Uttorayon post editorial

আজ উত্তরায়ন দিবস, প্রকৃত উৎসব দিবস

সম্পাদকীয় বিভাগ

 সৌরভ চক্রবর্তী 
এই বৃহস্পতিবার উত্তরায়ন দিবস বা উইন্টার সলস্টিস, কথাটা এসেছে ল্যাটিন থেকে। সলস মানে সূর্য আর স্টিস মানে স্থির দাঁড়িয়ে যাওয়া। সূর্যকিরণ পৃথিবীর শরীর বেয়ে দক্ষিণে যেতে যেতে শেষ প্রান্তে মকর ক্রান্তি রেখা ছুঁয়ে কয়েক মুহূর্ত বিরতি নেয়। বিরতি নেবার পর সূর্যরশ্মি আবার উত্তরমুখী যাত্রা শুরু করে। সূর্যালোকের দক্ষিণমুখী পরিক্রমায় ক্রমশ দিনের দৈর্ঘ্য কমতে কমতে আজ সব থেকে ছোট দিন। আজকের পর থেকে বড় হতে থাকবে দিন।

উত্তরায়ন দিবস ঋতু পরিবর্তনের নিয়মে বাঁধা
নিজের কক্ষতলের সাথে পৃথিবীর সাড়ে তেইশ ডিগ্রি কোণে হেলে থাকা এবং সূর্যকিরণের উত্তর থেকে দক্ষিণে আবার দক্ষিণ থেকে উত্তর পরিক্রমার জন্যই ঋতু পরিবর্তন। প্রকৃতির এই অত্যাশ্চর্য নিয়মে এই বিশ্বে প্রাণের খেলা। ঋতু বৈচিত্রের জন্যই মাঠে মাঠে সোনার ফসল আর আমাদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় উপাদান। মনুষ্য সভ্যতায় মানুষের জীবন-জীবিকার সাথে সরাসরি যোগ এই অতুলনীয় প্রাকৃতিক ঘটনার। উত্তরায়ন দিবসে তাই  নিখিল বিশ্বের মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে এই দিনে। হাতে ফসল বিক্রির অর্থ, নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে সহনীয় শীতের  মনোরম মরশুম আর শীতের দেশে অর্ধেক শীত পেরিয়ে বাকি কঠিন শীতের মধ্যবর্তী সময়ের উৎসব।

উত্তরায়ন দিবস এবং মকর সংক্রান্তি
চীন, ভিয়েতনাম, হঙকঙ, তাইওয়ান, কোরিয়া থেকে ইরান, আফগানিস্থান, তাজিকিস্তান, আজারবাইজান ওদিকে রোমান পেগান, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড। আয়ারল্যান্ডের  ‘নিউগ্র্যাঞ্জ’ এবং ইংল্যান্ডের ‘স্টোনহেঞ্জ’ নব্য প্রস্তর যুগের আশ্চর্য নির্মাণ। মানুষজন সেখানে উত্তরায়নের  সূর্যোদয় দেখতে মিলিত হন। ‘নিউগ্র্যাঞ্জ’- এর এক ছিদ্রপথে উত্তরায়নের সূর্যোদয়ের একগুচ্ছ রশ্মি ভেতরে অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করে তা স্থায়ী হয় ১৭ মিনিট। ভাবতে আশ্চর্য লাগে পাঁচ হাজার বছরেরও আগে ব্রোঞ্জ যুগের মানুষ উত্তরায়ন দিবসকে কি মহিমার চোখে দেখত।
বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে উৎসব শুধু ভারতেই মাহাত্ম্যপূর্ণ উত্তরায়ন উৎসব নেই। আয়ারল্যান্ডের বিস্ময় নির্মাণ ‘নিউহেঞ্জ’ উত্তরায়ন দিবসের সূর্যোদয়ের রশ্মির বিস্ময়কর শোভা দেখার জন্য, নব্য প্রস্তর যুগে ওই ধরনের নির্মাণ করা হয়েছিল কারণ তখন প্রকৃতির নিয়ম কানুন জানার প্রণোদনা ছিল সামাজিক, আজ বিজ্ঞান এবং বিজ্ঞান মনস্কতা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন, এ দায় কার? দায় ব্যবস্থার, দায় রাষ্ট্রের। ভারতে মহাসমারোহে উৎসব পালিত হবে মকরসংক্রান্তির দিনে, সেখানে দেখা যাবে সরকারি উদ্যোগ। মকর সংক্রান্তির জ্যোতির্বিদ্যাগত মাহাত্ম্য কী? আগামী ১৪ জানুয়ারি সূর্য ধনু রাশি থেকে মকর রাশিতে অতিক্রমণ ঘটাবে। এই প্রাকৃতিক ঘটনার সাথে মানব সভ্যতার কোনও যোগসূত্র আছে? না, নেই। মকর রাশিতে সূর্য গেল আর না গেল তাতে মানুষের জীবন-জীবিকার কোনও প্রভাব পড়ে না। জীবন-জীবিকার সাথে যোগ মকর রাশি নয় মকরক্রান্তি রেখার, যে কারণে আজ হচ্ছে উত্তরায়ন দিবস।

একই দিনে ছিল উত্তরায়ন দিবস এবং মকর সংক্রান্তি
ভারতে  ভ্রান্তি সহ তুলনামূলকভাবে ভালো জ্যোতির্বিদ্যা চর্চা শুরু হয় বরাহমিহিরের সময় ৬০০ খ্রিস্টাব্দে, বরাহমিহিরের সময়েই ভাগ্য শুভ অশুভ ইত্যাদির সাথে রাশিকে যুক্ত করা হয়। তখনই ভারতে জ্যোতির্বিদ্যা থেকে জ্যোতিষবিদ্যা বিচ্ছিন্ন হয়। এই সময়তেই উত্তরায়ন দিবস এবং মকর সংক্রান্তি বা রবির মকরে প্রবেশ একই দিনে হতো। ভারতীয় পঞ্জিকাকারদের অজ্ঞতাজনিত ভ্রান্তি উত্তরায়ন দিবসের মাহাত্ম্যকে নিয়ে রবি-মকরের ঘটনার সাথে যুক্ত করে মকর সংক্রান্তি নিয়ে মেতে রইলো। বিচ্ছিন্ন হলো উত্তরায়ন দিবস।

কেন এই বিচ্ছিন্নতা? 
পৃথিবীর আহ্নিক গতি এবং বার্ষিক গতির পরেও আরও একটা গতি আছে- পৃথিবীর নিজের অক্ষের গতি। অক্ষটিকে যদি মহাকাশে বর্ধিত করে দেওয়া যায় তাহলে সেই অক্ষ মহাকাশে এক কাল্পনিক বৃত্ত রচনা করবে, এক অবস্থান থেকে শুরু করে পুনরায় একই অবস্থানে ফিরে আসতে বা বৃত্ত শুরু করে শেষ করতে লাগবে প্রায় ২৬,০০০ বছর। এই কারণেই আজকের শেষ মহাবিষুব আবার ২৬ হাজার বছর পরে এই একই অবস্থানে ফিরে আসবে। এই ব্যাখ্যা করেছিলেন বিজ্ঞানী নিউটন। একেই বলে অয়নচলন বা precession of equinoxes। আমাদের দেশের পঞ্জিকাকারেরা  সূর্যকে ধরে অয়নচলনকে হিসাবের মধ্যে রেখে সায়ন বর্ষের (tropical year) ধরে গণনা করতে অক্ষম। তারা গণনা করেন নিরয়ন বর্ষ (sidereal year), একটি নির্দিষ্ট নক্ষত্রের সাপেক্ষে বর্ষ  গণনা। সায়ন বর্ষ  আর নিরয়ন বর্ষের পার্থক্যে মহাজাগতিক ঘটনাবলীর গণনায় চরম ভ্রান্তি হয়।
মেঘনাদ সাহা বলছেন, ‘‘নিরয়ন বৎসরের পরিমাণে যে ভুল ছিল দুয়ে মিলিয়া তাহাদের বৎসরমান প্রকৃত সায়ন বর্ষমান অপেক্ষা প্রায় ০.০১৬ দিন বেশি হয় এবং প্রায় ১৪০০ বৎসরে হিন্দু বর্ষমান প্রায় ২৩  দিনে পৌঁছাইয়াছে। হিন্দু পঞ্জিকায় ৩১ চৈত্রকে মহাবিষুব সংক্রান্তি বলা হয় কিন্তু বাস্তবিক মহাবিষুব সংক্রান্তি হয় ৭ কি ৮  চৈত্র। ’’
সখেদে তিনি বলছেন, ‘‘বাস্তবিক পক্ষে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের পর হইতে হিন্দু জ্যোতিষিক পণ্ডিতগণ বেহুলার মত মৃত সভ্যতার শব আলিঙ্গন করিয়া নিশ্চেষ্ট হইয়া বসিয়া আছেন এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত অতি ভুল পদ্ধতিতে বর্ষ গণনা করিতেছে।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতিষ? 
স্বাধীনোত্তর ভারতবর্ষে এই প্রথম কোনও কেন্দ্রীয় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতিষ শাস্ত্র শিক্ষা দেওয়া এবং শিক্ষান্তে ডিগ্রি দেওয়ার ঘোষণা হলো। এ বছর ২৪ জুন কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি দু’বছরের দূরশিক্ষার (এমএ, জ্যোতিষ) কোর্সে  ভর্তি হওয়ার আবেদন জানিয়ে অনলাইন ঘোষণা করল। ‘পঞ্চাঙ্গ এবং মুহূর্ত’, ‘কুণ্ডলী গঠন’ ‘গ্রহণের উপলব্ধি’  ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই প্রথম অপবিজ্ঞান বলে স্বীকৃত, যার কোনও বাস্তব প্রমাণ নেই, পরিসংখ্যান  পরীক্ষায় প্রমাণিত নয় সেই জ্যোতিষশাস্ত্রকে ‘সমাজের উপকার হবে’  ‘কর্মসংস্থান হবে’ ইত্যাদি বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। 
এই ঘোষণায় ভারতের সংবিধানের ৫১(এ) এইচ ধারা কার্যত তার গুরুত্ব হারালো। ২০০১-এর  ২৩ ফেব্রুয়ারি যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী এবং মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন মুরলী মনোহর যোশী, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশন একটি নোটিফিকেশন জারি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে জ্যোতিষশাস্ত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। সে সময়ে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জয়ন্ত বিষ্ণু নারলিকার  বলেছিলেন, ‘এতে ভারতবর্ষকে মধ্যযুগে ফিরিয়ে দেওয়া হলো।’

প্রাচীন জ্ঞানের দোহাই দিয়ে বিজ্ঞানকে আটকানো
কোথায় চলেছি আমরা! প্রাচীন জ্ঞানের দোহাই দিয়ে এবারে কি আমাদের কোপার্নিকাসের আগের বিশ্বে নিক্ষিপ্ত করা হবে যখন আমাদের পূর্বপুরুষেরা বিশ্বাস করতেন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে?  জ্যোতিষশাস্ত্রে তো সূর্যকে গ্রহ বলেই বলা হয়েছে। তাহলে এরপর হয়তো সরকারি ভাষ্যে শোনা যাবে যে সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে প্রদক্ষিণ করে। কর্মসংস্থানের যুক্তিতেই যদি জ্যোতিষশাস্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে হয় তাহলে প্রেতচর্চা, ডাইনিবিদ্যা, অ্যালকেমি, ঝাড়ফুঁক, জল পড়া, তেল পড়া, বাটিচালান, নখদর্পণ- এসবও  বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত হোক! সাপের ওঝা, ভূতের ওঝারাই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্ব গ্রহণ করুন! ভারতের গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০-তে অবৈজ্ঞানিক, বিতর্কিত, উদ্বেগজনক তত্ত্বের সমাহার ঘটিয়ে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা এবং কাঠামোকে তছনছ করে দেওয়া হল এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের মতো অপ্রমাণিত এক শাস্ত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হলো।

জ্যোতিষ শাস্ত্র শাসকের হাতিয়ার
জ্যোতিষশাস্ত্র শাসকের কায়েমি স্বার্থের হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। দ্বিতীয় নগরায়ন থেকে উদ্ভূত কর্মফল জন্মান্তর অদৃষ্টবাদকে দার্শনিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছিল জ্যোতিষ। এদেশে তারপরে বরাহমিহির জ্যোতিষ বিজ্ঞান থেকে বিচ্ছিন্ন করে ভবিষ্যৎবেত্তা হিসাবে জ্যোতিষশাস্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কর্মফল জন্মান্তর অদৃষ্টবাদ যেমন শাসকের হাতিয়ার তেমনি জ্যোতিষশাস্ত্রও তাই। আজও জ্যোতিষশাস্ত্র তার গণনা থেকে অস্তিত্বহীন রাহু কেতুকে বাদ দিতে পারে না, সূর্যকে নক্ষত্র হিসাবে মান্যতা দেয় না। প্রাচীন সেই অজয় অমর বিচারবিযুক্তবাদের বাইরে যেতে পারে না। এ এক কায়েমি স্বার্থের  চিন্তাপ্রসূত হাতিয়ার।
মেঘনাদ সাহা বলেছেন “ তিথি  ইত্যাদি গণনা, শুভ অশুভ দিনের মতবাদ, কতকগুলি মধ্যযুগীয় ভ্রান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত এবং প্রচলিত হিন্দু পঞ্জিকা একটা কুসংস্কারের বিশ্বকোষ মাত্র।’’
রেনেসাঁর মহান দানকে অস্বীকার 


উত্তর আধুনিকতাবাদীরা ‘মেটা ন্যারেটিভ’-এর নামে নবজাগরণকে অস্বীকার করে। আর এই  ‘পোস্ট ট্রুথ’ জমানায় রেনেসাঁকে অস্বীকার করে তার পূর্ববর্তী পর্বকে অতীতের গৌরব নাম দিয়ে মানুষের চিন্তা চেতনাকে লাফ দিয়ে পেছনে নিয়ে যাবার ছক সাজানো হয়। নবজাগরণ আমাদের শিক্ষা দিয়েছিল এই জগৎ পরিবর্তনশীল। নবজাগরণ ফ্রান্সিস বেকনের পরীক্ষা পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে সত্যের সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে এই ভাষ্যকেই উচ্চে তুলে ধরেছিল। জন্ম নিয়েছিল আরোহ যুক্তি বিজ্ঞানের। রেনে দেঁকার্ত এনেছিলেন অবরোহ যুক্তি পদ্ধতি। নবজাগরণের দুকূলশ্রাবী ঢেউ শিল্পকলা সাহিত্য বিজ্ঞান এবং অর্থনীতিকে বদলে দিয়েছিল। এই ধাক্কাতেই এসেছিল ফরাসি বিপ্লব। রাজতন্ত্রের উচ্ছেদ  হয়েছিল। গণতন্ত্র এসেছিল তখনকার আধুনিক বণিকের হাত ধরে। মধ্যযুগ পেরিয়ে পৃথিবী প্রবেশ করেছিল আধুনিকতায়। আজ পুঁজিবাদের সঙ্কটে আধুনিকতার ভগীরথরাই কায়েমিতে রূপান্তরিত হয়েছে। তাই তারা পশ্চাৎগামী। তারা রেনেসাঁ টপকে কোপার্নিকাস গ্যালিলিও নিউটনকে টপকে পেছন পানে  দীর্ঘ লাফ দিতে উদ্যত। রেনেসাঁ  থেকে প্রাপ্ত মহামূল্যবান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, বিজ্ঞান আধারিত যুক্তি আজ আক্রান্ত। পক্ষান্তরে দেশের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে নব নব কৃত্রিম উপগ্রহ, চন্দ্রযান, মঙ্গল যান নিক্ষিপ্ত হচ্ছে দেশের মাটি থেকেই আবার বিজ্ঞানের বুনিয়াদি ক্ষেত্রে দেশের গবেষণাগারগুলি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অর্থ বরাদ্দের অভাবে রুগ্‌ণ হচ্ছে। আদতে আজ বিজ্ঞান গবেষণাও মুনাফা কেন্দ্রিক বাণিজ্যের স্বার্থে পরিচালিত। এই স্ববিরোধিতা রেনেসাঁ পূর্বের বণিক সমাজের ছিল না। আজকের বিজ্ঞানের সুফল সবার জন্য নয়, ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর জন্য, আর এই চিন্তাকেই কার্যকর করতে বৃহত্তর জনসমাজের চিন্তা-চেতনাকে পশ্চাৎগামী করে তুলবার অপকৌশলজাত পশ্চাৎগামী দর্শন আজ শাসকের হাতিয়ার। মধ্যযুগের দর্শন ছিল অ্যারিস্টটলের বেঁধে দেওয়া অনড় অজর ভূমণ্ডলের মেটাফিজিক্যাল দর্শন। পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত ভূমণ্ডল আর ঈশ্বরের প্রতিনিধি রাজা রূপ শাসককে কেন্দ্র করে আবর্তিত পৃথিবী। পৃথিবীর উপরের স্তরের গোলক ঈশ্বরের ইচ্ছায় অপরিবর্তনীয়। বৃহস্পতির চারটি উপগ্রহ আবিষ্কার তাই তখন নিষিদ্ধ গবেষণালব্ধ ফল। তাই গ্যালিলিওকে ইনক্যুইজিশনে  যেতে হয়েছিল একাধিকবার। সূর্য নয় পৃথিবী সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করে এই তথ্য কোপার্নিকাস মৃত্যুভয়ে মৃত্যুশয্যায় শায়িত হবার আগে পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারেননি।  শাসকের দর্শন মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁর সম্মুখে।
অদ্ভুত আঁধারকে অতিক্রম করে যাচ্ছি আমরা। বিজ্ঞান মনস্কতার শাণিত হাতিয়ারই পারে এই আঁধারকে দূর করতে। প্রাকৃতিক, সামাজিক যেকোনও ঘটনার বিজ্ঞান ভিত্তিক ব্যাখ্যার সাথে  মানুষকে যুক্ত করে বিজ্ঞান মনস্কতার প্রসার ঘটাতেই হবে। আজকের উত্তরায়ন দিবস আমাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে।  
 

Comments :0

Login to leave a comment