MODI GILR CHLID'S DAY

পরপর অত্যাচারের ঘটনায় নীরব, কন্যাসন্তানদের স্তুতি মোদীর মুখে

জাতীয়

 ভাষণ দেওয়ার বা বক্তব্য রাখার সময়ে কন্যাসন্তানদের প্রশংসায় তিনি পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন, মহিলাদের জন্য তাঁর শ্রদ্ধার মনোভাব প্রকাশ করেন অকৃপণভাবে। সেই পথে হেঁটেই বুধবার জাতীয় কন্যাসন্তান দিবসে দেশের কন্যাসন্তানদের ‘অদম্য উদ্দীপনা’ ও ‘গুণ’-কে অভিবাদন জানিয়ে তাদের ‘পরিবর্তন-প্রতিভূ’ বলে অভিহিত করলেন তিনি। কিন্তু বাস্তবে দেশের কন্যাসন্তান বা মহিলারা যখন বিজেপি’র লোকজনের হাতে নিপীড়নের শিকার হন, বিজে‍‌পি-শাসিত রাজ্যে যখন কন্যাসন্তানদের উপর শারীরিক অত্যাচার হয়, তখন তিনি মুখে কুলুপ এঁটে থাকেন।
এদিন জাতীয় কন্যাসন্তান দিবসে এক্স হ্যান্ডেলে তিনি বলেছেন, ‘‘আমাদের দেশের কন্যাদের সাফল্য উদযাপনের দিন আজ।’’ অথচ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগীররা যখন বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তুলে বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন, রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন, এমনকী কেউ কেউ পদকও ফিরিয়ে দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী তখন মহিলা কুস্তিগীরদের সাফল্যকে উপেক্ষা করে নীরব থেকেছেন, বিজেপি সাংসদের গায়ে একটি আঁচ লাগতে দেননি। বরং মহিলা কুস্তিগীরদের আন্দোলন ভাঙতে মোদী মন্ত্রীসভার দ্বিতীয় ক্ষমতাবান ব্যক্তি অমিত শাহ তাঁর পরিচালনাধীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশকে না‍‌মিয়ে দিয়েছেন।  
প্রধানমন্ত্রী এদিন দাবি করেছেন, শেষ এক দশকে তাঁর সরকার এমন একটি দেশ গঠনের লক্ষ্যে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলেছে, যেখানে প্রত্যেক কন্যাসন্তানের সামনে শিক্ষার সুযোগ এবং বিকশিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। বাস্তবে এ‍‌ই সময়ে হাথরস, উন্নাও, কাঠুয়ায় দেশের কন্যাসন্তানরা বিভৎস অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তাদের পরিবারের উপর নিপীড়ন নামিয়ে এনেছে বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের লোকজন, ধর্ষকদের পাশেও দাঁড়িয়েছে তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখন নিশ্চুপ থেকেছেন। ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে দিল্লির লাল কেল্লা থেকে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী জোর গলায় মহিলাদের সম্ভ্রম রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, মহিলাদের প্রতি সম্মান দেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাই নারীশক্তির পাশে থাকা জরুরি। আর সেই দিনই গোটা দেশকে স্তম্ভিত করে তাঁর সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সম্মতিতে গুজরাটের বি‍‌জেপি সরকার মুসলিম মহিলা বিলকিস বানোর ১১ জন হিন্দু ধর্ষককে গোধরা জেল থেকে মুক্তি দিয়েছিল। বিজেপি-শাসিত মণিপুরে জাতিদাঙ্গায় একের পর এক মহিলা অত্যাচারিত হয়েছেন, দুই কুকি মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন, মহিলাদের সম্ভ্রম হানির বিরুদ্ধে তাঁর মুখ থেকে একটি শব্দও শোনা যায়নি। বিজেপি’র সরকার বলে মণিপুরে মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংকে নিদেনপক্ষে ‘রাজধর্ম’ পালনের পরামর্শটুকুও তিনি দেননি, ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যার সময়ে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কোনও সক্রিয়তা না দেখালেও ওই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যেমন পরামর্শ দিয়েছিলেন সেই সময়ের প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। 
প্রসঙ্গত, প্রতি বছর ২৪ জানুয়ারি ভারতে জাতীয় কন্যাসন্তান দিবস পালন করা হয়। দেশের প্রতিটি পরিবারে কন্যাসন্তানদের অধিকার ও কল্যাণ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করাই এই দিনটি পালনের উদ্দেশ্য। ২০০৮ সালে এই দিনটি পালন শুরু করেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকারের মহিলা ও শিশু বিকাশ মন্ত্রক। 
 

 

 

Comments :0

Login to leave a comment