Mamata Banerjee Birbhum

কেষ্ট-কাজলের নাম না নিলেও মমতা জানালেন ‘আগের মতো সিস্টেমেই সব চলবে’

রাজ্য

Mamata Banerjee Birbhum

সাধের কেষ্টকে পদ থেকে সরানো হিম্মত দেখাতে পারছেন না। কেষ্টকে পদে রেখেই কোর কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার সাফ জানিয়ে দিলেন, যতদিন না গোরু পাচারের কোটি কোটি টাকা খেয়ে জেলে যাওয়া অনুব্রত মণ্ডল জেল থেকে বের হচ্ছেন, ততদিন বীরভূমের সংগঠন দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই!
গত তিনদিন ধরে বীরভূমে পড়ে থাকা মমতা ব্যানার্জির ঘোষণায় পরিষ্কার ইডি,সিবিআই’র তদন্তের চাপে তাঁর দল কতটা বিপর্যস্ত। গত সোমবার জেলায় পা দিয়ে কখনও অমর্ত্য সেনের বাড়িতে যাওয়া, কখনও জেলার নেতাকে নিয়ে বৈঠক আবার এ জেলা থেকেই মালদায় গিয়ে প্রশাসনিক সভা করে ফিরে এসে অবশেষে বুধবার বীরভূমের প্রশাসনিক সভা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে সেই সভা মঞ্চ থেকে জানিয়েছেন,‘‘ইডি-সিবিআই দিয়ে দু-একজন নেতাকে জেলে পাঠানো হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ নিলাম এবার থেকে বীরভূমের সংগঠন নিজে দেখব। আমার সঙ্গে থাকবে ফিরহাদ হাকিম।’’ কিন্তু এদিন অনুব্রত মণ্ডলের নাম নেননি মুখ্যমন্ত্রী।

শুধু তাই নয়, মমতা ব্যানার্জি এও  বলেছেন, ‘‘আগের মতো সিস্টেমেই সব চলবে।’’ ‘আগের মতো সিস্টেম’- এই শব্দবন্ধ উস্কে দিয়েছে জল্পনাই। তাহলে যেভাবে বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসকে দেখেছে এই এগারো বছরে, সেই ধারাই কি অব্যাহত থাকবে? পঞ্চায়েতের পর পঞ্চায়েত গায়ের জোরে দখল। মনোনয়ননে বাঁধা। শেষ মানুষ কবে স্বস্তির ভোট দিয়েছেন ভুলে গিয়েছেন। শহরের ভোটেও তার অন্যথা হয়নি। যার জেরেই বেপরোয়া লুট প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে গোটা রাজ্যের মতো বীরভূমেও। ডিসিআর’র নামে বীরভূমের সমৃদ্ধ পাথর বলয় থেকে ফি দিন কোটি টাকা লুট চলছে কয়েক বছর ধরে। প্যাডের নামে বালি থেকে তোলা আদায়ের রমরমা শিখরে পৌঁছেছে। এর সঙ্গে রয়েছে বীরভূমের জেলার বিস্তীর্ণ রাস্তাকে গোরু পাচারের মসৃণ করিডর করে তোলা। বিনিময়ে চোখ কপালে তোলার মতো কাঁচা টাকার গন্তব্য হয়েছে তৃণমূলের নেতারা। সঙ্গে আছে একশো দিনের কাজ থেকে আবাস যোজনার কাটমানি, চাকরি বিক্রি। আর এই লুটের ব্যবস্থা কায়েম রাখতেই তটস্থ, সন্ত্রস্ত করার রাজনীতি যেকোনও উপায়ে জিইয়ে রাখার কান্ডারিই ছিলেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। এখনও পর্যন্ত সিবিআই তদন্তভার হাতে নিয়ে যা তথ্য-নথি সামনে এনেছে তাতে এটা জলের মতো পরিষ্কার। তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায় ‘আগের সিস্টেমেই দল চলবে’ এই মন্তব্যে স্বভাবতই উঠেছে প্রশ্ন।  সেই ‘সিস্টেম’ নজরদারি করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ৬ মাস অন্তর জেলায় পা দেবেন, স্পষ্ট বলেছেন এদিনের সভামঞ্চ থেকেই। এদিন প্রশাসনিক সভা থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সোজা চলে যান সোনাঝুড়িতে ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের পরিবারের দ্বারা পরিচালিত শিশুদের একটি স্কুলে। সেখানে শিশুদের বই, চকলেট ইত্যাদি দেন। এরপর পাশের গ্রাম সরকারডাঙায় গিয়ে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রী তাঁর স্বভাবমত গ্রামের একটি দোকানে নিজে চা বানিয়ে সামনে থাকা অনেককে খাওয়ান। 

তার আগে প্রশাসনিক সভায় নিজে মুখে দলের বীরভূম জেলায় সাতজনের কোর কমিটি গঠনের কথা নিজে মুখে প্রথমবারে জন্য বলেন। সেই কোর কমিটিতে যারা আছেন তাদের সকলকে পাশে নিয়ে দল চালানো কথা বললেও নাম করেননি কোর কমিটিতে নতুন অন্তর্ভুক্ত কাজল শেখের। কারণ তিনি কেষ্ট বিরোধী বলেই পরিচিত জেলা তৃণমূলে। সেই কাজলকে কোর কমিটিতে নেওয়ায় , জেলে থাকা অনুব্রত টিভি বন্ধ করে দিয়েছিলেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। তাই কি কেষ্টকে সন্তুষ্ট রাখতে কাজলের নাম মুখে নেন নি মমতা ব্যানার্জি ?
প্রশাসনিক সভায় স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর গলায় উঠে আসেন দেউচা-পাঁচামী প্রস্তাবিত কয়লা খনি প্রসঙ্গ। কয়লা খনি নিয়ে তিনি যে কোনোরূপ বিরোধিতা মানবেন না প্রকারান্তরে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমি জোর করে জমি নিইনি। জমির জন্য চাকরি, ক্ষতিপূরণ দিচ্ছি। আমি যা বলি তাই করি। আগামী ২ বছরের মধ্যে এই খনি হয়ে গেলে তা সারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খনি হবে। অনেক সাংবাদিক বাইরে থেকে গিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কুৎসা ছড়াচ্ছেন। শিল্পের স্বার্থে, বেকারদের কর্মসংস্থানের স্বার্থে এটা করবেন না।’’ 

উল্লেখ্য , মমতা ব্যানার্জি যখন গত সোমবার বোলপুরে নেমেছিলেন তখন বেশ কিছু আদিবাসীদের দাঁড় করানো হয়েছিল হেলিপ্যাডে। দেউচা-পাঁচামীর কয়লা খনি স্বপক্ষে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়ানো সেই আদিবাসীদের মধ্যে দেউচা-পাঁচামীর বাসিন্দা কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাঁদের বিন্দুমাত্র যোগ নেই পাঁচামীর।

Comments :0

Login to leave a comment