মৃত প্রসূতি মামণি রুইদাসের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট বলছে, ওষুধের বিষক্রিয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাহলে ডাক্তারদের গাফিলতি কোথায় হলো, প্রশ্ন তুললেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। তাঁদের প্রশ্ন, এত দিন ওই সংস্থার ওষুধ হাসপাতালে চলল কী করে আর কার নির্দেশে চলল। শুক্রবার অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস সহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের যুক্ত মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস-এর নেতৃস্থানীয় চিকিৎসকরা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে যান। সেখানে তাঁরা চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠেন। তাঁদের বলেন, ‘‘আমরা স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাছে যুক্তি নির্ভর ব্যাখ্যা দাবি করছি। এভাবে জাল স্যালাইনকাণ্ড থেকে দৃষ্টি ঘোরানো যাবে না।’’
উল্লেখ্য, বিষাক্ত স্যালাইনে এক প্রসূতির মৃত্যু ও আরও তিন প্রসূতির অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনায় মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হয়েছিল বৃহস্পতিবারই। শুক্রবার তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয় নানা ধারা দিয়ে। তার মধ্যে রয়েছে ১০৫ নম্বর ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ সহ কর্তব্যে ও দায়িত্বে গাফিলতি ও অবহেলার অভিযোগ ইত্যাদি। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে চিকিৎসক মহল। শুক্রবার সংগঠনের তরফে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছান ডাঃ মানস গুমটা, ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ পবিত্র গোস্বামী সহ অন্যান্য চিকিৎকরা। তাঁরা সেখানে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন, কথা বলেন বহু সাধারণ মানুষের সঙ্গেও। চিকিৎসকরা প্রশ্ন তোলেন, জাল ওষুধ নিয়ে স্বাস্থ্য প্রশাসনের মুখে কুলুপ, অথচ ডাক্তারদের উপর নানা ফতোয়া কেন? এসব কি নজর ঘোরানোর পদক্ষেপ? দায় এড়ানোর পদক্ষেপ?
এদিকে চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার পর বৃহস্পতিবার রাতেই কর্মবিরতিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গাইনোকোলজি ও অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে যেহেতু এখনও সরকারি নোটিস হাসপাতালে পৌঁছায়নি, তাই কর্মবিরতি সাময়িকভাবে মুলতবি রাখেন তাঁরা। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস-এর পক্ষ থেকে অধ্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে সিনিয়র চিকিৎসকরা প্রশ্ন তোলেন, প্রসূতির মৃত্যু ও অসুস্থতার ঘটনায় সিনিয়র চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন কি ছিলেন না, তা তো তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু ময়নাতদন্তের রিপোর্ট যে বলছে, জাল বিষাক্ত ওষুধের প্রয়োগ ঘটেছে, সেই বিষয়ে প্রশাসন চুপ কেন?
এদিন সকালে ১২ জনের সিআইডি দল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সহ হাসপাতাল চত্বরে চক্কর মারে। এর পিছনে আরও কিছু তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্য না কি ক্যাম্পাস জুড়ে ক্ষুব্ধ জনরোষ আটকানোর কৌশল ছিল, প্রশ্ন তুলেছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। এরপর কোতোয়ালি থানায় গিয়ে সিআইডি দল নানা কাগজপত্র জোগাড় করে। ইতিমধ্যে জানা যায়, কেবল মাত্র ৬ জন সিনিয়র চিকিৎসককে সাসপেনশনের চিঠি ধরানো হয়েছে। সেই তালিকায় সদ্য প্রাক্তন সুপার জয়ন্ত রাউত ছাড়াও রয়েছেন প্রসূতি বিভাগের সদ্য প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডাঃ মহঃ আলাউদ্দিন, ডাঃ দিলীপ কুমার পাল, ডাঃ হিমাদ্রি নায়েক, ডাঃ সৌমেন দাস ও ডাঃ পল্লবী বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু বাকি ৬ জন পিজিটি জুনিয়র চিকিৎসক ডাঃ মৌমিতা মণ্ডল, ডাঃ ভাগ্যশ্রী কুণ্ডু, ডাঃ সুশান্ত মণ্ডল, ডাঃ পূজা সাহা, ডাঃ মণীশ কুমার ও ডাঃ জাগৃতি ঘোষকে এখনেও পর্যন্ত সাসপেনশনের চিঠি ধরানো হয়নি। ফলে জুনিয়র চিকিৎসকরা কর্মবিরতির কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রেখে এদিন দুপুরে আবারও এক সভা সংগঠিত করেন। পরিস্থিতির উপর নজর রেখে তারপর পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে এই সভা চলাকালীন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টরস-এর প্রতিনিধিরা প্রশাসনিক নানা দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে দেখা করেন। সংগঠনের তরফে ঘটনার প্রকৃত তদন্তের দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত মতো কর্মসূচিকে পূর্ণ সমর্থন করবে জেপিডি। তাতে যোগও দেবে সংগঠন। চিকিৎসকদের সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তকে দুর্নীতিবাজ ও জাল ও নিম্ন মানের ওষুধ কারবারীদের আড়াল করার জন্য স্বাস্থ্য দপ্তরের নগ্ন পদক্ষেপ বলে ক্ষোভ উগরে দেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। আইনি লড়াই সহ অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিবাদী আন্দোলন হবে বলে জানান তাঁরা।
Comments :0