুট ছিল।
পাঁচ বছরে শাসক দলের অত্যাচারের শত শত ঘটনা আছে। তারপরও লাল পতাকাকে সমহিমায় উড্ডীন রাখতে জানকবুল লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছেন বাম নেতা-কর্মীরা, রবিবারের জনসভা তার একটা ঝলক দেখিয়ে গেছে৷
সিপিআই (এম) পলিট বুরো সদস্য মানিক সরকার ছাড়াও জনসভায় বক্তব্য রাখেন পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যা রমা দাস, সিপাহীজলা জেলা সম্পাদক ভানুলাল সাহা, বিধায়ক নারায়ণ চৌধুরি। কমলাসাগরের জনসভায় ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার প্রশ্ন করেন, ওবিসি সংরক্ষণের কী হলো? শাসকদল ও রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চেয়েছেন তিনি। মানিক সরকার বলেন, ত্রিপুরায় ওবিসি সংরক্ষণের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন। কারণ এখানে ইতোমধ্যে এসসি এবং এসটি সংরক্ষণ ৪৮ শতাংশ আছে। ৫০ শতাংশের বেশি সংরক্ষণ করতে পারে না রাজ্য। বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার।
দিল্লিতে সর্বদলীয় প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছিল। বিধানসভা ভোট এলে আগে বিরোধী দলে বসা এক বিধায়ক বার বার এই প্রসঙ্গ টানতেন। দল পালটে নতুন জামা পরে মন্ত্রী হয়েছেন। গত পাঁচ বছরে এই সরকারের মন্ত্রিসভায় ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে কী কথা বলেছেন? বিধানসভায় এনিয়ে কথা বলেননি কেন? জবাব চেয়েছেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে বামফ্রন্ট বিধায়কদের তোলা প্রশ্নের জবাব দেয়নি সরকার। অথচ এরা ভোটের আগে এনিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। তপসিলি জাতি, উপজাতি, ওবিসি, সংখ্যালঘু অংশের মানুষকে ঠকিয়েছে এই সরকার।
বিরোধী দলনেতা বলেন, এডিসি আমরা তৈরি করেছিলাম। ঐ এলাকার বসিন্দাদের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ উপজাতি অংশের মানুষ। একসময়ের অনাহার এখন অতীত। রাজ্য সরকারের প্রধান সচিব থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষক কোথায় নাই উপজাতিরা। এখন এডিসি-কে শুকিয়ে মারছে সরকার। মানিক সরকার বলেন, আইপিএফটি উপজাতি ভোট বিজেপি’র দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। তাদেরই হজম করে ফেলেছে বিজেপি। অন্যদল থেকে সেদিকে যাওয়া ভোট ফিরে আসছে।
তিনি বলেন, ভোটের মুখে শাসক দল আবার প্রলোভন দেখাবার চেষ্টা করছে। তাতে চিঁড়ে ভিজবে না। এটা বুঝতে পেরে সন্ত্রাস করার চেষ্টা করছে। ভোট হরণের চেষ্টা প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে ঘরে ঘরে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্য বুথে বুথে প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
যুবকদের যে অংশকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ব্যবহার করছে শাসক দল তাদের ভুল পথ থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি বলেন, মায়ের গর্ভ থেকে কেউ সন্ত্রাসী হয়ে জন্মায়নি। রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য পেশিশক্তি হিসাবে তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য ফুরোলে ছুঁড়ে ফেলে দেবে। অনুশোচনা থাকলে আমরা হাত বাড়িয়ে দেব।
Comments :0