Youths Protest

আটক সাধারণ নাগরিকরাও! পুলিশে ছয়লাপ, প্রতিবাদে উত্তাল ছাত্র-যুবরা

রাজ্য

বিধাননগর : ২১ অক্টোবর— পুলিশে ছয়লাপ ছিল বিধাননগর। ধরা হয়েছে প্রৌঢ়াকে। আটক করা হয়েছে নাগরিকদের, এমনকি সরকারি কর্মচারীকেও। তবু পুলিশি আতঙ্ক অগ্রাহ্য করে শুক্রবার বিধাননগরে বৃহস্পতিবার রাতের নির্যাতনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বামপন্থী ছাত্র, যুবরা। 
বৃহস্পতিবার মাঝরাতে আন্দোলনকারী চাকরিপ্রার্থীদের টেনে হিঁচড়ে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। শুক্রবার দুপুরে আবার আক্রমণ চালালো পুলিশ। এদিন বৃহস্পতিবার রাতের নৃশংসতার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পুলিশের হামলার শিকার হন এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র নেতা, কর্মীরা। পুলিশ এদিন পথচারী বৃদ্ধ, সরকারি কর্মচারী সহ বেশ কয়েকজন নাগরিককেও আটক করে। 
এদিন মীনাক্ষী মুখার্জি, ময়ূখ বিশ্বাস, প্রতীক-উর রহমান, সায়নদীপ মিত্র, মধুজা সেন রায় সহ প্রায় ২০০ জন বামপন্থী সংগঠনগুলির নেতা, কর্মীকে আটক করা হয়। আটক করা হয় ছাত্র-যুব আন্দোলনের প্রাক্তন নেতা পলাশ দাশকেও।
এদিন এসএফআই, ডিওয়াইএফআই-র পক্ষ থেকে টেট সফলদের উপর আক্রমণ ও নিয়োগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার বিরুদ্ধে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ভয়ঙ্কর দুর্নীতির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার শান্তিপূর্ণ মিছিলে ঘোষণা করা হয়। সল্টলেক করুণাময়ী মোড়ে জমায়েতের আহ্বান জানানো হয়। বিধাননগর পুলিশ কোভিডের পরে থেকেই প্রতিবাদ আন্দোলন বন্ধ করার যে কৌশল নিয়েছে সেভাবেই মিছিল বন্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়। দুপুর বারোটা নির্দিষ্ট সময় থাকলেও তার কিছু আগেই করুণাময়ী মোড় থেকে মধুজা সেন রায়, বুম্বা মৈত্র, সপ্তর্ষি দেব সহ বেশ মিছিলের জন্য আসা কর্মীদের আটক করে নিয়ে চলে যায়। পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ করে দেওয়া হয় এলাকা। সংগঠকরা কৌশল পালটে সিটি সেন্টার অঞ্চল থেকে মিছিল করার পরিকল্পনা করেন। সেখানে প্রস্তুতি শুরু হতেই পুলিশ বাহিনী চলে আসে। 
শুরু হয় নির্বিচারে আটক। বিধাননগর পৌরনিগমের কর্মী তারাপদ নাইয়াকে আটক করার চেষ্টা হয়। আটক করা হয় এইচবি ব্লকের বাসিন্দা মণীশ মুখার্জিকে। পথে চলা, পথে দাঁড়িয়ে কথা বলাও যেন এরাজ্যে বেআইনি। চায়ের দোকান থেকেও আটক করা হয়।


সিটি সেন্টারের সামনে থেকে মূল মিছিল শুরু হতেই ছুটে আসে পুলিশ বাহিনী। একশো মিটার পথ না পেরোতেই পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্র-যুবরা সিটি সেন্টার মোড়ে বসে পড়েন। এরপরেই শুরু হয় পুলিশি আক্রমণ। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদিকা মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘‘কাল গভীর রাত পর্যন্ত টেট আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিলাম। দেখেছি পুলিশ কী নির্মমভাবে ওঁদের তুলে নিয়ে গেছে। আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করতে এসেছি। জানতে চাই বিধাননগরে কতটা জায়গা ১৪৪ ধারা বলবৎ। কালকের মতো আজও মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে। ঘুষ নিয়ে নিয়োগ হবে, যোগ্যরা বঞ্চিত হবে। দুর্নীতির কারণে এরাজ্যে শিক্ষা ব্যাবস্থাও ধ্বংস হয়েছে। প্রতিবাদ করা দুর্নীতি নয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে যত আক্রমণ হোক, সংগ্রাম চলবেই। পুলিশ ভয় পাচ্ছে প্রতিবাদকে, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি পেতেই হবে।’’
দু'পা ধরে টেনে নিয়ে, চ্যাংদোলা করে, টেনে হিঁচড়ে পুলিশের বাস ভরা চলতেই থাকে। একে একে আটক করা হয় ছাত্রনেতা আতিফ নিসার, দেবাঞ্জন দাস, নবনীতা চক্রবর্তী, বাদশা দাশ, যুবনেতা বিকাশ ঝা, কলতান দাশগুপ্ত, পৌলমী মজুমদার, পারমিতা ঘোষ, ধ্রুবজ্যোতি সাহা সহ প্রায় দু'শো জনকে। পথ চলতি প্রবীণ পুরুষ, মহিলা কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। এঁদের আটক করে বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট অন্তর্গত একাধিক থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। অল ইন্ডিয়া ল ইয়ার্স ইউনিয়নের বিধাননগর ইউনিটের সদস্যসহ অনেক আইনজীবী চলে আসেন। তাঁদের সক্রিয়তায় সন্ধ্যার পরে সকলেই বিভিন্ন থানা থেকে মুক্তি পান। বিধাননগর উত্তর থানা সহ বিভিন্ন থানায় নেতা, কর্মীরাও উপস্থিত হন। বিক্ষোভ সভা, স্লোগান চলতেই থাকে। নেতৃত্ব নিউটাউন থানা থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে নিউটাউন থানা থেকে বিশ্ব বাংলা গেট পর্যন্ত মিছিল হয়। 
এদিকে ছাত্র-যুব নেতাদের ওপর পুলিশি আক্রমণের খবর পেয়ে বিধাননগর উত্তর থানায় আসেন সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি সেখানে বলেন, টেট সফল চাকরিপ্রার্থী আন্দোলনকারীদের উপর বর্বর, হিংস্র আক্রমণ করেছে মমতার প্রশাসন। মহিলাদের নিস্তার দেয়নি। একইভাবে ছাত্র-যুব এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা, কর্মীদের শুক্রবার নৃশংস আক্রমণ করা হয়েছে। তিনি উত্তর থানায় ঢুকে গিয়ে বলেন, আমাকেও গ্রেপ্তার করা হোক। হিম্মত থাকলে সবাইকে আটকে রাখুক। দুর্নীতি, মানুষের অধিকার, ন্যায্য পাওনার দাবিতে বামপন্থীরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে লড়াই করে, করবে। পুলিশ দিয়ে কতক্ষণ আটকাতে পারে দেখা যাবে। তিনি নিউটাউন থানায় গিয়ে আটকদের সাথেও দেখা করেন।
এদিন বিধাননগর উত্তর থানা থেকে মুক্তি পেয়ে সিপিআই(এম) নেতা পলাশ দাশ বলেন, সল্টলেকে সর্বত্র ১৪৪ ধারা জারি করা হয়নি। পথচারী থেকে প্রতিবাদীদের ক্ষেত্রে অতি সক্রিয়তা দেখালেও চোর, দুর্নীতিগ্রস্তদের ক্ষেত্রে দেখায় না। চাকরি বিক্রি থেকে নানা লুটের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলবে। সিআইটিইউ নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জি সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। টেট সফলদের উপর পুলিশি অত্যাচারের বিরুদ্ধে দমদম, দক্ষিণ দমদম পৌরাঞ্চলে, রাজারহাট পৌর ও পঞ্চায়েত অঞ্চলে একাধিক মিছিল, রাস্তা অবরোধ হয়। ভিআইপি বাগুইআটি মোড়ে অবরোধ চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে আন্দোনকারীদের বচসাও হয়।

Comments :0

Login to leave a comment