All India Kisan Sabha Conference

কৃষকদের একজোট করেই লড়াতে হবে কৃষকসভার সম্মেলনে সম্মিলিত মঞ্চের আহ্বান

জাতীয়

AIKS মঙ্গলবার ত্রিচূড়ে সারা ভারত কৃষকসভার ৩৫ তম সম্মেলনে বিশেষ অধিবেশনে সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃবৃন্দ। দিলীপ সেনের তোলা ছবি।

রাজধানী দিল্লি ঘিরে সংযুক্ত কিষান মোর্চার আন্দোলনের সাফল্য সারা দেশের কৃষক আন্দোলনে যে নতুন ঢেউ তুলেছে তার হিল্লোল বয়ে গেল আরব সাগরের তীরে কেরালার ত্রিচূড়ে সারা ভারত কৃষকসভার ৩৫তম সর্বভারতীয় সম্মেলনে। চারদিনের সম্মেলনের প্রথমদিনেই সারা ভারত কৃষকসভার সভাপতি অশোক ধাওয়ালে এবং সাধারণ সম্পাদক হান্নান মোল্লা জানিয়ে দিয়েছেন, দিল্লির কৃষক আন্দোলন সারা দেশে উৎসাহ সৃষ্টি করে কৃষকসভার সদস্য সংখ্যা ১৯ লক্ষ বাড়িয়েছে। 

 

দিল্লিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনেই মোদী সরকার পরাস্ত হয়েছিল, এবার পরবর্তী পর্যায়ের আন্দোলন শুরু করতে হবে ঐক্যবদ্ধ পথেই। আগামী ২৪ ডিসেম্বর দিল্লিতে সংযুক্ত কিষান মোর্চার বৈঠক বসবে, সেখানেই ঠিক হবে আন্দোলনের পরিকল্পনা।

 


সারা ভারত কৃষকসভার সম্মেলনে প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য এদিনই হান্নান মোল্লা খসড়া সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করে বলেছেন, সব কৃষকদের সমস্যা এক, শত্রু এক, তাহলে প্রতিরোধের লড়াইতে কৃষকরা একজোট হবেন না কেন? একজোট আন্দোলনের কারণেই মোদী তিন কৃষিবিরোধী আইন নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিলেন। এবার শুধু রাজধানীতে নয়, রাজ্যে রাজ্যে কৃষকদের একজোট করতে হবে।

 


এদিনই সন্ধ্যায় সম্মেলনের একটি বিশেষ অধিবেশনে অংশ নিয়েছেন সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বের পক্ষে বিকেইউ (টিকায়েত) নেতা রাকেশ টিকায়েত, অখিল ভারতীয় কিষাণ সভার নেতা অতুল আঞ্জান এবং অখিল ভারতীয় কিষান মহাসভার নেতা রাজারাম সিং। রাকেশ টিকায়েত সারা ভারত কৃষক সভার সম্মেলনকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, বড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হন, আবার ২৬ জানুয়ারি আসছে। মোদীকে ট্রাক্টরের শক্তি ভুলতে দেওয়া যাবে না।

 


টিকায়েত বলেছেন, আমাদের যার ঝান্ডা যাই হোক, লড়াই যখন কৃষকের জন্য তখন সবাই সংযুক্ত কিষান মোর্চার। তানাশাহী খতম করতে কৃষকদের আন্দোলনের পাশে বহু জ্ঞানীগুণী মানুষ আছেন, নানা ক্ষেত্রের চাকরিজীবীরাও আছেন। খাস লোকেদের জন্য মোদী সরকার থাকলেও আমজনতা আমাদের পাশেই আছে। মোদী কৃষকদের ঐক্য ভাঙার জন্য এক রাজ্যের বিরুদ্ধে অন্য রাজ্যকে, এক ধর্মকে আরেক ধর্মের বিরুদ্ধে, এক ভাষাকে আরেক ভাষার বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিচ্ছে। এই চক্রান্তের থেকে নিজেদের ঐক্যকে রক্ষা করুন। অতুল আঞ্জানেও বলেছেন, হিটলারের রাজনীতিকে পরাস্ত করার জন্য ঐক্য এখন সময়ের দাবি। রাজারাম সিং বলেছেন, কর্পোরেট গ্রাস থেকে কৃষিকে বাঁচাতে হলে রামধনুর মতো নানা ঝান্ডার নিচে হলেও কৃষকদের ঐক্য চাই।

 


সংযুক্ত কিষান মোর্চার নেতৃত্বে দেশের কৃষক আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করতেই সারা ভারত কৃষকসভা তাদের ৩৫তম সম্মেলনের মঞ্চে এদিন এই বিশেষ অধিবেশনের আয়োজন করেছিল। সম্মেলনের শুরুতে সভাপতির ভাষণে অশোক ধাওয়ালে বলেছেন, গোটা দেশের মানুষ ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের পাশে ছিলেন, তাঁদের সবাইকে আমরা সম্মেলন থেকে সেলাম জানাই। এবার গোটা দেশে এই আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে হবে।

 


হান্নান মোল্লা বলেন, সারা ভারত কৃষকসভার ভাবনা খুব স্পষ্ট। মোদী সরকারের কৃষকবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সবাই যদি লড়তে চায় তাহলে আমরা কেন আপত্তি করবো! আমরা সবাইকে নিয়ে লড়েই জয় হাসিল করতে চাইবো। এভাবেই তো ভূমি অধিকার লড়াইতে ৫০টা সংগঠন একজোট হয়েছিল বলে মোদী কৃষক বিরোধী অর্ডিন্যান্স পাশ করাতে পারেনি সংসদে। তারপরে ২৫০ সংগঠন একজোট হয়েছে, এখন সংযুক্ত কিষান মোর্চায় পাঁচশো সংগঠন। ২০২০-২১ সালে রাজধানীতে লড়াইতে যে জয় পাওয়া গেছে এবার রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায় সেই ঐক্যবদ্ধ লড়াই নিয়ে যেতে হবে। দুশমন যখন তাগদশালী হয়ে গেছে তখন সংযুক্ত কিষান মোর্চার মতো একটি ইস্যুভিত্তিক লড়াইয়ের ঐক্যবদ্ধ মঞ্চই আবশ্যিক।


তিনি একথাও বলেছেন, সংযুক্ত কিষান মোর্চার ঐতিহাসিক লড়াই শুধুমাত্র কৃষক খেতমজুরদেরই ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে সহায়ক নয়, শ্রমিক কৃষক ঐক্য গঠনেও সহায়ক। কৃষকরা যখন একজোট হয়ে দিল্লি অভিযান করেছে তখন উজ্জীবিত শ্রমিকরাও সারা দেশে ধর্মঘট করেছেন। সব ট্রেড ইউনিয়ন একসঙ্গে কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
কেরালার ত্রিচূড় শহরের লুলু কনভেনশন সেন্টারে মঙ্গলবার সকালে সারা ভারত কৃষকসভার সর্বভারতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনস্থলের নামকরণ হয়েছে কমরেড কে বরদারাজন নগর। সম্মেলন শুরুর আগে সংগঠনের রক্তপতাকা উত্তোলন করেছেন অশোক ধাওয়ালে। লাল বেলুন, পতাকা লাগানো ফানুস উড়িয়ে, বাজি ফাটিয়ে সম্মেলনের সূচনা হয়। রেড গার্ডদের স্যালুট, বিউগল ব্যান্ড ছাড়াও সূচনা পর্বে সম্মেলন মঞ্চের বাইরেই সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানে ত্রিচূড়ের লোকশিল্পীরাও অংশগ্রহণ করেন স্থানীয় সংস্কৃতি নিয়ে। শহীদ বেদীতে নেতৃবৃন্দের মাল্যদানের পরে সারা দেশ থেকে সমবেত কৃষক আন্দোলনের প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে ভাষণ দেন সম্মেলনের অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি কে রাধাকৃষ্ণণ। শোকপ্রস্তাব ও শহীদ স্মরণে প্রস্তাব পাঠ করেন নন্দকিশোর শুক্লা। সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে ভাষণ দিয়েছেন সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের নেতা এ বিজয়রাঘবন, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী মারিয়াম ধাওয়ালে, ন্যাশনাল প্ল্যাটফর্ম ফর দ্য রাইটস অব ডিসএবেলড-এর নেতা মুরলীধরন প্রমুখ। সম্মেলন পরিচালনা করছে অশোক ধাওয়ালে, কে বালাকৃষ্ণণ, অমরা রাম, মাল্লারেড্ডি এবং এস কে পিজাকে নিয়ে গঠিত সভাপতিমণ্ডলী।

 


সম্মেলনে প্রতিনিধিদের আলোচনার জন্য হান্নান মোল্লা খসড়া প্রতিবেদন পেশ করে কৃষি কীভাবে অলাভজনক হয়ে পড়ছে, কৃষকরা কেন আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন, মোদী সরকার কীভাবে কৃষিক্ষেত্রকে কৃষকদের হাত থেকে কেড়ে কর্পোরেট হাতে তুলে দিতে চাইছে ইত্যাদির উল্লেখ করে বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিকল্পের পথ দেখাচ্ছে কেরালা সরকার। মোদী সরকার এবং অন্য রাজ্যের সরকারগুলিকে এই বিকল্প মানতে বাধ্য করতে কৃষক আন্দোলন হবে না কেন? আমাদের এবারের সম্মেলনের স্লোগানই হলো, সংগ্রাম করো, সংহত হও, বিকল্পের জন্য অগ্রসর হও।

 

 


এদিন সম্মেলন মঞ্চেই পিপলস্‌ আর্কাইভ অব ফার্মারস প্রোটেস্ট নামের একটি ওয়েবসাইটের উদ্বোধন করেছেন হান্নান মোল্লা। ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, দলিল ইত্যাদির প্রদর্শনের জন্য প্রায় দুই বছর সময় ধরে এই ওয়েবসাইটটি তৈরি করা হয়।
 

Comments :0

Login to leave a comment