CYCLONE MOGA

কিভাবে জন্ম নিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোগা’
দেখুন ভিডিও

রাজ্য

CYCLONE MOGA ২০২০’তে আমফানে বিধস্ত কলকাতার ছবি দিলীপ সেনের সংগ্রহ থেকে।

অপরাজিত বন্দ্যোপাধ্যায়

ঘূর্ণিঝড় মোগার আদৌ ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠবে কিনা তা জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সোমবারের দিনের শেষে আবহাওয়া দপ্তর থেকে অবশ্য ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথের একটা প্রাথমিক রেখচিত্র দিয়ে দেওয়া হবে। আমফান-ইয়াসের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও সতেজ থাকায় দক্ষিণবঙ্গে উৎকন্ঠা থেকেই যাচ্ছে। 

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (‌আইএমডি) টুইট করে ২ মে জানিয়েছিলো দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি ঘূর্ণিঝড় আসতে পারে। এর ঠিক পরদিনই আলিপুরে আইএমডির পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা পরিষ্কার জানিয়ে দেন বঙ্গোপসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি শুধুই সময়ের অপেক্ষা। ৩ মে দেওয়া পূর্বাভাস জানিয়েও দেওয়া হয় শনিবার ঘূর্ণাবর্তের উৎপত্তি থেকে গোটা সিস্টেমের শুরু।

পূর্বাভাসকে মিলিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে আটটার সময় দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে দেখা মিলেছে ওই ঘূর্ণাবর্তের। রবিবার এটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা। সেটা যদিও হয়, তা নিয়ে আগ বাড়িয়ে রাজ্যের উপকূলবর্তী মানুষের চিন্তার কোন কারণ নেই। কেননা, রবিবার, ৭ মে, নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর তা দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর থেকে সরতে শুরু করবে। এটি যতই সরতে থাকবে ততই জল থেকে জলীয় বাষ্প শুষে নিজেকে শক্তিশালী করতে থাকবে। এরপর তা দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করতে থাকবে। 

নিম্নচাপটি সোমবার ৮ মে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা। আর তার জেরে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়ার গতি বাড়বে। সেখানে লাগাতার বৃষ্টির সঙ্গে সর্বাধিক ঘন্টায়  ৫০ কিলোমিটার বেগে শুরু হবে বাতাসের তাণ্ডব। ঘূর্ণিঝড় মোগাআদৌ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের দিকে থাকবে কিনা তা এখন পরিষ্কার নয়। সোমবার, ৮ মে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার পর তার প্রাথমিক গতিপথ এঁকে দিতে পারবেন আবহবিদরা।

দিল্লিতে আইএমডির সাইক্লোন সেন্টার শনিবার থেকেই রাত-দিন এক করে দিয়েছে। উপগ্রহ চিত্র মানলে, আগামী মঙ্গলবার, ৯ মে, গভীর নিম্নচাপটি মোগাঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হওয়ার কথা। এরপর একদিন বা দুদিন বঙ্গোপাসাগরের একই জায়গায় অবস্থান করে সে ডাঙা ছোঁয়ার চেষ্টা করবে। মনে করা হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি বাড়িয়ে উত্তর দিকে এগিয়ে যাবে। একেবারে শেষ পর্যায়ে তা পশ্চিম-মধ্য এবং উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরের ওপরে অবস্থান করবে। 

ওই জায়গাটি বার্মা উপকূলের বেশ কাছে থাকায় মনে করা হচ্ছে সেটি হয়ত ফিরতি পথে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গকে আঘাত করবে না। তবে ঘূর্ণিঝড় নিয়ে শেষ কথা বলার অধিকার প্রকৃতিরই। উপগ্রহ কিংবা গাণিতিক মডেলের অনুমানে একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। দেখা গেছে, গত চার বছরে মে মাসে চারটি বড় মাপের ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই চারটি ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে ২০২০ সালে আমফান আর ২০২১ সালে ইয়াসের বিধ্বংসী প্রভাব পড়েছিলো এরাজ্যে।

বঙ্গোপসাগরীয় ঘূর্ণিঝড়ে এরাজ্যকে পাশ কাটিয়ে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ কিংবা মেঘালয়ে চলে যাওয়ার ঘটনা রয়েছে। ২০১৯ সালেও ঘূর্ণিঝড় ফণী পশ্চিমবঙ্গ উপকূলকে ডিঙিয়ে চলে যায় ওডিশায়। সেখানে পুরীর উপকূলকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়। একমাত্র আমফানই দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপে আঘাত হেনেছিলো। তার জেরে প্রচুর ক্ষতি হয়েছে রাজ্য জুড়ে। সেই ক্ষতিকে এখনো সামলে উঠতে পারেননি সুন্দরবনসহ অনেক পিছিয়ে পড়া এলাকার মানুষ। তাই একটা বাড়তি আশঙ্কা।

মোগাআসুক আর নাই আসুক, রাজ্য প্রশাসন প্রস্তুতি সেরে রেখেছে। প্রতিবারের মতো কলকাতা পুলিশের তরফে ইউনিফায়েড কমান্ড সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছে। শনিবার থেকেই তা কাজ শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ, কলকাতা কর্পোরেশন, এনডিআরএফ, দমকল, সিইএসসি এবং কেএমডির প্রতিনিধিদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলার বিশেষ দল। সেই সঙ্গে কলকাতায় গাছ কাটা কিংবা বিপদসঙ্কুল পুরোনো বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের ঝড়ের আগে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়ে গাছ উপড়ে পড়া একটা বড় সমস্যা। তাই এবারে মোগার কথা শুনে বিধাননগর পৌরসভা আগাম নড়বড়ে গাছ কেটে রেখেছে। আমফানের সময় কলকাতায় ভেঙে পড়া গাছ কাটতে ওডিশার দমকল বাহিনীর ডাক পড়েছিল। ঘূর্ণিঝড় স্থিমিত হয়ে যাওয়ার দুইদিন পড়েও রাস্তার গাছ সরাতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিলো কলকাতা কর্পোরেশন। রাজ্য সরকারের তরফে ১০ মে থেকে খোলা হবে কন্ট্রোল রুম। ২০ মে পর্যন্ত ২৪ ঘন্টা কার্যকরী থাকবে ওই কন্ট্রোল রুম। 

(২০২০’তে আমফানে বিধস্ত কলকাতার ছবি দিলীপ সেনের সংগ্রহ থেকে।)

Comments :0

Login to leave a comment